অধরা রাইখরদের দেখা মিলছে। নদীর উজান ঠেলে বাংলাদেশ থেকে বালুরঘাটের আত্রেয়ীতে আসতে শুরু করেছে রুপোলি মাছের দল। সুস্বাদু মাছের আগমনে ভোজন রসিক শহরবাসীর মধ্যে খুশির হাওয়া। তবে আকারে একটু ছোট তা হলেও ভাজা, কালোজিরে কাঁচালঙ্কার পাতলা ঝোল থেকে সর্ষে মাখা কিংবা পেঁয়াজ রসুন দিয়ে রকমারি রান্নার স্বাদে রাইখরের কদরই আলাদা। বড় মাপের রাইখরের এক পিঠে ঝাল অপর পিঠে টক ঝোলের রেসিপির সঙ্গে গরম সরু চালের ভাত। ভোজন রসিকদের জিভে জল আসতে বাধ্য। প্রখ্যাত নাট্যকার হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “তিস্তা যদি হয় বোরলির, আত্রেয়ী তবে রাইখরের। বালুরঘাটে কোনও অতিথিকে ভাল কিছু খাওয়াতে হলে রাইখর ছাড়া আর কিছু মনে আসে না।” বাজারে দেখলেই হরিমাধববাবু রাইখর কেনেন। তাঁর কথায়, “পুজোয় রাইখরের এক পিঠে ঝাল, অন্য পিঠে টকের অসাধারণ স্বাদের রেসিপি ছিল।” এমন মাছের স্বাদ বালুরঘাটের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা কবি দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ও কোথাও খুঁজে পাননি। তাঁর কথায়, “সাত আট ইঞ্চি আকারের চকচকে রুপোলি রাইখর, স্বাদই আলাদা। এক সময় ঝাঁকে ঝাঁকে রাইখর মাছ বালুরঘাটের কংগ্রেস ঘাট ও কল্যাণী খেয়াঘাটে মিলত। সস্তা ছিল।” শহরের ছোট পত্রিকা সম্পাদক পীযুষকান্তি দেব রাইখর পেলে বাজার থেকে তুলে নেন। ঝাল টকের বদলে কাচালঙ্কা চিরে কালোজিরের পাতলা ঝোল তাঁর বেশি পছন্দ। পীযুষবাবু বলেন, “এখন পুকুরে রাইখরের চাষ হয়ে বাজারে উঠছে। আত্রেয়ীর রাইখর রূপে গন্ধে তুলনাহীন। ছেলেমেয়ে কলকাতা থেকে বাড়িতে আসলেই এই মাছ চাই।” গত কয়েক বছরে আত্রেয়ী নদীর এই মাছ কমে আসছে। মৎস্যজীবী ভীম হালদার, যোগেন হালদারের বলেন, “পাঁচ ছয় ইঞ্চির আকারের রাইখরের ঝাঁক অমিল। নদীময় জাল টেনেও মেলে না। এবারে বৃষ্টিতে ভরা আত্রেয়ীতে জোয়ারের টানে বাংলাদেশের দিক থেকে রাইখর আসছে।” তাঁরা জানান, চলতি মাস থেকে বাংলাদেশের চলন বিল হয়ে আত্রেয়ীতে রাইখরের আসা শুরু। এ বারে বড় আকারের রাইখর পাব বলে আশা করছি। বাসিন্দারা জানান, একটু বড় মাপের রাইখর ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। সকালে বালুরঘাটের মাছ বাজারে আসতেই নিমেষে উধাও হয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত ছোট রাইখর ৩০০ টাকায় মিলে যেতে পারে। |