কোচবিহারের তামাক পাড়ি দিচ্ছে ইউরোপে। গত কয়েক দিনে ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০০ টন তামাক ইউরোপে পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ভারতের নানা রাজ্যেও চাহিদা বেড়েছে। তার জেরে অনেকটাই দাম বেড়ে গিয়েছে তামাকের। হাসি ফুটেছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মুখে। কোচবিহার তামাক মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে শান্তি মেটা বলেন, “কয়েক মাস আগেও, শুধু দুটি রাজ্যের উপর নির্ভর করে তামাকের ব্যবসা করতে হত। এ বারে দেশের অন্য রাজ্য দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ সহ সমস্ত রাজ্যেই জেলার তামাকের চাহিদা শুরু হয়েছে। বেশ কিছু তামাক রফতানি করা হয়েছে। তামাকের দাম বেড়েছে। আশা করছি তামাক চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলেই স্বচ্ছলতার মুখ দেখবেন।”
তামাক চাষে যুক্ত রয়েছেন জেলা পরিষদ সদস্য কৃষ্ণকান্ত বর্মন। তিনি বলেন, “তামাক বিদেশে যাওয়া শুরু হওয়া আমাদের কাছে খুশির খবর। এবারে ভাল দাম পাব বলে আশা করছি।” দিনহাটা তামাক গবেষণাগার সূত্রের খবর, কোচবিহারে তামাককে অর্থকরী ফসল হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। জেলার দিনহাটা ১ নম্বর, ২ নম্বর ব্লক, সিতাই শীতলখুচি, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জে তামাক চাষের পরিমাণ বেশি। এখানে মোতিহারি ও জাতি দুই ধরনের তামাক চাষ হয়। ভারতের গুজরাট, অন্ধ্রপ্রদেশে তামাকের চাষ হলেও এই দুই ধরনের তামাক সেখানে হয় না। বিজ্ঞানীদের দাবি, মোতিহারি তামাক, অন্য প্রজাতির তামাকের তুলনায় শরীরের অনেক কম ক্ষতি করে। আর জাতি তামাক সুগন্ধি। এই দু’কারণে দুই তামাকের চাহিদা বাড়ছে। ইউরোপে চুরুট ও হুক্কা কোম্পানিতে জাতি তামাক ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, অনেকটা দার্জিলিং চায়ের মত। ওর সুগন্ধি ও মানের জন্য বরাত মিলছে, ভাল দামও দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তামাকের গুণ ও মানের উপরে তার দাম নির্ভর করে। একটি তামাক গাছে আটটির মতো পাতা হয়। নীচের দিকের পাতাগুলির মান খারাপ হওয়ায় তার দাম কম হয় বলে জানা গিয়েছে। উপরের দিকের পাতাগুলি ভাল হওয়ায় তার দাম বেশি হয়। বর্তমানে মোতিহারি তামাক পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা কুইন্টাল পর্যন্ত বিক্রি হয়। পাশাপাশি জাতি তামাক ১০ হাজার টাকা কুইন্টাল বিক্রি হয়। কৃষক শর বর্মন, রবীন্দ্রনাথ সেনেরা এই প্রসঙ্গে বলেন, “অক্টোবর মাস থেকে তামাক চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এক বিঘায় তামাক চাষে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ মন তামাক উৎপাদিত হয়।”
|
চাষি, ব্যবসায়ীর মুখে হাসি |
• জেলায় তামাক চাষ হয় প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে।
• প্রায় ৮০ হাজার কৃষক তামাক চাষে যুক্ত।
• ব্যবসায়ী ও কৃষক মিলিয়ে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ তামাকের উপর নির্ভরশীল।
• বছরে ২০০ কোটি টাকার উপরে ব্যবসা।
• মোতিহারি এবং জাতি তামাক চাষ হয়।
• এ বছর ইউরোপ রফতানির সম্ভাব্য পরিমাণ হাজার কুইন্টাল। |
|