কাছেপিঠে ব্যাঙ্ক নেই, দুর্ভোগ প্রত্যন্ত এলাকায়
মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এখনও ব্যাঙ্ক-পরিষেবা পৌঁছয়নি। টাকা লেনদেনের জন্য তাই দশ, কোথাও বা কুড়ি কিলোমিটার উজিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামীণ মানুষকে ছুটতে হয় ব্যাঙ্কের খোঁজে।
সীমান্তের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি রয়েছে সেই তালিকায় সামনের দিকে। গিরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি গ্রামের একটিতেও ব্যাঙ্ক নেই। সেকেন্দ্রার ১৭টি গ্রামও ব্যাঙ্ক-হীন। তাই রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পদ্মাপাড়ের গ্রামগুলি থেকে ৮০ বছরের শোভা দাস কিংবা মধ্য-সত্তরের চৈতন্য ভাস্করকে আজও বার্ধক্যভাতা নিতে ছুটতে হয় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে জঙ্গিপুরে। ফরাক্কার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বাহাদুরপুর গ্রামপঞ্চায়েতে ২৪টি গ্রাম, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় পঞ্চায়েত এলাকা। ব্যাঙ্ক নেই সেখানেও। একই অবস্থা মহাদেবনগর পঞ্চায়েতেরও। ১০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে মজুরির টাকা আনতে পঞ্চায়েতের সকলকেই ছুটতে হয় ফরাক্কা ব্যারাজ অথবা ধুলিয়ান শহরের ব্যাঙ্কে।
রঘুনাথপুর-১ ব্লকের কানুপুর গ্রামপঞ্চায়েতে ১৭টি গ্রামের বাসিন্দাদেরও একই দুর্দশা ছিল, ২৩ অক্টোবর সেখানে এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার উদ্বোধন হওয়ায় অন্তত ৭টি গ্রামের বাসিন্দারা দূরান্তের ব্যাঙ্কে যাওয়ার দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। সাগরদিঘির ১১টি গ্রাম- পঞ্চায়েতের মধ্যে ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। সেখানাকার ৩০টি গ্রামের বাসিন্দাদের তাই ব্যাঙ্কের পরিষেবা নিতে ছুটতে হয় বালিয়া, মণিগ্রাম অথবা পাটকেলডাঙায়।
মুর্শিদাবাদে ২৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ব্যাঙ্ক পরিষেবা শূন্য এমনই পঞ্চায়েতের সংখ্যা অন্তত ৪০। অথচ মুর্শিদাবাদের এই এলাকা থেকেই ৮ বছর সাংসদ ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কিং প্রশাসনের দায়িত্বেও ছিলেন তিনিই। সাংসদ থাকাকালীন শেষ দু’বছরে তাঁর উদ্যোগে তাঁর কেন্দ্র জঙ্গিপুরের সদরপুর শহরে অন্তত ২০টি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির হিসেব বলছে, রাজ্যে ব্যাঙ্কহীন গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা এই মুহূর্তে ৮৮৯।
সুতি বিধানসভা এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় সমস্ত প্রকল্পেই বর্তমানে আর্থিক লেনদেন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রায় ৪০টি ব্যাঙ্ক উদ্বোধন করেছেন তিনি জঙ্গিপুরে। কিন্তু বেশির ভাগই শহর এলাকা ঘেঁষা বা শহরের মধ্যে। ফলে বহু পঞ্চায়েত এখনও ব্যাঙ্কহীন। তাই সুতির জগতাই-২ ও মহেশাইল-২ পঞ্চায়েত দুটির সরলা, বসন্তপুর, লোকাইপুরের মতো গ্রাম থেকে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পেতে গোটা দিন হয়রান হতে হয় মানুষকে।”
সাগরদিঘির কাবিলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আম্বিয়া খাতুনের বাড়ি মথুরাপুরে। তাঁর কথায়, “ব্যাঙ্কের পরিষেবা পেতে ছাত্র থেকে বৃদ্ধ সকলকেই যেতে হয় ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার। কাবিলপুরের একটি ব্যাঙ্ক খোলার বিজ্ঞাপন বের হয়েছিল দেড় বছর আগে। ঘরও দিতে রাজি ছিলেন অনেকেই। কিন্তু প্রণববাবু সরে যেতেই সে প্রস্তাবও ভেস্তে গিয়েছে।” গিরিয়ার কংগ্রেস প্রধান মেহেরুন্নেসা বিবি বলেন, “কিছু দিন আগে একটি ব্যাঙ্ক মোবাইল পরিষেবা চালু করেছে পাশেই লবনচোঁয়া গ্রামে। সেখানে শুধু অল্প টাকাপয়সা লেনদেন করা ছাড়া কিছু হয় না। ফলে ব্যাঙ্ক থেকে বার্ধক্যভাতার টাকা আনতে তাঁদের বাড়ির লোককে সঙ্গে নিয়ে ১০০ টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে জঙ্গিপুর শহরে যেতে হয় বয়স্কদের।” ১০০ দিনের প্রকল্পে রেকর্ড গড়েছে ফরাক্কা ব্লক। বিডিও সুব্রপত চক্রবর্তী বলেন, “চার মাসে ৪ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা খরচ করে ১ লক্ষ ৩১ হাজার শ্রমদিবস সৃষ্টি করে জেলায় প্রথম স্থানে রয়েছে ফরাক্কা। কিন্তু গ্রামবাসীদের কাজ-কামাই করে ব্যাঙ্ক থেকে মজুরির টাকা তুলতে যেতে হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.