|
|
|
|
অন্ধ্রেই রইল নিম্নচাপ, বৃষ্টি ছাড়ল বাংলাকে নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শেষ পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশেই থমকে গেল ‘পথ-ভোলা’ নিম্নচাপ! থেমে গেল দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টিও।
উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানিয়েছেন, রবিবার সকাল থেকে নিম্নচাপটি অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় জেলাগুলির উপরে অবস্থান করছে। বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে সোমবারের মধ্যে তা দুর্বল হয়ে যাবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “সোমবার থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ফের রোদের দেখা মিলবে।”
ঘটনাচক্রে, এ মরসুমে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ এবং সর্বোপরি ঘূর্ণিঝড় পিলিনের দাপটে লম্বা হয়েছে বর্ষার ইনিংস। আবহাওয়া দফতরের খাতায়-কলমে বর্ষা ২১ অক্টোবর দক্ষিণবঙ্গ থেকে বিদায় নিলেও বৃষ্টি পিছু ছাড়েনি দক্ষিণবঙ্গের। পিলিনের দিন দশেকের ভিতরেই তামিলনাড়ু উপকূলে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল। নিয়ম-মতে, তার তামিলনাড়ু-অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে আরবসাগরের দিকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বয়ে আসা হাওয়ার ধাক্কায় পথ ভুলে সে চলে আসে অন্ধ্র উপকূলের দিকে। তার জেরে ওড়িশা, দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে অসম পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, “নিম্নচাপ এবং বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকা একটি ঘূর্ণাবর্ত ছিল। তার সঙ্গে পিলিনের রেশ ধরে বাতাসে ছিল পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্পও। এই ত্র্যহস্পর্শেই কালীপুজোর সাত দিন আগেও ঝেঁপে বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে।”
এ বছর অবশ্য দুর্গাপুজোতেও বাঙালিকে ভুগিয়েছে বৃষ্টি। পিলিনের দাপটে অষ্টমী থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। নবমীতে তা আরও বাড়ে। ফলে কিছুটা হলেও মার খেয়েছিল উৎসবের মেজাজ। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি দেখে আম-বাঙালির অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কালীপুজোতেও কি ভাসাবে বৃষ্টি?
রবিবার আবহাওয়া দফতরের আশ্বাসে অবশ্য সেই চিন্তা অনেকটা কেটে গিয়েছে। বস্তুত, নিম্নচাপটি যে আর ভুগোবে না, তা শনিবার রাতেই উপগ্রহ-চিত্র দেখে আঁচ করেছিলেন আবহবিজ্ঞানীরা। এ দিন সেই আন্দাজটাই কাঁটায়-কাঁটায় মিলে গিয়েছে। এবং তাতেই বাংলার আকাশ থেকে কাটতে শুরু করেছে মেঘ। মহানগরে এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। আবহবিদদের পূর্বাভাস, আকাশ পরিষ্কার হতেই বাতাসে জলীয় বাষ্প কমতে শুরু করবে। বস্তুত এ দিনের উপগ্রহ-চিত্রেই পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের কমে যাওয়া নজরে এসেছে। সোমবার থেকে উপকূলীয় এলাকাতেও তা কমতে শুরু করবে বলে আবহবিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণও কমেছে। ঝাড়খণ্ড প্রশাসন সূত্রের খবর, শনিবার রাতে চান্ডিল বাঁধের জলস্তর বিপদসীমার উপরে উঠে গিয়েছিল। ফলে ১৩টি গেট-ই খুলে দেওয়া হয়। মিনিটে ২২০০ কিউসেক করে জল বেরোতে থাকে। রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় রবিবার সকালে ৭টি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জল ছাড়ার পরিমাণও কমেছে। সুবর্ণরেখার গালুডি ব্যারাজ থেকেও মিনিটে ৩৪০০ কিউসেক করে জল ছাড়া হয়েছে। রাতের দিকে গালুডি থেকেও জল ছাড়ার পরিমাণ কমেছে। জল ছাড়া হয়েছে পাঞ্চেত এবং মাইথন থেকেও। তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই ছিল বলে রাজ্য সেচ দফতর সূত্রের খবর।
বাংলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও অন্ধ্রপ্রদেশকে কিন্তু কার্যত ডুবিয়ে ছেড়েছে অক্টোবরের এই নিম্নচাপ। বিপর্যস্ত ওড়িশার একাংশ। ইতিমধ্যেই দুই রাজ্য মিলিয়ে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, দুই রাজ্য মিলিয়ে অন্তত ৮০ হাজার লোককে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে প্রায় আড়াইশো ত্রাণ শিবির। পরিস্থিতি সামলাতে নামানো হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। ঘটনাচক্রে, পুজোর সময় পিলিন আছড়ে পড়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে। শ্রীকাকুলামের প্রতিবেশী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ওড়িশার গঞ্জাম জেলাও। এ বার বন্যাতেও সেই দু’টি জেলাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিপর্যস্ত অন্ধ্রের বিজয়নগর এবং বিশাখাপত্তনম জেলাও।
|
|
|
|
|
|