বরোদার বিরুদ্ধে রঞ্জি অভিযান শুরুর আগের দিন বৃষ্টিস্নাত সকালেই বাংলা ড্রেসিংরুমে হাজির জেসি ওয়েন্স, পাভো নুরমি থেকে সচিন তেন্ডুলকর! তবে সশরীরে নয়। গল্পের মাধ্যমে। আর তাঁদের কীর্তি, দায়বদ্ধতা, নাছোড় মনোভাবের গল্প শুনিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্ল আর তাঁর সতীর্থদের মনোনিবেশ করালেন বাংলার হয়ে রঞ্জি জয়ী এক প্রাক্তন ক্রিকেটার।
চব্বিশ বছর আগে দিল্লিকে কোশেন্টে হারিয়ে অশোক মলহোত্রদের রঞ্জি জয়ের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন অরুণলাল। এ দিন সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাংলা কোচ অশোক মলহোত্রর সংসারে হাজির অরুণলাল। ঋদ্ধিমান-দিন্দাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে কাটিয়ে গেলেন পাক্কা দু’ঘণ্টা। সেখানে রঞ্জি জয়ের জন্য ক্রিকেটারদের মনোনিবেশে সলতে পাকানোর কাজটা এই প্রাক্তন বাংলা ওপেনার বেশ ভাল রকমই করেছেন বলে খবর। যেখানে জেসি ওয়েন্স থেকে তেন্ডুলকর, মায় বাংলার দ্বিতীয় রঞ্জি ট্রফি জয়ের রাস্তায় বিভিন্ন জটিল-কুটিল অঙ্ক সমাধানের গল্পও হয়েছে। বাংলা কোচ বলছেন, “অরুণের মতো কঠিন মানসিকতার ক্রিকেটার খুব কম দেখেছি। তাই মনোবিদের বদলে ওকে ডেকেছিলাম।” আর বাংলা অধিনায়ককে পাশে নিয়ে অরুণলাল বললেন, “শট খেলা আর রান করা দুটো ভিন্ন প্রক্রিয়া। স্পিনিং ট্র্যাকে আড়া খেলতে নেই এটা মাথায় রেখেও মাঠে নেমে ভুল করে কেউ কেউ। এ রকম ছোটখাটো ভুল যেন গোটা মরসুমে না হয় সেটাই বললাম ছেলেদের।”
সামনে ইউসুফ পাঠানের বরোদা। কিন্তু এ বারের রঞ্জি অভিযান শুরুর সেই ম্যাচের আগে লক্ষ্মীরতন শুক্লর দলের গেমপ্ল্যানে কাঁটা কিন্তু বরুণদেব। বিপক্ষের ইরফান পাঠান, মুনাফরা নেই। তা সত্ত্বেও বিরক্তিই বেশি বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীর মুখে। শনিবার প্রায় সারাদিনই ইডেনের আউটফিল্ড জলের তলায়। ঢাকা রইল বাইশ গজও। মাঠে নামা হল না বাংলা-বরোদা দু’দলেরই। বেসরকারি ভাবে খবর, রবিবার প্রথম দিন খেলা হচ্ছে না। আর রবিবারও যদি বৃষ্টি না থামে তা হলে আদৌ খেলা হবে কি না তা নিয়েই ম্যাচের ভবিষ্যতের ওপর রয়েছে প্রশ্নচিহ্নও! লক্ষ্মী, ইউসুফ--দুই অধিনায়কই তাই বলছেন, “ব্যাপারটা হতাশার। তবে নিজেদের তৈরি রেখেছি আমরা।” লক্ষ্মীর দলে আবার মনোজ নেই। নেই সামিও। শেষ বার সাক্ষাতে বরোদাকে হারিয়েছিল বাংলা। এ বার? বাংলা অধিনায়ক বলছেন,“কে নেই তা মাথায় রাখছি না।”
বৃষ্টি থেমে খেলা হলে দুই ওপেনার অরিন্দম-রোহন। তিন থেকে সাতে আসবেন শুভময়, ঋদ্ধি, অনুষ্টুপ, সন্দীপন, লক্ষ্মী। বোলিং অ্যাটাকে সেই দুই প্লাস দুই থিওরি। স্পিনার ইরেশ, সৌরাশিস। পেস অ্যাটাক দিন্দা, শিবশঙ্করের হাতে। শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনায় খুব বড় পরিবর্তন না হলে এই দলই চূড়ান্ত।
বরোদা অধিনায়ক ইউসুফ পাঠানের বাজি আবার বাবাসফি খান। ইডেনেই রঞ্জি অভিষেক হচ্ছে এই বোলিং অলরাউন্ডারের। সঙ্গে পিনাল শাহ, রাকেশ সোলাঙ্কিদের অভিজ্ঞতা। ইউসুফ যদিও বলছেন, “ঘরের মাঠে এগিয়ে বাংলাই। তবে নাইটদের জার্সি গায়ে চার মরসুম খেলার সুবাদে পিচ, পরিবেশ সব চেনা। এটা কাজে দেবে।”
আবহাওয়া দফতর সূত্রে রাতের খবর, রবিবার দুপুরের পর বৃষ্টি ধরে আসবে। সোমবার শহরে ফের রোদ ঝলমলে পরিবেশ। অর্থাৎ দ্বিতীয় দিন বল গড়ালেও গড়াতে পারে। বর্তমান বাংলা কোচ জাতীয় নির্বাচক থাকার সময়েই আজহারের দলে ঢুকে পড়েছিলেন লক্ষ্মী। এ বার কি সেই লক্ষ্মী-অশোক জুটিই তৃতীয় বার রঞ্জি ট্রফি এনে দেবে। শুনে বাংলা অধিনায়ক দেখাচ্ছেন সেই বৃষ্টিকেই। বলছেন, “আগে বৃষ্টি থামতে দিন। দিল্লি তো বহুত দূর হ্যায়।” |