হেলে পড়া স্তম্ভের নীচেই ঝুঁকির পথচলা বি টি রোডে
রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ঝলমলে শহরতলি। এমনটাই স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নটা সত্যিও হয়েছিল। কিন্তু আলোর পথে অন্ধকার খুব দ্রুত নেমে এসেছে। আলো নিভেছিল আগেই, এখন বাতিস্তম্ভ নিয়ে রীতিমতো দিশেহারা প্রশাসন। বিপজ্জনক ভাবে হেলে রয়েছে কয়েকটি স্তম্ভ। যখন-তখন আছড়ে পড়ছে ব্যস্ত রাস্তার উপর। কারও মাথা ফাটছে তো কারও হাত ভাঙছে। তার দায় নিচ্ছে না কেউ।
বেলঘরিয়ার বিবেকানন্দ নগরের শিবু সামন্ত কিংবা নদিয়ার সন্তোষ বিশ্বাসের মতো বেশ কয়েক জন গত কয়েক বছরে গুরুতর জখম হয়েছেন, মারাও গিয়েছেন বি টি রোডে বাতিস্তম্ভ ঘাড়ে পড়ে। ঘটনা ঘটলে চাপান-উতোর চলেছে। তার পর স্বাভাবিক নিয়মে সবকিছু থিতিয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং বারবার বিটি রোড খোঁড়ার ফলে এই স্তম্ভগুলি কমজোরি হয়েছে। ব্যারাকপুর পর্যন্ত মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কথা চলাকালীনই সিইএসসি কর্তৃপক্ষ নিজেদের আলোকস্তম্ভগুলো সরিয়ে নেয়। ফলে সন্ধ্যা নামলেই সেই জায়গাগুলি অন্ধকার। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আলো জ্বলে না। উল্টো দিকের গাড়ির আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনা ঘটে আকছার।
ব্যস্ত রাস্তায় এ ভাবেই হেলে রয়েছে বাতিস্তম্ভ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
বছর ১৪ আগে পর্যন্ত বি টি রোডে আলো জ্বালানোর দায়িত্ব ছিল সিইএসসি-র। তখন বি টি রোড সিঙ্গল লেন ছিল। একশো ওয়াটের টিমটিমে বাল্ব জ্বলত বিভিন্ন মোড়ে ও বাস স্টপে। ২০০০ সালে শহরতলির এই রাজ্য সড়ককে দুই লেনের করার সময় থেকেই ডিভাইডারে বাতিস্তম্ভ বসাতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। সাংসদ ও বিধায়ক তহবিল ছাড়াও পুরসভাগুলিও আংশিক খরচ করে ডানলপ থেকে ব্যারাকপুর তালপুকুর পর্যন্ত ৪০ ফুট উচ্চতার তিনশোটিরও বেশি আলোকস্তম্ভগুলো বসায়। প্রতিটি স্তম্ভে মোট আটশো ওয়াটের দু’টি সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প লাগানো হয়। সিইএসসি তাতে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করলেও এর দেখভাল ও বিদ্যুতের বিল মেটায় সংশ্লিষ্ট পাঁচটি পুরসভা। পরে উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভায় ঘোষপাড়া রোডেও বেশ কিছু এমন বাতিস্তম্ভ বসে। সেগুলিরও কয়েকটি ভেঙে পড়েছে। এমনটা বেশ কয়েক বছর চললেও মাঝরাস্তায় থাকা এই বিশাল স্তম্ভগুলিতে বাল্ব ও হোল্ডার বদলানোর ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা দেখা যায়। অত উচ্চতায় ওঠার মতো আধুনিক যন্ত্র পুরসভাগুলির ছিল না। ছোট-খাটো ঠিকাদারেরাই পুরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের বরাত পান। বহুক্ষেত্রে রাজনৈতিক সম্পর্ক কাজ করে এই বরাত পাওয়ার জন্য। এর ফলে স্তম্ভগুলির ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। সিইএসসি’র দীর্ঘদিনের ঠিকাদার সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিটি রোড এত বার খোঁড়া হয়েছে যে নীচের মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে। পানিহাটি ও কামারহাটিতে একটু বৃষ্টিতেই জল জমে। বাতিস্তম্ভগুলোর গোড়ায় জোড়া অংশে জল জমে জং ধরা। তার উপরে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ের ভার। জোরে হাওয়া দিলে নৌকোর পালের মতো হয়ে যায় বড় হোর্ডিংগুলো। দুর্ঘটনা ঘটছে এ ভাবেই। নিয়ম অনুযায়ী পুরসভাকে মোটা টাকা কর দিয়ে এই হোর্ডিং লাগাতে হয়। রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক হলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।’’ শুধু কি হোর্ডিং? বাতিস্তম্ভগুলোয় কেব্ল ও জেনারেটরের তার বাঁধা থাকে। বিপজ্জনক ভাবে স্তম্ভের একদিকে মই ঠেকিয়ে যে যার মতো কাজ সেরে চলে যায় পুরসভার নাকের ডগায়। কামারহাটিতেই সবথেকে বেশি স্তম্ভ অন্ধকার। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘বিটি রোডে আলো সারানোর বিষয়ে সব পুরসভাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।’’ কামারহাটির পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘হোর্ডিং লাগাতে গিয়েই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। পুরসভা হোর্ডিং লাগানোর অনুমতি দেয়নি। তা থেকে আয়ও হয় না।’’ তা হলে বেআইনি হোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়নি পুরসভা? কামারহাটির পুরপ্রধান লোকাভাবের কথা বললেও ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান উত্তম দাস বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বলেই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় হোর্ডিংগুলোয়। আধুনিক যন্ত্র কিনেছি আমরা। কোনও স্তম্ভ উপড়ে কেউ আহত হলে তার চিকিৎসার দায় আমাদের। আমরা যদি পারি তবে অন্য পুরসভা কেন পারবে না?’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.