|
|
|
|
পুরভোটের লড়াই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে |
স্লোগানে-ছবিতে জমে উঠছে ‘ই-প্রচার’
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
দোরগোড়ায় পুরভোট। অথচ দুর্যোগে ব্যাহত হচ্ছে প্রচার। দেওয়াল লিখন জলে ধুয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারও তেমন জমছে না। এই অবস্থায় মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রামের মতো মফস্সল শহরেও জমে উঠছে ‘ই-প্রচার’। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র-যুবরাই এতে মজেছেন। তাঁরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে দুর্নীতিমুক্ত এবং স্থায়ী পুরবোর্ড গড়তে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার আবেদন জানাচ্ছেন।
একের পর এক মন্তব্য ভেসে উঠছে সাইটে। সঙ্গে কবিতা-গানের লাইন। কোনও ছবিতে লেখা, ‘কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট’। কোনও ছবিতে লেখা, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ।’ কোথাও স্লোগান, ‘চলো পাল্টাই। আমাদের সকলের প্রিয় মেদিনীপুর শহরের উন্নয়নের স্বার্থে বামফ্রন্টকে জয়ী করি।’ ফ্রন্টের সমর্থনে ইতিমধ্যে একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘পেজ’ খোলা হয়েছে। নাম, ‘মেদিনীপুর লালে লাল’। সেখানে ফ্রন্ট প্রার্থীদের মিছিলের ছবি, দেওয়াল লিখনের ছবি আপলোড করা হচ্ছে। এসএফআই নেতা সুব্রত চক্রবর্তী নিজের প্রোফাইলে একটি দেওয়াল লিখনের ছবি আপলোড করেছেন। যেখানে লেখা, ‘২৩ নম্বর ওয়ার্ডে গরিবের বন্ধু কীর্তি দে বক্সীকে বোতাম টিপে ভোট দিন।’ এই ছবি শেয়ার করেছেন আরও ৫ জনকে। ১১ জন ছবিটি ‘লাইক’ করেছেন। সুব্রতর কথায়, “সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের জনপ্রিয়তা দিনের পর দিন বাড়ছে। আমার বন্ধুদেরও প্রায় সকলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। প্রত্যেকেই প্রতিদিন কিছু ছবি শেয়ার করি। এখন তো স্কুলছাত্রদের অনেকেও ফেসবুক করে।” |
|
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে শাসক-বিরোধীর প্রচার। ছবি ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত। |
পিছিয়ে নেই কংগ্রেস। ছাত্র পরিষদের নেতা মহম্মদ সইফুল বলেন, “আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। এর মাধ্যমে খুব সহজেই সকলের কাছে বার্তা পৌঁছনো যায়। আমার বন্ধুদের প্রায় সকলেরই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই সাইটও তো প্রচারের একটা মাধ্যম।” রবিবার সকালে নিজের সাইটে একটি ছবি ‘আপলোড’ করেছেন সইফুল। ছবিটি শেয়ার করেন ৪৩ জনকে। সঙ্গে লেখা, ‘১২ নম্বর ওয়ার্ডে থমকে যাওয়া উন্নয়নের চাকা ঘোরাতে আপনার ঘরের ছেলে পিন্টু মুখীকে জয়ী করুণ। ভোট ফর কংগ্রেস।’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বুদ্ধ মণ্ডল বলছিলেন, “সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। অনেক খবরই সাইট থেকে জানতে পারি। আমিও পুরভোট নিয়ে কিছু ছবি আপলোড করছি, শেয়ার করছি।” বুদ্ধর মা শিপ্রা মণ্ডল বিদায়ী কাউন্সিলর। এ বারও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী তিনি।
শুধু মেদিনীপুর নয়, ঝাড়গ্রামেও পুরভোটের প্রচার চলছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। এক সময় এসএফআইয়ের সক্রিয় কর্মী শুভজিৎ মাহাতো দু’দিন আগে একটি ছবি আপলোড করেছেন। সেখানে লেখা, ‘১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সৌমেন মাহাতোকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করুন। ভোট ফর সিপিএম ওনলি।’ ছবিটি শেয়ার করেছেন আরও ৮০ জনকে। ইতিমধ্যে ৩২ জন ছবিটি ‘লাইক’ করেছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন সৌগত পণ্ডা, নরসিংহ দাস, অরিজিৎ বসু। সৌগত এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক। নরসিংহ এক সময় এসএফআইয়ের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। নরসিংহের মতে, “ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট আমাদের বয়সীদের কাছে খুব জনপ্রিয়। বন্ধুদের প্রায় সকলেরই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই সাইটও তাই প্রচারের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।”
আগামী ২২ নভেম্বর একই সঙ্গে মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে পুরসভা নির্বাচন। মেদিনীপুর পুরবোর্ড এত দিন ছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের দখলে। আর ঝাড়গ্রামে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। এ বার দু’টি পুরসভা একক ভাবে দখল করতে তৎপর তৃণমূল। হাল ছাড়ছে না বিরোধী-শিবিরও। পুরভোটকে ঘিরে ইতিমধ্যে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার দুই শহরের নেতাদের নিয়ে পৃথক বৈঠকও করেছেন। দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে। পুরভোটের মনোনয়ন-পর্বও শুরু হয়েছে। কিন্তু, প্রচারে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে টানা বৃষ্টি। মেদিনীপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “পুজোর সময় বৃষ্টি হল। ফের বৃষ্টি। এ ভাবে টানা বৃষ্টি চলতে থাকলে তো সমস্যা। বাড়ি বাড়ি প্রচার করা যাবে না।” এই পরিস্থিতিতে কদর বাড়ছে ই-প্রচারের। |
|
|
|
|
|