সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত মেলায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। রবিবার শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডে রেলের মাঠে আয়োজিত পঞ্চম হিমালয়ান এক্সপোতে গিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে দেখে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই উদ্যোক্তাদের তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। মন্ত্রী নিজে টুকিটাকি কেনাকাটা করলে তাঁকেও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন। মন্ত্রী বলেন, “আমাদের শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ। মেলায় তা ব্যবহার করা চলবে না।” উদ্যোক্তারা মন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, অংশগ্রহণকারীদের অনেকে বহিরাগত হওয়ায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করেছেন। মেলার আর প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার হবে না বলে উদ্যোক্তারা মন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ বলে মনে করছেন শহরবাসীদের অনেকেই। একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, শিলিগুড়ির সব জনপ্রতিনিধিরা যদি মন্ত্রীর মতো মনোভাব দেখান, তা হলে চোরাগোপ্তা ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের সাহসও একশ্রেণির ব্যবসায়ী পাবেন না। ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নর্থ বেঙ্গল সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফেরানোর বিষয়টি সকলের কাছেই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে। তা হলে লুকিয়ে-চুরিয়ে কেউ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দিতে চাইলে শহরবাসী প্রত্যাখান করবেন।” |
শিলিগুড়িতে বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। |
কেন্দ্র সরকারের বাণিজ্য বিভাগের ইন্ডিয়া ট্রেড প্রমোশন অর্গানাইজেশন ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে গত ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। মেলায় রয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের হাতের কাজের সম্ভার। বিভিন্ন রাজ্যের শাড়ি, চাদর, ব্যাগ ইত্যাদি রয়েছে এই মেলায়। রয়েছে অসম থেকে আসা বাঁশের তৈরি নানা জিনিস। এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের হাতে তৈরি জিনিস। এ দিন মেলায় গিয়ে বেশ কয়েকটি স্টলে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে জিনিস দেওয়ার বিষয়টি দেখতে পান মন্ত্রী। বিষয়টি চোখে পড়তেই তা ব্যবহার করতে নিষেধ করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিষয়টি নজরে আসতেই আমি তা বন্ধ করতে বলেছি। কোনভাবেই শহরে এই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ আমরা ব্যবহার করতে দেবনা।” মেলার আয়োজকের দায়িত্বে থাকা দীপক কুমার জৈন বলেন, “মেলায় বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ এসেছেন, অনেক গ্রামীন এলাকা থেকেও শিল্পীরা এসেছেন। তাঁদের অনেকেই বিষয়টি জানেন না। আমরা সকলে আজই জানিয়ে দেব কেউ যেন ক্যারিব্যাগ ব্যবহার না করেন।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছু ব্যবসায়ী এখনও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করে চলেছেন। জিনিস কিনলেই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগই দিচ্ছেন তাঁরা। শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার নির্দেশ থাকলেও কেন কোন সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না পুরসভার তরফ থেকে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শহরের বিধান মার্কেট এলাকায় সব্জি বাজারে রীতিমত চলছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার।
কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের এই বিষয়ে কোন দৃষ্টি নেই বলে অভিযোগ তৃণমূল ও বামেদের। সাধারণ মানুষকে দেখিয়ে দু’দিন অভিযান করার পরেই আর কোন পদক্ষেপ দেখা যায় না বলে অভিযোগ বামেদের। অভিযান করার পরেই ফের ব্যবহার শুরু হয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের। শুধু বাজারে অভিযান না করে কারখানা গুলি বন্ধ করা উচিত বলে দাবি করেন বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বিভিন্ন বাজারে ফের শুরু হয়েছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। একদিন অভিযান করার পর তা নিয়ে আর কোন উদ্যোগ নেই এই পুরসভার। প্রতিটি কাজেই গাফিলতি রয়েছে। শহরের পরিবেশ বাঁচাতে এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে বিধান মার্কেট এলাকায় লিফলেট বিলি করা হয়েছিল সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কিন্তু মাত্র দু’দিনেই সেই সমস্ত অভিযান শেষ হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। শুধুমাত্র প্রচারের জন্য এই সমস্ত কাজগুলি করছে এই কংগ্রেস বোর্ডের সদস্যরা। তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল বলেন, “এই বোর্ডের সঙ্গে কিছু ক্যারিব্যাগ কারখানা মালিকের আঁতাত রয়েছে। সেই সুযোগেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে শহরে।” শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানান, তাঁরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। সরকারি মেলায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার যাতে না হয়, সে জন্যও পুরসভাও নজরদারি বাড়াবে বলে জানিয়েছেন মেয়র।
|
পুরনো খবর: শুরু হল এক্সপো |