রবিবাসরীয় বিকেলের পর যদি ভারতবর্ষকে তার বর্তমান ‘খলনায়ক’ বাছতে বলা হয়, তাঁর নামটা নির্ঘাত সর্বপ্রথম উঠে আসবে। সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের অবসরের প্রাক্-লগ্নকে ঘিরে যখন আসমুদ্রহিমাচল ঘোরে আছন্ন, যখন হরিয়ানার বিরুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকরের শেষ রঞ্জি ট্রফি ম্যাচের প্রত্যক্ষ সাক্ষী থাকার জন্য রবিবার টিভি রিমোট নিয়ে বসে পড়েছে কলকাতা থেকে কাশ্মীর, ঠিক ওই সময়ে এক মারণ-ডেলিভারিতে দেশবাসীর যাবতীয় স্বপ্নভঙ্গ ঘটিয়ে ছেড়েছেন তিনি।
মোহিত শর্মা জানেন, তিনি দেশকে আজ দুঃখ দিয়েছেন। মোহিত শর্মা জানেন, এই মুহূর্তে লিটল মাস্টারের অগুনতি সমর্থককুলের কাছে এক নম্বর ‘টার্গেট’। কিন্তু চেন্নাই সুপার কিংস পেসারের তাতে বিশেষ দুঃখ নেই। বরং তিনি তৃপ্ত, সচিনকে আউট করে প্রবল তৃপ্ত! |
সন্ধের লাহলিতে সর্বভারতীয় প্রচারমাধ্যম যে ভাবে জাঠ পেসারের দিকে একের পর এক সচিন নিয়ে কড়া প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিচ্ছিল, বোঝার উপায় ছিল না তাঁরা মিডিয়া-প্রতিনিধি, নাকি সচিনে মোহাবিষ্ট তাঁর সমর্থককুলের একটা অংশ! ‘সচিনকে আউট করে আপনার খারাপ লাগল না?’, ‘এক মিনিটের জন্যও মনে হয়েছে ডেলিভারিটা নো বল হলে বেশ হত?’ মিনিট দশেকের কথাবার্তায় এমন প্রশ্ন উড়ে গিয়েছে অন্তত মিনিটে একটা। এবং পাল্টা জবাবও নিজের বোলিংয়ের মতো গরগরে মেজাজে দিয়ে গেলেন মোহিত।
“খারাপ লাগতে যাবে কেন? আমি জীবনে ক’বার সচিন পাজিকে আউট করার সুযোগ পাব?” কথাগুলো যখন বলছিলেন মোহিত, কোথাও যেন একটা বিরক্তির রেশও পাওয়া গেল। যা স্বাভাবিক। কেউ তো আজ তাঁর কৃতিত্ব নিয়ে চিন্তিত নয়, সবাই দেখছে সচিন-ঘাতক হিসেবে। “জীবনে সব বোলারই চায় সচিনের বিরুদ্ধে বল করতে। ওর উইকেট নিতে। আর আমি উইকেটটা নিয়ে খুশি। বেশ খুশি,” বলে তাঁর পরবর্তী সংযোজন, “ডেলিভারিটাকে নো বল ডাকলে খুশি হতাম কি না জিজ্ঞেস করছেন তো? তা হলে বলব, এক সেকেন্ডের জন্যও সেটা মনে হয়নি।” |
উল্টে মোহিত পরিষ্কার করে গেলেন, লিটল মাস্টারের জন্য তাঁর প্ল্যানটা ঠিক কী ছিল। সচিন ব্যাট করতে নামার পরপরই নাকি হরিয়ানা অধিনায়ক অজয় জাডেজা তাঁকে বলে দেন যে, উল্টো দিকে কে আছে, তাঁকে ঘিরে কতটা আবেগ চলছে চার দিকে, সে সব নিয়ে না ভেবে উইকেট টু উইকেট রেখে যেতে। গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারতীয় দলে ডাক পাওয়া পেসার বলেও দিলেন, “সচিন নামতেই ঠিক করেছিলাম, বলটাকে ভিতরে আনতে হবে। ঠিক তেমনই চাইছিলাম সিমে হিট করাতে। কারণ লাহলির উইকেটে একবার সিম হিট করালে বল লাফাবেই। প্ল্যানটা খেটে গেল।” একটু থেমে আবার বললেন, “আমি সব সময় চাই ব্যাটসম্যানকে খেলাতে। বাইরে বাইরে বল করলে তো আর উইকেট আসবে না। সচিনের ক্ষেত্রেও একই জিনিস করতে হবে। ওকে খেলাতে না পারলে সচিন তেন্ডুলকরের উইকেট পাওয়া অসম্ভব।”
শুধু আফসোস একটাই। ওই ‘অসম্ভব’ কাজই সম্ভব হল বড় ভুল দিনে। |