বর্ষার জলছবির বদল হল না এ বারও। দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে বালি জগাছা ব্লকের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত পাঁচটি নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ আরও তিনটি পঞ্চায়েত এলাকাই কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়ল।
ডোমজুড় বিধানসভার বালি জগাছা ব্লকের, নিশ্চিন্দা, ঘোষপাড়া, সাঁপুইপাড়া, বসুকাঠি, চকপাড়া আনন্দনগর, দুর্গাপুর, অভয়নগর এক নম্বর, দুর্গাপুর, অভয়নগর দু’নম্বর, জগদীশপুর, চামরাইল এই পঞ্চায়েতগুলির বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরের মতো এ বারও অধিকাংশ এলাকাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। যদিও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অন্য বছরের তুলনায় এ বার জল জমার পরিমাণ কিছুটা কম। পাশাপাশি, নিকাশির কাজ পুরোদমে শুরু হওয়ার আগেই বর্ষা আসায় বিপত্তি হয়েছে।
আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পশ্চিম শান্তিনগর, চাঁদমারি, অরবিন্দ নগর, প্রান্তিক, জগদীশপুর, চামরাইল রামকৃষ্ণপল্লি, চকপাড়া দুর্গাপুর, রাজচন্দ্রপুর এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। বিগত কয়েক বছরে সাপুইপাড়া, বসুকাঠি পঞ্চায়েত এলাকায় এই বর্ষার জমা জলেই ডুবে দু’টি শিশু সহ চার জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। এ বার বর্ষার শুরুতেই ওইসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। |
পঞ্চায়েত এলাকার এই সব জায়গায় একতলার বাড়ির ভিতরে এক হাঁটু জল। বিছানার উপর জিনিসপত্র রাখতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জল জমার সঙ্গে শুরু হয়েছে খাবার জলের সমস্যা। টিউবওয়েল ডুবে গিয়েছে। ইট পেতে দোকান উঁচু করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকার জলবন্দি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে স্কুল বাড়িতে রাখা হয়েছে। খেলার মাঠ ও পুকুর একাকার। কোথাও কোথাও বাঁশের সাঁকো বানিয়েছেন স্থানীয়েরা।
বসুকাঠি এলাকার এক বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, “পুরনো বাড়ি ভেঙে যখন নতুন বাড়ি তৈরি করি তখনই উঁচু করে বাড়ি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিই।” খারাপ অবস্থা বেলুড় সাবওয়ের। বালি পুরসভা এলাকা থেকে পঞ্চায়েত এলাকা আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হল এই সাবওয়ে। বৃষ্টি হলেই সাবওয়েতে ভ্যান রিকশা পর্যন্ত ডুবে যায়। গাড়ির ভেতর জল ঢুকে যায়। সাইকেল কাঁধে করে নিয়ে রেললাইন পেরোতে হচ্ছে মানুষকে। এই আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নিকাশি ব্যবস্থা মূলত শ্যাওড়াপোতা, সুতি, বালি খাল, ড্রেনেজ ক্যানাল-১ এবং সরস্বতী খালের উপর নির্ভরশীল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি খালগুলির। পঞ্চায়েতগুলির কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি, বাম আমলে সংস্কারের কোনও কাজ হয়নি। তাই এই অবস্থা। সাঁপুইপাড়া বসুকাঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য দেবব্রত মণ্ডল বলেন, “আমরা সবে ক্ষমতায় এসেছি। আমাদের প্রথম কাজই হল এলাকার নিকাশি উন্নত করা। সে জন্য জেলা প্রশাসনের সমস্ত স্তরে যোগাযোগ করছি। বালি জগাছা ব্লকের বিডিও সুনন্দ ভট্টাচার্য বলেন, “ন্যাশনাল হাইওয়ে সম্প্রসারণ চলছে। জমা জল বেরোতে পারছে না। যে সব খালগুলো দিয়ে জল বেরোয় সেগুলি অনেকটাই বুজে রয়েছে। তবে নিশ্চিন্দা এলাকায় সেচ দফতরের তরফে বড় ড্রেন তৈরি শুরু হবে। সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে। এই কাজ হয়ে গেলে আর জল জমবে না।” |