পরিবেশ রক্ষার মিছিলই ছড়াল জঞ্জালের দূষণ
ব্দবাজির দূষণ নিয়ে সচেতনতার প্রচারে মিছিল। তার থেকেই ছড়াল জঞ্জালের দূষণ!
রবিবার সকালে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও কলকাতা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে ওই মিছিল বেরোয়। স্কুলপড়ুয়া থেকে প্রবীণ নাগরিক, প্রশিক্ষণরত পুলিশকর্মী থেকে পুলিশের ফুটবল স্কুল ‘গোল্জ’-এর সদস্যেরা তাতে যোগ দেন। মিছিলের সামনে ছিলেন খোদ রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার। বস্তুত, দীপাবলির দোরগোড়ায় এসে শব্দবাজির বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে ঝাঁপানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে এই মিছিলের পরিকল্পনা করেন সুদর্শনবাবুই। সব কিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর, এমনকী প্রত্যাশার তুলনায় বেশি সংখ্যক মানুষ (পুলিশের হিসেবে চার হাজার) মিছিলে যোগ দেওয়া সত্ত্বেও শেষপর্বে গিয়ে খাবারের প্যাকেট নিয়ে গণ্ডগোলে দূষণ-বিরোধী ওই উদ্যোগের তাল কেটে যায়। আর তা-ই শেষমেশ জঞ্জাল দূষণের আকার নেয়।
সকাল ১০টায় দেশপ্রিয় পার্ক থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা নাগাদ মিছিল শেষ হয় হাজরা মোড়ে যতীন দাস পার্কে। তার পরেই খাবারের প্যাকেট দেওয়া-নেওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে। আশুতোষ কলেজ লাগোয়া বসন্ত বসু রোডের দু’ধার জুড়ে খালি খাবারের প্যাকেট, উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে বিশ্রী চেহারা নেয়। লাইন দিয়ে প্যাকেট দেওয়ার বদলে একসঙ্গে পাঁচ-ছ’টি প্যাকেট ভিড়ের দিকে এগিয়ে দেওয়ায় বহু প্যাকেট রাস্তায় পড়ে নষ্ট হয়। কেক, লাড্ডুর মতো নরম খাবার পায়ের তলায় পড়ে চেপ্টে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ, বিশেষত মহিলারা ওই অপরিচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন। দুপুরেও ওই অপরিচ্ছন্নতার চিহ্ন রাস্তা থেকে মোছেনি।

এ ভাবেই ছড়িয়েছে জঞ্জাল। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, “মিছিলের শেষে খাবারের প্যাকেট দিতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে নোংরা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাস্তা সাফ করে দেওয়া হয়েছে।” কলকাতা পুলিশের ‘কমিউনিটি পোলিসিং’ শাখা মিছিলে মানুষকে সামিল করতে উদ্যোগী হয়েছিল। ওই শাখার ওসি শোভেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “প্রথম দিকে লাইন দিয়ে খাবারের প্যাকেট না নেওয়ায় সমস্যা হয়েছিল। পরে সব ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় খাবার দেওয়া হলে জঞ্জালের কিছু সমস্যা তো হবেই।” খোলা জায়গায় কোনও কুপন ছাড়াই খাবারের প্যাকেট বিতরণের পরিকল্পনাও এর ফলে প্রশ্নের মুখে।
মিছিলে যোগ দেওয়া পর্ষদকর্তাদের একাংশের অভিযোগ প্রশিক্ষণরত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য, “স্কুলপড়ুয়ারা যেখানে খাবার পায়নি, বয়স্করা অতটা পথ হেঁটে এক গ্লাস জলের জন্য অপেক্ষা করছেন, সেখানে পুলিশকর্মীদের কেউ কেউ গোড়াতেই খাবারের প্যাকেট কার্যত লুঠ করে নেন, কয়েক জন খাবার বিতরণকারী গাড়ির ছাদেও উঠে পড়েন।”
ভিড়ের চাপে এ দিন রাস্তার ধারে কয়েকটি ছোট গাছ ভেঙে যায়। খাবার নেওয়ার হুড়োহুড়িতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও পুলিশকর্মীদের কয়েক জন একসঙ্গে পাঁচ-ছ’টি খাবারের প্যাকেট নিয়ে ভিড়ের মধ্যে ছুড়তে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দা সন্দীপ সাউয়ের কথায়, “একসঙ্গে অনেকগুলি প্যাকেট ছোড়া হচ্ছিল। একেবারে নোংরা হয়ে গেল রাস্তাটা। এই নাকি পরিবেশ রক্ষায় মিছিল!”
পর্ষদ সূত্রের খবর, মিছিলে অংশগ্রহণকারীর তুলনায় খাবারের প্যাকেটের বরাত দেওয়া হয়েছিল অনেক কম। গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্ষদের উদ্যোগে স্কুলপড়ুয়াদের একটি মিছিলের জন্য পাঁচ হাজার খাবারের প্যাকেটের বরাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাঁচশোর বেশি ভিড় হয়নি। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে পর্ষদকর্তাদের একাংশ এ দিনের মিছিলের জন্য হাজার দুয়েকের বেশি খাবারের প্যাকেটের বরাত দেননি। অথচ মিছিলে লোক হল তার প্রায় দ্বিগুণ। কেক-পেস্ট্রি প্রস্তুতকারক একটি সংস্থাকে খাবারের প্যাকেট সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মিছিল শেষের কিছুক্ষণের মধ্যেই সংস্থার গাড়ি পৌঁছয়। অল্প সময়েই বোঝা যায়, প্যাকেট অনেক কম। পর্ষদকর্তাদের দাবি, মিছিলে পা মেলাননি, এমন কিছু লোকও খাবারের প্যাকেটের লোভে ভিড় করেন।
শেষমেশ আরও প্যাকেট আনা হয়। তার পরেও যাঁরা পাননি, তাঁদের বাইরে থেকে খাবার কিনে দিতে টাকার ব্যবস্থা করেন উদ্যোক্তারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.