ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত খানাকুলের দু’টি ব্লকের সামগ্রিক পরিস্থিতির যখন উন্নতি হচ্ছে, তখন প্রশাসনকে চিন্তায় ফেলল গোঘাট-১ ব্লকের দলকার জলা। কারণ, গত ক’দিনের লাগাতার বৃষ্টি।
শনিবার রাতে ওই জলা উপচে ভাসাল ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। কুলিয়া, দেওয়ান চক, কোটা, নকুণ্ডা প্রভৃতি গ্রামে জল ঢুকেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু মাটির বাড়ি। নষ্ট হয়েছে চাষ। কেননা, চাষের জমি অন্তত পাঁচ ফুট জলের নীচে। স্বাধীনতার পর থেকে এক বারও ওই জলার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়ায় প্রায় প্রতি বছরই বর্ষায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের।
আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “ওই এলাকায় দুর্গতদের জন্য ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জলাটি সংস্কার করা হবে।” দলকার জলা আসলে ওই ব্লকের নকুণ্ডা, শেওড়া, বালি ও গোঘাট পঞ্চায়েতের কিছুটা অংশ এবং লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের সুলতানপুর পঞ্চায়েতের ১০ হাজার হেক্টর নিচু জমি। বাঁকুড়া এবং সংলগ্ন হুগলির গ্রামগুলিতে বেশি বৃষ্টি হলে বা কংসাবতী ব্যারাজ জল ছাড়লে সেই জল গোঘাটের আমোদর ও তারাজুলি খাল দিয়ে গিয়ে দলকার জলায় গিয়ে পড়ে। জলের পরিমাণ বেশি হলে জলা উপচে সংলগ্ন এলাকা ভাসায়। ভৌগোলিক ভাবে নীচের দিকে থাকা ঘাটালের শীলাবতী নদীতেও বর্ষায় জলের চাপ বেশি থাকায় দলকার অতিরিক্ত জল ওই নদী দিয়ে বেরোতে পারে না। একই হাল রূপনারায়ণ দিয়ে জল বেরনোর ক্ষেত্রেও।
জল বেরোতে না পারায় প্রতি বর্ষার পরে পাঁচ-ছ’মাস ওই জলা এবং সংলগ্ন এলাকা ডুবে থাকে। গ্রামবাসীদের দাবি, যথাযথ নিকাশি ব্যবস্থা গড়া হলে এবং জলাধার তৈরি করা হলে সমস্যার স্থায়ী সুরাহা হয়। কুলিয়া গ্রামের দীনবন্ধু মণ্ডল, নকুণ্ডার বিভাস কুণ্ডু বা গোয়ালপোতা গ্রামের মিরাজ খানের বক্তব্য, “খালগুলি যথাযথ সংস্কার করে জলাধার করা হলে সব মরসুমেই চাষাবাদ করা যাবে। গরমেও সেচের অভাব হবে না। এমনই উর্বর জমি যে কোনও সারও প্রয়োগ করতে হয় না।” ২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা পরিষদের তরফে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জলা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। অনুমোদন মেলে ৫ কোটি টাকা। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, তখন থেকে ওই বিস্তীর্ণ জলার সংস্কারের কাজ হচ্ছে। বিডিও দেবময় বিশ্বাস বলেন, “সংস্কারের কাজ তো দফায় দফায় হচ্ছে। এলাকাটি এতই বড় যে বর্ষার আগে সংস্কার কাজ শেষ করা যায়নি। তার উপরে বর্ষায় সংস্কার হওয়া অংশগুলি ফের বুজে গিয়ে সমস্যা বাড়িয়েছে। মনে হয় ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত হলে তবেই এখানকার সমস্যারও স্থায়ী সমাধান হওয়া সম্ভব।” |