আহা কী আনন্দ। আকাশে বাতাসে আবার একুশ হাজারের গন্ধ।
কোজাগরীর দিন সূচকের পায়ে পায়ে লক্ষ্মী প্রবেশ করেছেন অনেকেরই ঘরে। ওই দিন মুম্বই সূচক পৌঁছেছে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। শুক্রবার শেষ বেলায় সূচক থেমেছে ২০,৮৮৩ অঙ্কে। ৬১৮৯ পয়েন্টে পৌঁছেছে নিফটি-ও। মার্কিন প্রশাসনে তালা খোলা এবং চিনের আর্থিক বৃদ্ধির খবর আনন্দের আবহাওয়া তৈরি করে বিশ্বময়। ভারতেও কয়েকটি কোম্পানির ভাল ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে শেয়ার কিনতে নেমে পড়েন বিদেশি লগ্নিকারীরা।
ভারতের আর্থিক সঙ্কট এখনই না-কাটলেও উন্নতির খবর আসছে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র থেকে। রফতানি বাড়ছে। অনেকটা স্থিতিশীল হয়েছে ডলারের দাম। তবে মূল সমস্যা এখনও সেই মূল্যবৃদ্ধি। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির হাত ধরে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে পণ্যমূল্য কমবে বলে আশা অনেকেরই। তখন যদি সুদও কমে, তবেই উন্নয়নের দ্বার পুরোপুরি খুলবে।
শেয়ার বাজারের মূল দুই সূচক অনেকটা বাড়লেও সর্বোচ্চ জায়গা থেকে অনেক পিছনে পড়ে আছে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ সূচক। ফলে অনেকেরই পোর্টফোলিওতে বড় রকমের উত্থান এখনও তেমন দেখা যায়নি। একই অবস্থা অনেক মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পেরও।
বড় শেয়ারেরও সবগুলিই তেমন বাড়েনি। অনেক পিছনে পড়ে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলি। সেনসেক্স যখন একুশ হাজার ছুঁইছুঁই, তখনও স্টেট ব্যাঙ্ক শেয়ার পেরোতে পারেনি ১৭০০ টাকার বাধা। পিএনবি-সহ একই অবস্থা অনেক সরকারি ব্যাঙ্কের। এই বাজারে রেকর্ড উচ্চতায় আছে তথ্যপ্রযুক্তি শেয়ারগুলি। বিক্রি বাড়ায় ভাল জায়গায় ফিরে এসেছে গাড়ি সংস্থার শেয়ারও। গুটিগুটি এগোচ্ছে রিলায়্যান্স এবং এল অ্যান্ড টি-র মতো আরও কয়েকটি হেভিওয়েট। ভাল জায়গায় ফিরে এসেছে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি।
তবে বাজারের উপরের স্তরে খুশির জোয়ার এলেও সামগ্রিক ভাবে আনন্দের পরিবেশ তৈরি হওয়ার জন্য আমাদের হয়তো আরও কিছু মাস অপেক্ষা করতে হবে।
শুরু হয়েছে ২০১৩-’১৪ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা প্রথম ষাণ্মাসিক ফলাফল প্রকাশের মরসুম। প্রথম দিকের ফলাফল মোটের উপর এখনও পর্যন্ত ভাল।
ব্যবসায় সুদিন ফিরতে শুরু করায় এবং চড়া ডলারের জমানায় আশা অনুযায়ী বেশ ভাল ফল প্রকাশ করেছে অগ্রণী তিন তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ইনফোসিস, টিসিএস এবং এইচসিএল ইনফোটেক। বেশ রমরমা অবস্থা এখন টিসিএস-এর। তিন মাসে কোম্পানির নিট লাভ ১২ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৪৭০২ কোটি টাকায়। ওই সময়ে কোম্পানির মোট আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২১,০০০ কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোম্পানি বেশ আশাবাদী। চলতি বছরে কোম্পানিতে ২৫,০০০ নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে জানানো হয়েছে।
২৭ শতাংশ বেড়ে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা পৌঁছেছে ১৯৮২ কোটি টাকায়। পাশাপাশি অবশ্য বেড়েছে অনুৎপাদক সম্পদ বা এনপিএ। মোট এনপিএ ২১৩৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে স্পর্শ করেছে ২৯৪২ কোটি টাকা।
ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে বেসরকারি অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কও। ফলাফল নিয়ে এখনও বাজারে হাজির হয়নি সরকারি ব্যাঙ্কগুলি। যা আশা করা হয়েছিল, তার তুলনায় ভাল ফলাফল প্রকাশ করেছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো। খারাপ ফলাফলের তালিকায় আছে প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল এবং আল্ট্রাটেক সিমেন্ট। আশা করা হচ্ছে, দেওয়ালির আগেই প্রকাশিত হয়ে যাবে বেশির ভাগ ফলাফল। বাজারও নিজেকে গুছিয়ে নেবে ফলাফল অনুযায়ী।
শেয়ার বাজার তেজী হলে ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পের ন্যাভ বাড়ে। এটা কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের কাছে আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়নি। বেশ কয়েক বছর যেহেতু মানুষ ইক্যুইটি প্রকল্পে তেমন লাভের মুখ দেখেননি, সেই কারণে সেনসেক্স ২০ হাজার পেরোনো মাত্র ইউনিট বিক্রি করে লাভ ঘরে তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। ৫ লক্ষের বেশি মিউচুয়াল অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। মে মাসে বন্ধ হয়েছিল প্রায় ৭ লক্ষ অ্যাকাউন্ট, যখন সেনসেক্স ২০,৫০০ ছুঁইছুঁই হয়েছিল। অর্থাৎ সেনসেক্স ২১,০০০-এর কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের কাছে আদৌ সুখবর নয়।
তুলনামূলক ভাবে ব্যাঙ্ক জমা এবং বন্ডের আকর্ষণ এখন অনেক বেশি। বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক মেয়াদি আমানতে এখন সুদ দিচ্ছে ৯.৪০ শতাংশ পর্যন্ত। প্রবীণ নাগরিকরা পেতে পারেন সর্বাধিক ৯.৯০ শতাংশ সুদ।
সুদ বেড়েছে করমুক্ত বন্ডেও। পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন এবং এনএইচপিসি ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদে সুদ দিচ্ছে যথাক্রমে ৮.৪৩ শতাংশ, ৮.৭৯ শতাংশ এবং ৮.৯২ শতাংশ হারে। দু’টি ইস্যুই ‘ট্রিপল এ’ রেটিং যুক্ত। দু’টি ইস্যুই খোলা থাকবে আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। ২০ এবং ৩০ শতাংশ করের আওতায় পড়েছেন যে-সব মানুষ, তাঁদের জন্য এ বারের করমুক্ত বন্ড বেশ আকর্ষণীয় লগ্নির জায়গা। |