বৃষ্টির কারণে সঙ্কটে রবিচাষ, উদ্বিগ্ন চাষিরা
শ্বিনের ঝড় বাংলার চাষিদের কাছে চেনা হলেও কার্তিকের বৃষ্টি খুব একটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু চলতি বছরে একের পর এক নিম্নচাপের ধাক্কায় ক্রমাগত বৃষ্টির জেরে রবিশস্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষি থেকে কৃষি বিজ্ঞানী সকলেই। সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হওয়া বৃষ্টি অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহে এসেও থামেনি। ফলে একদিকে যেমন পেঁয়াজ, ডাল এবং তৈলবীজের চাষ শুরু করা যায়নি, অন্য দিকে আমন কেটে শীতকালীন সব্জি, বিশেষ করে জলদি জাতের আলু চাষের ভাবনাও বিশ বাঁও জলে।
নদিয়ার মদনপুর জেলার অন্যতম সব্জি উৎপাদক অঞ্চল বলেই পরিচিত। একইভাবে পূর্বস্থলীকে সকলে বর্ধমানের সব্জি ভাণ্ডার বলেই জানেন। দুই এলাকার চাষিরা রবিশস্য নিয়ে রীতিমত আশঙ্কায়। টানা বৃষ্টির জেরে তৈরি করা যায়নি বীজতলা এবং চাষের জমি। সরকারি কৃষি অধিকর্তা থেকে কৃষিবিজ্ঞানী সকলেই মনে করছেন, এ বারের এই অকাল বৃষ্টির কারণে রবিশস্য চাষের সময় সারণী কিছুটা পিছিয়ে গেল। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জি বিজ্ঞানের অধ্যাপক তপনকুমার মাইতি বলেন, “জমি থেকে বীজতলা তৈরি এবং আমন ধান কাটা থেকে রবিশস্য বোনা কোনওটাই এ বার সময় মতো হল না। পিছিয়ে গেল ডাল, তৈলবীজ সহ যাবতীয় শীতকালীন ফসল বোনার কাজও। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে এখনই চাষ শুরু করাও সম্ভব নয়। বৃষ্টি থামার পর কমপক্ষে দশ দিন সময় দিতে হবে মাটি তৈরির জন্য। রবিশস্য-সহ পরবর্তী চাষের শৃঙ্খলাটাই এরপরে নষ্ট হয়ে গেল।”
বৃষ্টিতে নষ্ট ধান।—নিজস্ব চিত্র।
বর্ধমানের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “এই বৃষ্টির ফলে রবিশস্যের উপর গভীর প্রভাব পড়তে চলেছে। পূর্বস্থলী ২ অঞ্চলে এই সময়ের প্রধান ফসল আলু। অন্যান্য বার এই সময়ে জলদি জাতের আলু, ‘পোখরাজ’ বোনা শুরু হয়ে যায়। প্রায় তিনশো হেক্টর জমিতে পোখরাজের চাষ হয়। জলদি আমন ধান কেটে এই আলু বোনা হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে জলদি আমন তৈরিই হয়নি। একটানা বৃষ্টি এবং রোদের অভাবে পুষ্ট হয়নি ধান। কাটা তো অনেক দূরের কথা। ফলে পোখরাজ বসানো যায়নি। পাশাপাশি সময় হয়ে যাচ্ছে জ্যোতি আলু চাষেরও। পূর্বস্থলী ২ এলাকায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জ্যোতি আলু চাষ হয়।”
মদনপুরের সব্জি চাষি সুদেব হালদার বলেন, “আশ্বিন, কার্তিক মাসে একটানা বৃষ্টির ফলে জমির মাটি ভিজে কাদা হয়ে আছে। এই মাটি না শুকোনো পর্যন্ত কোনও কিছুই করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রথমে বৃষ্টি থামতে হবে। তারপর কমপক্ষে একটানা দশ দিন কড়া রোদ থাকতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে পেঁয়াজের বীজ ছড়িয়েছিলাম। বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” চাষিরা জানাচ্ছেন, সাধারণভাবে অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম দিকে সর্ষে, মসুরি, ছোলা, মটর এবং খেসারি চাষ শুরু করার কথা। আশ্বিনের শেষ এবং কার্তিকের প্রথম পেঁয়াজ চাষের সময়। প্রায় একই সময়ে আলুও বোনা হয়। আমন কাটার পর সেই জমিতে বোনা হয় শীতকালীন সব্জিও। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে গিয়েছে সবকিছুই। যদিও এর থেকে রক্ষা পেতে বিকল্প পন্থার কথা বলছেন সরকারি কৃষি আধিকারিকেরা। পার্থ ঘোষের কথায়, “বৃষ্টির হাত থেকে গাছ বাঁচাতে আমারা পরামর্শ দিচ্ছি পলি হাউসের মধ্যে চাষ করার। বাঁশের কাঠামো আর পলিথিনের শিট দিয়ে পলি হাউস তৈরি করা যায়। যার জন্য প্রতি বর্গ মিটারে খরচ পড়ে মাত্র তিনশো টাকা। এই পলি হাউসে বীজতলা এবং কপি জাতীয় শীতকালীন সব্জি খুব সহজে বৃষ্টির হাত এড়িয়ে চাষ করা যায়।” বুধবার এই পলিশেডের বিষয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয় কাটোয়ার একটি লজে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুর আইআইটি-র তিন কৃষি বিশেষজ্ঞ, জেলা কৃষি আধিকারিক ও কাটোয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক। এই আলোচনায় বিশেষজ্ঞেরা জানান, পলিশেড ব্যবস্থায় চাষ করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.