জমি থেকে জল নামামাত্রই ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষতে নেমে পড়েছে কৃষি দফতর। পুজোর সময় থেকেই চলছিল বৃষ্টি। পুজোর পর পরই ডিভিসির ছাড়া জলে বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতা-২ ব্লক। শাকসব্জি, রবিশস্য সমস্ত কিছু চলে গিয়েছিল জলের তলায়। জল নামার পর মাঠে ফসলের হাল দেখে মাথায় হাত চাষিদের। দীর্ঘ সময় জলের তলায় থেকে বিঘের পর বিঘের ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যায় প্লাবিত হাওড়া উদয়নারায়ণপুর ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত এবং আমতা-২ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েত এলাকায় রবিশস্য ও সব্জির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডিভিসির ছাড়া জলের চাপে উদয়নারায়ণপুর ব্লকের তিনটি জায়গায়, টোকাপুর এবং মনশুখার দু’টি জায়গা বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। উদয়নারায়ণপুরের কানুপাট-মনসুখা, ভবানীপুর-বিধিচন্দ্রপুর, গড়ভবানীপুর-সোনাতলা, হরালি, পাঁচারুল, রামপুর-ডিহিভুরসুট, কুর্চি-শিবপুর, দেবীপুর, সিংটি এই ন’টি পঞ্চায়েত এলাকায় মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে উদয়নারায়ণপুর কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ডিহিভুরসুটের বাসিন্দা চাষি হলধর কাঁড়ার বলেন, “আমি বিঘা ছয়েক জমিতে আমন ও আউশ ধান চাষ করে ছিলাম। কিন্তু বন্যার জলে সমস্ত নষ্ট হয়ে গেল।” |
একই আক্ষেপ উদয়নারায়ণপুর বিধিচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা চাষি রণজিৎ বেরারও। তিনি বলেন, “দামোদরের খালের পাশে আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ঢেঁড়শ, পটল, শশা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, কুমড়ো চাষ করেছিলাম। বন্যার জলে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন কী করে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না।” উদয়নারায়ণপুর কৃষি দফতরের আধিকারিক অভিমন্যু বারুই বলেন, “১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ কোটি টাকা।”
একই অবস্থা আমতা-২ ব্লকেও। এখানে ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি পঞ্চায়েত এলাকায় রবিশস্য ও সব্জি চাষে ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে আমতা-২ কৃষি দফতর। মূলত রামপুর খাল, থলিয়া-বাক্সি খাল এবং উদয়নারায়ণপুর থেকে আসা বন্যার জলে প্লাবিত হয়েছে বিনোলা-কৃষ্ণবাটি, থলিয়া, অমরাগড়ি, ঝামটিয়া, ভাটোরা, ঘোড়াবেড়িয়া, চিৎনান এই সব পঞ্চায়েত এলাকা। ব্লক কৃষি আধিকারিক ননীগোপাল ভঞ্জ বলেন, “৭টি পঞ্চায়েতের ৩৮টি মৌজার আড়াই হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা।”
চাষের মরসুমে এই ক্ষতি কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, তার সদুত্তর নেই প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। |