নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই বাজার ছেয়েছে শব্দবাজিতে। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। শেষ মুহূর্তে সস্তায় বাজির সন্ধানে খড়্গপুর মহকুমার বিভিন্ন গ্রামের বাজি কারখানাগুলিতে ভিড় জমাচ্ছেন শহরের পুজো উদ্যোক্তারা। আতসবাজি সামনে রেখে গোপনে লেনদেন হচ্ছে শব্দবাজি। সব জেনেও নীরব পুলিশ-প্রশাসন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রমরমিয়ে নিষিদ্ধ বাজি তৈরির কাজ চললেও হুঁশ নেই কারও।
দীর্ঘদিন ধরেই বেলদা, নারায়ণগড় বেআইনি বাজি তৈরির সেরা ঠিকানা। খড়্গপুর গ্রামীণেরও বেশ কিছু গ্রামে ঘরে-ঘরে চলছে বাজির কারখানা। বাজির বারুদ থেকে বারবার দুর্ঘটনাও ঘটছে। মাঝে মাঝে পুলিশের ধড়পাকড়ও চলে। তবে তাতে পরিস্থিতি পাল্টায় না।
বেলদার গুড়দলা, বড়মোহনপুর ও গোবিন্দপুরে রমরমিয়ে চলছে বাজি তৈরির কাজ। গত সেপ্টেম্বরে বড়মোহনপুরের লোচন দাস অধিকারীর কারখানায় বিস্ফোরণে দুই কারিগরের মৃত্যু হয়। তারপর থেকে লোচনবাবু জেলে। প্রকাশ্যে বাজি বানানো এখন বন্ধ। তবে গোপনে মজুত মশলা দিয়ে বাজি তৈরি চলছেই। লোচনের ছেলে অলীন বলেন, “বাবা জেলে যাওয়ার পরে পরিকাঠামোর অভাবে বাজি তৈরি বন্ধ করেছি। তবে আশপাশে সকলেই বাজি বানাচ্ছেন। আমরা অনুমতি পেলে পরের বছর ভেবে দেখব।” স্থানীয় সূত্রে খবর, নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করেই গুড়দলার মাধব দাস, গোবিন্দপুরের শ্যামচাঁদ দাসের কারখানায় বাজি তৈরি চলছে। ওই এলাকার সাতটি কারখানায় প্রায় হাজার দুয়েক লোক ওই কাজ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা বাদল বর্মন বলেন, “গোপনে কেউ কেউ বাজি বানাচ্ছেন। বিষয়টি পুলিশের দেখা উচিত।” |
বেআইনি বাজি তৈরিতে ব্যস্ত শিশু-কিশোরের দল।—ফাইল চিত্র। |
নারায়ণগড়ের কোতাইগড়ের বাজি ব্যবসায়ী মাধব গিরি গত ৫ সেপ্টেম্বর ৩ বস্তা বাজির মশলা-সহ গ্রেফতার হন। স্থানীয়দের দাবি, কয়েকদিন জেলবন্দি থাকার পর গত শুক্রবার জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ও পুরনো কাজে ফিরেছেন। প্রায় ৩০ জন কারিগর নিয়ে রমরমিয়েই চলছে তাঁর কারখানা। ওই এলাকায় গিয়ে ক্লাবের সদস্য পরিচয় দিলেই তিনি বাতলে দিচ্ছেন কত টাকার বাজেটে গাছবোমা, জলবোমা তৈরি করে দিতে পারবেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেতেই মাধব গিরি ভোল বদলে বলেন, “দিব্যি করে বলছি আর ও সব কাজ করব না। ক্লাবের কথা বলায় অন্য জায়গা থেকে বাজি জোগাড় করে দেব ভেবেছিলাম।”
খড়্গপুর গ্রামীণ থানার গোকুলপুর রেল স্টেশন লাগোয়া এলাকার বাজি ব্যবসায়ী সুদাম বাগ খড়্গপুর শহরের ক্লাব কর্তাদের কাছে জনপ্রিয়। বারবেটিয়া থেকে জামনা যাওয়ার পথে মাওয়া, চন্দ্রি, পিংলার দুজিপুর, দাঁতনের তুরকা গ্রামের রায়পুর, খড়্গপুর কল্যাণ মণ্ডপের মাঠ সংলগ্ন কিছু ঝুপড়িতে বিপজ্জনক ভাবে চলছে শব্দবাজি তৈরির কাজ। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই মজুত রয়েছে বাজির মশলা। যা থেকে যে কোনও সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে বাজি বিক্রিও চলছে জোরদার। পুজো উদ্যোক্তারা সস্তায় আতসবাজি প্রদর্শনীর আয়োজন করতে ওইসব এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন বাজির সন্ধানে। বাজির মধ্যেও রয়েছে নান রকমফের। সবচেয়ে বেশিমাত্রায় বিক্রি হয় বাঁশের মধ্যে রসবাজির সঙ্গে বোমা যা গাছের আকার নেওয়ায় আক্ষরিক অর্থে গাছবোমা বলেই পরিচিত। জলবোমা হাঁড়িতে রেখে জলের মধ্যে রাখলেও ফাটবে। সম্প্রতি জলের বাজির নতুন সংস্করণ ‘ভূমিকম্প’। এছাড়াও রয়েছে শট, পাইপবোমা, সিটিবোমার মতো শব্দবাজি। পাইপবোমার দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু, ৬০টি শটের একটি ক্যারেটের দাম হাজার টাকা থেকে শুরু, গাছবোমার দাম ১ হাজার থেকে শুরু, আশমানগোলার দাম ৬০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, সুইট সিক্সটির একটি চারশো টাকার প্যাকেটে বোমা থাকে ১৬টি, সিটিবোমার একটি প্যাকেটের দাম দু’শো টাকা। তবে এগুলি সবই পাইকারি বাজারের দর। খুচরো ব্যবসায়ীরা এর প্রায় দেড় গুণ দামে বাজি বিক্রি করেন। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরের দাবি, “আমরা খবর পেলেই ব্যবস্থা নিই। কিছু ক্ষেত্রে বাজি তৈরির অনুমতি থাকলেও সবক্ষেত্রে অনুমতি থাকে না। এই সময়ে বাজির ব্যবসা বেড়ে যায়। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।” |