পরপর দু’দিন দুর্যোগের পরে সভায় ভিড় হবে কি না, সংশয়ে ছিল কংগ্রেস। কিন্তু রবিবার ‘অধীর চৌধুরীকে মিথ্যা ষড়যন্ত্রে গ্রেফতারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে’ ও ‘কংগ্রেস কর্মীদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে’ ডাকা সেই সভায় বহরমপুর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ময়দানে উপচে পড়ে ভিড়। গত দু’দিনের মুখ ভার করে থাকা কালো মেঘ সরে গিয়ে এদিন সকাল থেকে আকাশও রোদ ঝলমল করে ওঠে।
ভিড় দেখে দিল্লি থেকে আসা এআইসিসি প্রতিনিধি ও প্রদেশ নেতৃত্বের সামনে এদিনের সভার ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন অধীরবাবুও। অধীরবাবু বলেন, “জনতার আদালতে আমার জামিন হয়ে গিয়েছে।”
এ দিন সভার মঞ্চকে ঘিরে চার দিকে শুধু মানুষের মিছিলের ঢল নামে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের হাতে মাঠ জুড়ে তখন উড়ছে কংগ্রেসের পতাকা। পাঁচিল দেওয়া মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে রেলপ্রতিমন্ত্রী অধীরবাবুর গোটা আটেক কাট-আউট। মানুষের ভিড়ে ঢাকা পড়েছে ওই বিশাল আকারের কাট-আউটগুলিও। |
জেলা গোয়েন্দা দফতরের অনুমান, মাঠে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার তথা মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) অভ্র রবীন্দ্রনাথ অবশ্য বলেন, “এদিন মাঠে ৩০-৩২ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছে।” কংগ্রেসের দাবি, লক্ষাধিক মানুষ এদিনের সভায় হাজির হন। জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের কথায়, “এদিন মাঠে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়েছিল। ভিড়ের কারণে মাঠে ঢুকতে পারেননি, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়।”
জেলা কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, জেলার ২৬টি ব্লক থেকে প্রায় চারশো বাস ভাড়া করে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা এ দিনের সভায় হাজির হন। লরি-ছোট গাড়ি-ট্রেকারের সংখ্যা মিলিয়ে আরও আড়াইশো। ওই ভিড় সামাল দিতে বহরমপুর থানা ও জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। এতে যানজট যেমন এড়ানো সম্ভব হয়েছে, তেমনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কংগ্রেসকর্মীদের মিছিল মাঠে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধার মুখে পড়তে হয়নি। |
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) বলেন, “জেলার দূর-দুরান্ত থেকে আসা বেশ কিছু বাস-লরি শহরের বাইরে এবং বহরমপুর স্টেডিয়ামে রাখার বন্দোবস্ত হয়। সেই সঙ্গে যানজট এড়াতে শহরের মধ্যে কোনও যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী কোনও কোনও জায়গায় মোটরবাইকও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”
বহরমপুরের শহরের মধ্যে যেমন বহরমপুর গার্লস কলেজ মোড় থেকে লালদিঘি যান চলাচল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ওই পথে মিছিল করে হেঁটে যাতায়াতের অনুমোদন ছিল। একই ভাবে রানিবাগান মোড় থেকে সমবায়িকা যাওয়ার পথে, বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সমবায়িকার দিকে এবং টেক্সটাইল কলেজ মোড় থেকে সমবায়িকা অভিমুখে সমস্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়। ওই রাস্তাগুলি দিয়ে সভায় যাওয়া মানুষের মিছিলের ছাড় ছিল।
জেলা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, লালবাগ মহকুমা এলাকার সমস্ত যানবাহন ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া দশমুণ্ডু কালীবাড়ির মাঠে, বেলডাঙা-নওদা-হরিহরপাড়া ও ডোমকল-জলঙ্গি এলাকার যানবাহনগুলিকে বহরমপুর স্টেডিয়াম ময়দানে, কান্দি-জঙ্গিপুর মহকুমার যানবাহনগুলি ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে উত্তরপাড়া মোড়ের দিকে রাখার বন্দোবস্ত করে প্রশাসন। পরে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে মিছিল করে সভাস্থলে পৌঁছন। |