সরকারি দুধের মূল্যবৃদ্ধি থেকে সড়ক নির্মাণে প্রয়োজনভিত্তিক জমি অধিগ্রহণে সায়, এমনকী সরকারি দেশি মদে আধুনিক বিপণনের মোড়ক দিতেও তিনি রাজি হয়েছেন। এ বার ‘পরিষেবা উত্তম’ হলে বাসভাড়া বাড়াতেও আপত্তি নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শনিবার তিনি নিজেই তা জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের এক অনুষ্ঠানে। যা শুনে প্রশাসনিক মহল মনে করছে, মুম্বই শিল্প সম্মেলন আয়োজন ইস্তক রাজ্য পরিচালনায় মমতা যে সংস্কারমুখী
 |
শনিবার শিলিগুড়িতে। |
মনোভাব দেখাচ্ছেন, বাসভাড়া প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্যটি সেই ধারাবাহিকতায় নয়া সংযোজন। বেসরকারি বাস-মালিকেরাও মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আশাবাদী ও উৎসাহিত।
সরকারের কাছে বাস-মালিকদের দীর্ঘ দিনের দাবি, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের খরচ যে ভাবে দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে, তাতে বাসভাড়া না-বাড়ালে ভাল পরিষেবা দেওয়া দূর অস্ত্, নিয়মিত রাস্তায় বাস নামানোই কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনীতির নিয়মও বলে, সঠিক মূল্য না-পেলে কোনও কিছুই কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাতে পারে না, তা সে পণ্য হোক, বা পরিষেবা। তাই জ্বালানি-মূল্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া না-বাড়ায় বহু রুটে বিস্তর বেসরকারি বাস বসে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মালিকদের যুক্তি, লোকসান পুইয়ে বাস চালানো তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থনীতির বুনিয়াদি নিয়ম না-মানায় শুধু বেসরকারি নয়, সরকারি পরিবহণও নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। গত এক বছরে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ নিগমে বাসের সংখ্যা কমেছে। পথে বেরিয়ে নিত্য ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ যাত্রীর।
তবু বাসভাড়া বাড়াতে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর যুক্তি ছিল, কোনও অবস্থাতেই বাসভাড়া বাড়িয়ে তিনি আমজনতার ঘাড়ে বাড়তি খরচের বোঝা চাপাতে চান না। ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে বেসরকারি বাসমালিকেরা পুজোর আগে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। বাস-মিনিবাস মালিকদের দু’টি সংগঠন তখন দু’দিনের ধর্মঘটও ডাকে। পরিবহণন্ত্রী মদন মিত্র কালীপুজোর পরে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে ধর্মঘট উঠে যায়। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য শুনে বেসরকারি বাস-মালিকেরা মনে করছেন, দীপাবলির পরে ভাড়াবৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল। কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? শনিবার শিলিগুড়ি তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ডের সম্প্রসারণ-প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মমতা পর্যটন-শিল্পে জড়িত বাস-মালিকদের পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, “পরিষেবা যদি ভাল হয়, মানুষ কিন্তু ভাড়া নিয়ে ভাবে না।” যার সূত্র ধরে মালিকদের একাংশের প্রতিক্রিয়া, “ভাল পরিষেবা দিতে হলে বাস চালিয়ে লাভ করতে হবে। সে জন্যও ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন।”
এবং এই মহলের দাবি, সরকার যে এখন ভাড়াবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে, মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য তারই ইঙ্গিত। “পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। কিন্তু বাস চালিয়ে লাভ না-হলে পরিষেবা দেব কোথা থেকে? আমাদের তো ভর্তুকি নেই!” বেসরকারি বাস-মালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের তরফে রবিবার বলেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রী ব্যাপারটা বুঝেছেন। এখন ভাড়া না-বাড়লে পরিবহণশিল্পের ক্ষতি হয়ে যাবে।” অপর বাস-মালিক সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের একই অভিমত। নেতা দীপক সরকারের বক্তব্য, “যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা পরিষেবা দিচ্ছি। অথচ ভাড়া বাড়ছে না! এ ভাবে যে চলতে পারে না, আশা করি সরকার তা বুঝেছে।”
কিন্তু ভাল পরিষেবা বলতে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
বস্তুত ভাড়াবৃদ্ধির প্রশ্নটা তার উপরে অনেকটা নির্ভর করছে বলে মনে করছেন মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির অবশেষ দাঁ। তিনি বলেন, “পরিষেবার ব্যাকরণটা কী, সেটা বুঝতে হবে। আমরা যা টাকা পাই, তাতে কোনও পরিষেবাই দেওয়া যায় না। তাই কত ভাড়ায় কী কী পরিষেবা দেওয়া যায়, তার একটা মূল্যায়ন হোক। সেই অনুযায়ী সরকার বাসভাড়া ঠিক করুক।”
বাস-মালিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, ডিজেলের বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাসভাড়া বাড়ালে যাত্রীদের বেশ কিছু পরিষেবা দেওয়ার কথা ভাবা যেতেই পারে। তপনবাবু বলেন, “গত মার্চে পরিবহণমন্ত্রীকে ‘ব্লু লাইন’ বাস চালানোর একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী তা বিধানসভায় ঘোষণাও করেন। যাত্রীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধে দেওয়ার কথা ছিল।”
পরে অবশ্য বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তপনবাবু। |