নিজের গাড়ি ‘হাংরি হেইদি’র সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে মাথা নামিয়ে শ্রদ্ধায় চুমু খেলেন মাটিতে। একই সঙ্গে ভারতের মাটিকেও কি উজাড় করে দিলেন নিজের সব আবেগ?
ফর্মুলা ওয়ানের কনিষ্ঠতম কিংবদন্তি সেবাস্তিয়ান ভেটেল রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় যখন বলছেন, “হতে পারে রেকর্ডটা ভারতের মতো এমন একটা দেশে করতে পারলাম বলেই এটা আমার কাছে আরও দামি হয়ে থাকবে,” তাঁর স্বরের আন্তরিকতা বলে দিল, এই প্রেমটা ক্ষণিকের আবেগ নয়। বরং এ দেশকে আরও কাছ থেকে দেখতে আর চিনতে ফিরে আসবেন, জোর দিয়ে বললেন বুদ্ধ সার্কিটের বাদশা। “এই দেশটার থেকে কত শেখার আছে ভাবলে অবাক লাগে! আমরা প্রচুর পেয়েও ছোট ছোট ব্যাপারে অভিযোগ করি। অথচ এখানে মানুষ কঠিন জীবনযুদ্ধের মাঝেও আনন্দে থাকতে জানে। এটা আমার কাছে একটা বিরাট শেখার ব্যাপার।” কবে আসতে চান, জানার পীড়াপীড়িতে হেসে যোগ করলেন, “আশা করি অবসরের পরেও ইয়াং থাকব। তখন লম্বা সফরে ভারতে আসতে চাই।”
বুদ্ধিদীপ্ত কথা এবং রসবোধ মিশিয়ে পরিবেশন করতে পারাটা ভেটেলের নিজস্ব ইউএসপি। অথচ সেই ভেটেল এ দিন ফিনিশ লাইন পার করার পর খানিকক্ষণ ভাষা হারিয়ে ফেলেন! পোডিয়ামে ট্রফি নিতে উঠে বললেন, “ফিনিশ লাইন পার করে আমার ভেতরটা কী রকম খালি হয়ে গিয়েছিল।” এর পর হাতে ধরা পেল্লাই শ্যাম্পেনের বোতলটায় কয়েক চুমুক দিয়ে যেন একটু থিতু হলেন। তার পরে বললেন, “খুয়ান ফানজিও, মাইকেল শুমাখার, অ্যালান প্রস্তের মতো সর্বকালের অন্যতম সেরাদের পাশে আমার নামটা বসার মানে ঠিক কী, সম্ভবত সেটা ঠিকঠাক বুঝতে পারার বয়সে এখনও পৌঁছোইনি। হতে পারে ষাট বছরে গিয়ে এর আসল গুরুত্বটা বুঝব, যখন বাকি আর কেউ এটা নিয়ে মাথাই ঘামাবে না।” |
পোডিয়াম থেকে নেমে হেঁটে সাংবাদিক বৈঠকে আসার সময়টুকুর মধ্যে নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিলেও প্রথম প্রতিক্রিয়াটা এল, “জানি না কী বলব। বোঝার চেষ্টা করছি। তবে অবশ্যই আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত।”
যে মুহূর্তটা এ দিন সবার আগে ভাগ করে নেন পরিবারের সঙ্গে। পোডিয়াম থেকেই মোবাইলে বাবা-মা আর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে নামলেন। “আমাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিতে আমার পরিবার অনেক ত্যাগ করেছে।”
আর অবশ্যই তাঁর টিমের। টানা চার বারের বিশ্বসেরা বললেন, “আমি গাড়িটা চালাই বলে সবাই আমাকে মনে রাখে। কিন্তু যদি একা সব কৃতিত্ব নিই, সেটা চরম স্বার্থপরের কাজ হবে।”
আসলে গাড়ির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা আত্মার। বলছিলেন, “ভাবুন তো। একটা গাড়ি কত ছোট্ট একটা সরঞ্জাম। কিন্তু ট্র্যাকে সেটাই কী অসাধারণ গতিতে ছোটে!” শনিবার রাত ন’টা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে পড়ে ছিলেন বুদ্ধ সার্কিটে। বাকি চালকেরা বেরিয়ে যাওয়ার বহু পর পর্যন্ত। বলছিলেন, “প্যাডকে থাকতে আমার ভাল লাগে। অনেকে কাজের পরেই সার্কিট ছেড়ে পালাতে চান। বলেন সার্কাস। আমার কাছে সার্কিটটা কিন্তু কোনও জেলখানা নয়।”
এই একশো ভাগ একাত্মতাটাই বুদ্ধ সার্কিটে সেবাস্তিয়ান ভেটেলকে করে দিয়ে গেল ফর্মুলা ওয়ানের আসল ডিএনএ! |