লন্ডনের পথেই মহানগর, ফিরছে চড়াই
হারানো ঠিকানায় ফের দেখা যাচ্ছে ওদের।
সেই চেনা ঝগড়া, দুপুরভর হট্টগোল, বাসা বাঁধার নামে ঘরের আনাচে-কানাচে খুচরো খড়কুটোর অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে শহরে ফিরছে তারা।
কলকাতার পুরনো ঠিকানায় চড়াই-এর প্রত্যাবর্তনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পক্ষীবিদেরাও।
স্বস্তির এ ছবি শুধু শহর কলকাতা নয়, দিল্লি, মুম্বই এবং এমনকী কলকাতাকে যে শহরের আদলে সাজিয়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী, সেই লন্ডনেও হারানো চড়াইয়ের উচ্ছল হুটোপুটি ফিরে এসেছে বলে জানাচ্ছেন পক্ষীবিদেরা। চড়াই ফেরার আনন্দে ব্রিটিশ সরকার ২০ মার্চ দিনটি ‘বিশ্ব চড়াই দিবস’ হিসেবে ঘোষণাও করেছে।
কিন্তু গত দু-দশক ধরে ক্রমেই তাদের হারিয়ে যাওয়ার হাজারো কারণ খুঁজে পেলেও সেই চড়াই বা হাউস স্প্যারো-র (পাসার ডোমেসটিকাস) নতুন করে সংখ্যাবৃদ্ধির কারণ অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি-র (বিএনএইচএস) বিশেষজ্ঞ থেকে কলকাতার পরিচিত পক্ষীবিদেরাও যেমন কুয়াশায়, তেমনই স্পষ্ট কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না খোদ লন্ডনের ব্রিটিশ ট্রাস্ট ফর ওরনিথলজির (বিটিও) বিশেষজ্ঞেরাও।
সাবেক দালান কোঠার ঘুলঘুলি এখন আর নেই। হারিয়ে গিয়েছে আটপৌরে বাড়ির বারান্দা কিংবা ঘরের কুলুঙ্গি। ফলে ঘর-গেরস্থালির খোঁজ না পাওয়াকে শহর থেকে চড়াইকুলের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ ঠাওরেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। ঠিকানার খোঁজ না পেয়ে যে কারণে শহর থেকে হ্রাস পেয়েছিল লক্ষ্মী কিংবা কুটুরে পেঁচারা। পুরনো বাড়ির কড়ি-বরগার অভাবে নিজেদের সাধের ‘দোদুল্যমান’ অবস্থান হারিয়ে শহর থেকে মুখ ফিরিয়েছিল বাদুড়েরাও।
শহরাঞ্চলে অস্বাভাবিক হারে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়াটাও চড়াই হারানোর একটা বড় কারণ বলে ভাবছিলেন পরিবেশবিদেরা। ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠা মোবাইলের ব্যবহারে ঈথার তরঙ্গে যে কম্পন তৈরি হচ্ছিল তার সঙ্গে কোনও মতেই মানিয়ে নিতে পারছিল না চড়াইরা। শহর থেকে তাই উড়ে গিয়েছিল তারা।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার সেই চড়াই, পেঁচা, বাদুড় জীবনানন্দের সেই সাধের প্রাণীরা ফের ফিরতে শুরু করেছে কলকাতায়। কেন? পক্ষীবিদ তিমির বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শহর কলকাতায় যে নতুন করে পুরনো ধাঁচের ঘর-বাড়ি তৈরি হচ্ছে এমন নয়। অথচ ২০০৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কলকাতা ও শহরতলিতে চড়াইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে বাদুর, পেঁচার সংখ্যাও। এর একটা কারণ হতে পারে পরিবর্তিত পরিবেশে চড়াইরা ক্রমেই মানিয়ে নিতে শুরু করেছে। কারণ লন্ডনেও সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করেই চড়াইরা ফের গ্রাম থেকে শহরমুখো হচ্ছে।” তিনি জানান, গ্রামের দিকে চড়াইরা মূলত শস্যের দানার উপরেই নির্ভর করত। কিন্তু চাষ-আবাদে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সেই শস্যে পেট ভরাতে আর ভরসা পাচ্ছে না চড়াইরা। শহরের পুরনো ঠিকানায় মানুষের উচ্ছিষ্টেই ভরসা রাখতে তাই শহরে ফিরছে তারা।
বিএনএইচএস-এর সহ-অধিকর্তা প্রশান্ত মহাজনও বলছেন, “লন্ডনের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন বড় শহরেও চড়াইয়ের প্রত্যাবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু তার কারণটা এখনও স্পষ্ট নয়।” আর শহুরে গেরস্থের চেনা পড়শি চড়াই যে বাড়ছে তা লক্ষ করেছেন বিটিও-র পক্ষীবিদ জেসিকা অলড্রেডও। তিনি বলেন, “সত্তরের দশকে ইংল্যান্ডে প্রায় ১.২০ কোটি জোড়া চড়াইয়ের সন্ধান পাওয়া যেত, তার পরের দু’টি দশকে তা হু হু করে কমতে থাকে। শহর থেকে চড়াই প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সংখ্যাটা ফের উর্ধ্বমুখী। এখন প্রায় সত্তর লক্ষ চড়াই রয়েছে এ দেশে। লন্ডন শহরেও বেড়েছে চড়াইয়ের সংখ্যা।”
এ ব্যাপারে পক্ষীবিদ ই.এ জিমারম্যানের ব্যাখ্যা, “চড়াইরা বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। বংশবৃদ্ধিও ঘটে দ্রুত। তাই শহরের প্রতিকূলতার সঙ্গে এখন ওরা ফের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তাই হারানো চড়াই ফের ফিরছে শহরগুলিতে।”
লন্ডনের অধিকাংশ বাড়িতে এখন চড়াই ফেরাতে বিশেষ প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিও। তাদের পরামর্শ: বাড়ির পিছনের বাগানে চড়াইদের জন্য কাঠের ঘর বানিয়ে রাখুন। বারান্দায় রেখে দিন জল ভর্তি সরা। তাতে অন্তত প্রাথমিক চাহিদাটুকু পূরণ হবে চড়াইদের। পক্ষী-বিশেষজ্ঞ প্রকৃতি সংসদের কুশল মুখোপাধ্যায়ও বলছেন, “শহুরে মানুষের মধ্যে পাখি নিয়ে আগ্রহ বাড়লেও, সচেতনতা কতটা বেড়েছে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। চড়াইদের প্রাথমিক চাহিদাটুকুর দিকে একটু মনোযোগী হলেই কিন্তু চড়াইদের শহরে ফেরার রাস্তা অনেকটা প্রশস্ত হয়। আমরা সে দিকটায় একটু খেয়াল রাখতে পারি না কি!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.