উপলক্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে হেনস্থার প্রতিবাদ। লক্ষ্য লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসাবে বহরমপুর পুর-দুর্গ রক্ষা। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে দলের শক্ত ঘাঁটি মুর্শিদাবাদের মাটি থেকেই লোকসভা ভোটের আগে আন্দোলনের বার্তা ঘোষণা করল কংগ্রেস।
যে বার্তার মুখবন্ধ বাঁধা হল স্বয়ং অধীরকে দিয়েই। বহরমপুরের এফইউসি মাঠে রবিবার দলের প্রদেশ ও সর্বভারতীয় নেতাদের উপস্থিতিতে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর বললেন, “মুর্শিদাবাদে জয়ের মধ্য দিয়েই পশ্চিমবঙ্গে আমাদের দলের জয় (লোকসভা ভোটে) সুনিশ্চিত হবে!” |
ভাঙনে বিপর্যস্ত কংগ্রেসের কাছে লড়াই দেওয়ার জন্য এখন হাতে রয়েছে বলতে গেলে মুর্শিদাবাদই। সেই জেলারই বহরমপুরে পুরভোট আগামী ২২ নভেম্বর। প্রায় দু’দশক ধরে বিরোধীশূন্য বহরমপুর পুরসভা কংগ্রেসেরই দখলে। কিন্তু এ বার পুরভোটের প্রাক্কালে অধীরের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন খুনের মামলা করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে জেলাশাসকের বাংলো ভাঙচুরের অভিযোগও করা হয়েছে। অধীর আদালত থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেলেও তাঁকে কোণঠাসা করতে তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসন সক্রিয় বলে কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ। অধীরকে ‘মিথ্যা ষড়যন্ত্রে গ্রেফতারের চক্রান্তে’র বিরুদ্ধেই এ দিন বহরমপুরে প্রতিবাদ সভা ডেকেছিল কংগ্রেস। সেই সভা থেকেই অধীর তৃণমূলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন, “মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় ও তাঁর চামচাদের জানিয়ে দিই, পুলিশ আর মস্তান দিয়ে পুরসভা দখল করতে দেব না! মাথা গুঁড়িয়ে দেব! লড়াই ছাড়া এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না!” নাম না-করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কেও কটাক্ষ করেছেন অধীর। বিষয়টিকে কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ মুকুল অবশ্য বলেছেন, “কে কী বলল, তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। আগে বলতাম, এ রাজ্যে কংগ্রেসকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে খুঁজতে হয়! এখন তাতেও দেখা যায় না!”
বস্তুত, অধীরের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের জোড়া অভিযোগ কংগ্রেসকে রাজ্য জুড়েই আন্দোলনের পথে নামার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি ও আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী থেকে শুরু করে বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, মনোজ চক্রবর্তীরা পথে নেমে আন্দোলনের দাবিই বার বার তুলেছেন এ দিনের সভায়। তাঁদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, “তৃণমূল সরকারের জনবিরোধী নীতি এবং অধীর-সহ কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর বিরুদ্ধে আগামী ১৮ থেকে ৩০ নভেম্বর জেলায় জেলায় আমাদের জেল ভরো আন্দোলন হবে।”
কংগ্রেসকে চাঙ্গা করতে আন্দোলনই যে একমাত্র টনিক, মানসবাবুরা প্রায়ই বলেন। রাজ্যে কংগ্রেসের হাল ফেরাতে তাঁরা যে কতটা মরিয়া, তা এ দিন প্রদীপবাবুর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে। তিনি বলেছেন, “যে কোনও জেলা তাৎক্ষণিক কোনও বিষয়ে (অন্যায়, অবিচার) সর্বাত্মক আন্দোলনে যেতে পারে।” অধীরের পরামশ কেবল পুলিশ-প্রশাসনের হেনস্থার বিরুদ্ধেই নয়, রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করার দাবিতে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামতে হবে। প্রয়োজনে নবান্ন অভিযান করতে হবে। দীপা বলেন, “চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে ওড়িশা, ঝড়খণ্ড সরকার যদি সিবিআই তদন্ত করাতে পারে, এখানে কেন হবে না? সব জায়গায় তৃণমূল রাজ চলবে, আর আমরা জাতীয় কংগ্রেস চুপ করে বসে থাকব?” দলের অপর সাংসদ মৌসম বেনজির নূরও অভিযোগ করেন, “দলের নেতা-মন্ত্রীরা ফেঁসে যাবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সিবিআই তদন্ত করাতে রাজি নয়!”
সভায় উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সম্পাদক শাকিল আহমেদ খান ও সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী শোভা ওঝাও সাফ বলেছেন, রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে দিল্লির পূর্ণ সমর্থন থাকবে। তৃণমূল নেতাদের পরামর্শে পুলিশ-প্রশাসনের যে কর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন, তাঁদের ভবিষ্যতে কঠোর শাস্তি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও। এই ব্যাপারে নতুন বিল তৈরি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কংগ্রেসের সভায় ভিড় হয়েছিল ব্যাপক। মুর্শিদাবাদের নানা প্রান্ত তো বটেই, পাশের জেলা নদিয়া, বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা থেকেও কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা এসেছিলেন। ভিড়ের বহর দেখে নেতারা উচ্ছ্বসিত। ডালুবাবু বলেন, “তৃণমূলের নেতারা প্রায়ই বলেন, এ রাজ্যে কংগ্রেস মরে গিয়েছে। কংগ্রেস যে বেঁচে আছে, হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি তা বুঝিয়ে দিচ্ছে!” ওই ধরনের সমাবেশ জেলায় জেলায় করা দরকার বলে মন্তব্য করেন মানসবাবু। শুধু ভিড়ই নয়, মঞ্চে প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেই মান্নান হোসেন, শঙ্কর সিংহ-অজয় দে, কলকাতার প্রদীপ ঘোষ-মালা রায় প্রমুখের উপস্থিতিতে বহু দিন বাদে ঐক্যবদ্ধ দলের ছবি দেখে উদ্বুদ্ধ কংগ্রেস কর্মীরাও। |