অবশেষে আবার ২১ হাজার অঙ্ক উচ্চতার শৃঙ্গ জয়। সেনসেক্স শেষ বার এই শৃঙ্গে আরোহণ করেছিল ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে। সেনসেক্সের সর্বকালীন রেকর্ড ২১,২০৭, যেখানে সূচক পা রেখেছিল ২০০৮-এর ১০ জানুয়ারি।
গত বৃহস্পতিবার সূচক ২১,০০০ স্পর্শ করার পরক্ষণেই দ্রুত নেমে এসেছে লগ্নিকারীদের লাভ ঘরে তোলার তাগিদে। অনেকেই বসেছিলেন এই মুহূর্তটির জন্য। সূচক ২১,০০০ হাজারের বাধা পেরোনো মাত্রই বিক্রির চাপ আসে বাজারে। ফলে, দিনের শেষে সেনসেক্স বন্ধ হয় ২০,৭২৫ অঙ্কে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন, হঠাত্ এমন কী ঘটল, যাতে ভর করে সূচক এতটা উচ্চতায় উঠে এল। বিশেষ করে পণ্যমূল্য যখন লাগামছাড়া এবং সুদ যখন কমার বদলে ঊর্ধ্বমুখী। এই ব্যাপারে যে-সব কারণ উঠে আসছে সেগুলি হল:
• এক, রফতানি বৃদ্ধি এবং আমদানি হ্রাস।
• দুই, টাকার মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলারের দাম স্থিতিশীল হওয়া।
• তিন, মার্কিন প্রশাসনে তালা খোলা।
• চার, ভারতে কৃষি উত্পাদন বেড়ে খাদ্যপণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা।
• পাঁচ, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর সাফল্যের সম্ভাবনায় বিদেশি লগ্নিকারীদের ভারতীয় বাজারে আগ্রহ বৃদ্ধি
• ছয়, অক্টোবরে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীদের ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি লগ্নি।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না ২১ হাজারে দাঁড়িয়ে থাকার মতো যথেষ্ট শক্তি সূচকের আছে। এই কারণেই লগ্নিকারীরা লাভ ঘরে তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে, বাজার কিছুটা নামে শুক্রবারও।
মানুষ এখন একটু সাবধানে খেলতে চান। মঙ্গলবার ঋণনীতি পর্যালোচনার দিন। এতটা মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সুদ যে আর এক প্রস্ত বাড়বে না, তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। মরগ্যান স্ট্যানলির আশঙ্কা, রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭.৭৫ শতাংশে তুলে আনা হতে পারে। এত দিন শিল্পপতিদের দাবি ছিল সুদ কমানো। এখন তাঁরা বলছেন সুদ যেন আর না-বাড়ানো হয়। অর্থাত্ সুদ যে কমছে না, তার ইঙ্গিত যথেষ্ট। বাজারের কাছে বড় সুখবর হল, এই পরিস্থিতিতেও বিদেশি লগ্নিকারীরা আবার লগ্নির পথে নেমেছে। ভারতীয় অর্থনীতির ভবিষ্যত্ সম্পর্কে তারা আশাবাদী বলেই হয়তো এটা সম্ভব হয়েছে।
ভারতীয় অর্থনীতির উপর ভরসা রাখছে দেশের বৃহত্তম বিমা কোম্পানি রাষ্ট্রায়ত্ত জীবনবিমা নিগমও (এল আই সি)। চলতি আর্থিকে এল আই সি-র ইক্যুইটিতে লগ্নির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৪০,০০০ কোটি টাকা। বাজারের পরিস্থিতি বুঝে নিগম এরই মধ্যে লগ্নি করে ফেলেছে ৩২,০০০ কোটি টাকা। বাজার অনুকূলে থাকলে লগ্নির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন নিগমের চেয়ারম্যান এস কে রায়। তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারগুলির দাম ভাল জায়গায় পৌঁছে যাওয়ায় নিগম লাভ-সহ ৩৪০০ কোটি টাকার ইনফোসিস শেয়ার বিক্রি করেছে বলে জানা গিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি লগ্নির ভাল জায়গা বলে মনে করছেন নিগমের চেয়ারম্যান।
ভারতের কাছে বড় আশঙ্কা হল মার্কিন অর্থনীতিতে ওই দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক অর্থাত্ ফেডারেল রিজার্ভের ত্রাণ কমিয়ে আনার সম্ভাবনা। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে এটি ঘটতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ যদি বাজার থেকে বন্ড কেনা কমায়, তবে বাজারে ডলার প্রবাহ কমবে এবং তার ফলে কমতে পারে ভারতের মতো দেশে বিদেশি লগ্নি। দেশে ডলার প্রবাহ কমলে আবার পড়তে পারে টাকার দাম। এই কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক খারাপ সময়ের জন্য একটা ডলার ভাণ্ডার গড়ার পরিকল্পনা করছে। ডলার আমদানি বাড়ানোর জন্য উত্সাহ দেওয়া হবে অনাবাসী জমা প্রকল্পে। সুগম করা হবে বিদেশি লগ্নির পথ।
মন্দার বাজারে ভাল কোম্পানি ফলাফলও বাজার তেজী থাকার অন্যতম কারণ। এখনও পর্যন্ত আশার তুলনায় ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি নামী কোম্পানি। শুক্রবার খুশির ফলাফল দিয়েছে আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ব্যাঙ্কের লাভ ১৯৫৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৩৫২ কোটি টাকা। একই সময়ে আই টি সি-র নিট মুনাফা বেড়েছে ২১ শতাংশ। পৌঁছেছে ২২৩০ কোটি টাকায়। বিক্রি প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে ছাড়িয়েছে ৭৭৭৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে ৭ শতাংশ লাভ কমেছে গ্যাস অথরিটির। ৯৮৫ কোটি টাকা থেকে নিট মুনাফা নেমে এসেছে ৯১৬ কোটি টাকায়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি মন্দের ভাল। দেওয়ালির মধ্যে সূচক আবার ২১ হাজারে বাসা বাঁধতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার। এর অনেকটাই নির্ভর করবে মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোন পথে হাঁটে তার উপর।
|