পাঁশকুড়ায় ফের বাঁধ ভাঙল, পশ্চিমে মৃত্যু আরও দু’জনের
জমা জলে নাভিশ্বাস দুই মেদিনীপুরেই
কার্তিকেও মুখভার আকাশের। রবিবার দুই মেদিনীপুরে বৃষ্টি না হলেও জনজীবন বিপর্যস্তই রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে কাঁসাইয়ের একই বাঁধ তিন-তিনবার ভাঙায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ, উদ্বেগ শেষ অঙ্ক ছুঁয়েছে। দাসপুরের বালিপোতাতেও বাঁধ ভেঙে নতুন করে জল ঢুকেছে এলাকায়। দুর্যোগের জেরে পশ্চিমে নতুন করে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। উঠছে অপ্রতুল ত্রাণের অভিযোগও।
২৪ অগস্ট, ১৫ অক্টোবরের পর রবিবার, ২৭ অক্টোবর। এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ দু’মাসের ব্যবধানে তৃতীয় বার ভাঙল পাঁশকুড়ায় কাঁসাইয়ের বাঁধ। এর জেরে ফের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পাঁশকুড়া, তমলুক, নন্দকুমার ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায়। পশ্চিম মেদিনীপুরেও বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন করে ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে মেডিক্যাল টিমের সংখ্যা। ত্রাণ বিলির কাজও চলছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।” দুর্যোগের মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে।
ফের কাঁসাইয়ের বাঁধ ভাঙায় আশ্রয় তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কের ধারে
(বাঁ দিকে)। জলমগ্ন দাসপুরের বালিপোতা গ্রাম (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে দেওয়াল চাপা পড়ে জখম হয়েছিলেন গড়বেতা ১ ব্লকের শ্রীপদ কর্মকার (৬৪)। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। রবিবার তিনি মারা গিয়েছেন। গড়বেতা ৩ ব্লকে জলের তোড়ে ভেসে মৃত্যু হয়েছে সিকন্দর মণ্ডলের (৬০)। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই নিয়ে অক্টোবরের দু’দফার বন্যায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সবমিলিয়ে ১৬টি ব্লক কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুর সদর, কেশপুর, শালবনি, গড়বেতা- ১, ২ এবং ৩, দাসপুর- ১, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা- ২, সাঁকরাইল, গোপীবল্লভপুর- ১ এবং ২, দাঁতন- ১, ডেবরা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর- ২। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের সংখ্যা ৩২৩টি। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা ৮৭৫৬০ জন। জেলায় সব থেকে খারাপ অবস্থা যথারীতি বন্যাপ্রবণ ঘাটালের। গত দুর্যোগ সামলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছিল এই মহকুমা। নাগাড়ে বৃষ্টি সঙ্গে কংসাবতী জলাধার থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ায় শনিবার ফের পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মহকুমায় এই মরসুমে পঞ্চমবার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চন্দ্রকোনার মনসাতলা চাতালে ফের জল উঠে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল। রবিবার শহরের দু’নম্বর চাতালে হাঁটু সমান জল জমে যাওয়ায় দুপুর থেকে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক এবং ঝলকার চাতালে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল।
কেশপুরের কইগেড়াতে জলমগ্ন ধান জমি। —নিজস্ব চিত্র।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বর্তমানে ঘাটাল ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের ৭০টি, চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ১০টি, দাসপুর ১-এর রাজনগর ও নাড়াজোল পঞ্চায়েতের প্রায় ২০টি গ্রাম জলমগ্ন রয়েছে। ঘাটাল পুরসভার ১২টি ওয়ার্ড জলের তলায়। জলমগ্ন গ্রামের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে খবর। সম্প্রতি দাসপুরের বালিপোতায় কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙেছিল। তা মেরামতি শুরুর আগেই নদীতে জল বাড়ায় ভাঙা বাঁধ দিয়ে শনিবার রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করেছে।
এর মধ্যেই উঠছে পর্যাপ্ত ত্রাণ, নৌকা নিয়ে অভিযোগ। তবে, প্রশাসনের দাবি পর্যাপ্ত নৌকা রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমে ত্রাণ, নৌকার কোনও সমস্যা নেই বলা হলেও, বিষয়টি আদতে তা নয়। বালিপোতার এক বাসিন্দা বলেন, “শনিবার রাত থেকে গ্রামে জল ঢুকছে। অথচ, না আছে ত্রাণ, না আছে নৌকা। বড় কষ্টে দিন কাটছে।” একই অভিজ্ঞতা জলমগ্ন মহকুমার হাজার হাজার বাসিন্দার। ঘাটালের মনতোষ সরকারে কথায়, “প্রশাসন কিছু শুকনো খাবার, ত্রিপল, বড়জোর দু’একটি ত্রাণ শিবির খুলেই দায় সারে। কিন্তু অন্ধকার রাতে পানীয় জল, জ্বালানি, খাবার-সহ নানাবিধ অভাব নিয়ে সপরিবার এক চিলতে জায়গায় বসে মানসিক অবস্থা যে কী হয়, তা কেবল ভুক্তভোগীই বোঝে!”
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।
কেশপুরে রবিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মেদিনীপুর শহরের পালবাড়িতে কংসাবতীর
গর্ভে চলে গিয়েছে ৫০ ফুট। ছবি: কিংশুক আইচ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ঘাটা লের শিলাবতী, ঝুমি, কংসাবতী-সহ সব নদী চরম বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। একাধিক নদীবাঁধ বালির বস্তা দিয়ে উঁচু করছে সেচ দফতর। তবে মহকুমাশাসক অদীপ রায় জানিয়েছেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
অন্য দিকে, টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়েছে কাঁথি মহকুমার জনজীবন। বেশ কয়েক হাজার কাঁচা-পাকাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও কিছু এলাকা নতুন করে জলমগ্ন হয়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা কাঁথি ৩ ব্লকের। প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ব্লকের কানাইদিঘি অঞ্চলের বেনাজি, গঙ্গাধরচক-সহ বেশ কয়েক’টি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। প্রায় দেড়শো পরিবারকে ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে বলে কাঁথি ৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বেজ জানিয়েছেন।
মহকুমার কাঁথি ১, দেশপ্রাণ, রামনগর ১, ২ এবং খেজুরি ১, ২ ব্লকগুলির নিচু এলাকাও জলমগ্ন হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সব্জি, ধান ও মাছ চাষের। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী না থাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণের ব্যবস্থা করতে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির নাভিশ্বাস উঠছে। পাঞ্চেত জলাধার থেকে নতুন করে জল ছাড়ায় রামনগর ১ ব্লকের বাধিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের মধ্যে ফের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে
চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
ইতিমধ্যেই সুবর্ণরেখা নদীর উপচে বাধিয়ার ৬টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি। রামনগর ১ ব্লকে প্রায় এক হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বিডিও তমোজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন।
এ দিকে, টানা বৃষ্টিতে কয়েক হাজার কাঁচা বাড়ি ধসে পড়েছে কেশিয়াড়িতে। জলমগ্ন এলাকায় ব্লক প্রশাসনের তরফে এগারো’শো ত্রিপল বিলি হয়েছে। শনিবার তিনটি ত্রাণ শিবির খোলা হয় কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত এলাকায়। গোপালপুর, আনার ও তেঁতুলিয়ায় প্রায় ১৭৫টি বাড়ি ভেঙেছে বলে ব্লক প্রশাসনের তরফে খবর। তবে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় রজনীকান্ত প্রাইমারি, গোপালপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ও আনার মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের ত্রাণ শিবির রবিবার বন্ধ হয়েছে। বিডিও অসীমকুমার নিয়োগী জানান, নতুন করে ৩-৪ হাজার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ ও ত্রিপল বিলি চলছে। তবে গত নিম্নচাপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতন ব্লকে রবিবার পর্যন্ত তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে খবর।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.