ব্যাটে সই নিলেন জাডেজা
লাহলির পাগলামির মাঝেও
অবসরের আগে সাধনায় অবিচল সচিন
দৃশ্য এক: কাঁধের ক্রিকেট কিটটা ঠিক কোথায় রাখবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। পারিপার্শ্বিক যে একটু ঘাবড়েও দিয়েছে, মুখভঙ্গি বলছে স্পষ্ট। বিস্ময়মিশ্রিত গলায় অস্ফুটে অজিঙ্ক রাহানেকে জিজ্ঞেসও করে ফেললেন, “এটাই ড্রেসিংরুম তো?” কী করা যাবে, দীর্ঘ চব্বিশ বছরের ক্রিকেটজীবনে এমন ড্রেসিংরুমে ঢোকা দূরের কথা, দুঃস্বপ্নেও কখনও ভেবেছেন কি না সন্দেহ! লকার বলে কিছু নেই, প্লেয়ার্স টয়লেটও ঠিক নয়। স্বল্পপরিসর অবিন্যস্ত ঘরের একদিকে দিব্য ফোটোশু্যট চলছে, অন্য দিকে গুটিগুটি ঢুকে পড়ছে মিডিয়া...ক্রিকেট ড্রেসিংরুম কম, পাড়ার ক্লাবের ক্যারম রুম বেশি!
দৃশ্য দুই: মোবাইলটা বেজে চলেছে অনবরত। ফোনটা নিয়ে ড্রেসিংরুমের বাইরে বেরোলেন ঠিকই, কিন্তু বিশেষ কথা বলা হল না। কী ভাবে হবে? চোখ ততক্ষণে আটকে গিয়েছে দেওয়ালে আঁকা তাঁর বিভিন্ন প্রতিকৃতিতে। হাতে ফোন ফোনের মতো ধরা রইল, উল্টে ক্রিকেট সংস্থার একজনকে চেপে ধরলেন, “যিনি এটা এঁকেছেন, তিনি কোথায়? একবার ডাকা যাবে?”
দৃশ্য তিন: ঘণ্টা তিনেক রগড়ানির পর লাঞ্চ করবেন বলে ঢুকেছিলেন, কিন্তু প্লেট হাতেও যে এত বেয়াড়া রকমের দাবিদাওয়ার মুখে পড়তে হতে পারে, সম্ভবত আন্দাজ পাননি। পিলপিল করে লাঞ্চরুমে ঢুকে পড়ছে কচিকাঁচার দল, হাতে ‘মিনিয়েচার’ ব্যাট এবং মহানায়কের কাছে বিনীত আব্দার, “স্যর, প্লিজ এখানে একটা অটোগ্রাফ...।” পুলিশ আছে। দাঁড়িয়ে দেখছে, কিন্তু কিছু করার নেই। খুদেদের পিতৃপরিচয় সাংঘাতিক। কেউ মন্ত্রী, কেউ বা আমলার ছেলে!

লাহলির নেটে সচিন।
সচিন রমেশ তেন্ডুলকর বোধহয় আজ পর্যন্ত এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়েননি। এবং শুধু মাত্র একজন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাবে কী ভাবে এক প্রত্যন্ত এলাকার দীর্ঘদিনের ‘বন্দিদশা’ কেটে যেতে পারে, সেটাও লাহলি-তে পা না দিলে বোঝা অসম্ভব।
লিটল মাস্টারের কাছে দেশবাসীর উত্তুঙ্গ আবেগ প্রত্যক্ষ করা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। আসমুদ্রহিমাচলে বহু দিন ধরে ওটা নিয়ম। কিন্তু হরিয়ানার এই ভূখণ্ডের আবেগের ধর্ম একটু হলেও বুঝি আলাদা। আজ পর্যন্ত এঁরা কেউ নিজ রাজ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখেননি। কেউ জানে না, স্টেডিয়ামে বসে ক্রিকেট-ঈশ্বরের বোলার-নিধন যজ্ঞ দেখার অনুভূতি ঠিক কী রকম হয়। তাই এঁরা কেউ তাঁর অবসর নিয়ে ভাবেন না, জানতে চান না বিদায়ী রঞ্জিতে তিনি আদৌ রান পাবেন, না পাবেন না।
লাহলি শুধু বোঝে, গতানুগতিক জীবনের বাইরে তাঁর উপস্থিতি ঘিরে রোমান্সের সন্ধানকে।
লাহলি শুধু বোঝে, সচিন তেন্ডুলকরের সাড়ে পাঁচ ফুটের অবয়বকে।
নইলে আর কমপ্লিমেন্টারি পাস না পেয়ে আম-আদমি অবুঝ বিক্ষোভে বসে পড়ে? হরিয়ানা পুলিশ কতর্ব্য চুলোয় পাঠিয়ে শুধু সচিনের প্র্যাকটিস দেখতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে? মহানায়কের গেস্ট হাউসের গেট বেয়ে সকাল আটটায় উঠে ঝুলতে শুরু করে শ’য়ে-শ’য়ে লোক?
খুব ঘটা করে হরিয়ানা ক্রিকেট সংস্থার কর্তারা জানিয়েছিলেন যে, সচিনের রঞ্জি ম্যাচের টিকিট বিক্রির রাস্তায় তাঁরা যেতে চান না, সাধারণের কথা ভেবে। কিন্তু টিকিটের বদলে আট হাজারের কমপ্লিমেন্টারি পাস নিয়ে যে এমন ঝামেলা লেগে যেতে পারে, বোঝেননি। পুলিশের সঙ্গে এক রাউন্ড, কর্তাদের সঙ্গে এক রাউন্ডসচিনের নেট প্র্যাকটিসের সময় ঢুকে পড়া জমায়েতের সোজাসাপ্টা দাবি, কমপ্লিমেন্টারি কত, জানার দরকার নেই। রবিবার থেকে মাঠে ঢোকার পারমিশন দিতে হবে! স্থানীয় এক মহিলা তো চ্যানেলে চ্যানেলে বলেও বেড়াচ্ছিলেন, অন্ধ সচিন-ভক্ত ছেলের জন্য একটা পাস জোগাড় করতে তাঁকে কতই না পুলিশি হেনস্থা সহ্য করতে হল। পুরোটা রেকর্ড হল কি হল না, মিডিয়ার ভিড় দৌড়োল হরিয়ানার কোচ কাম ক্যাপ্টেন অজয় জাডেজার দিকে। কী ব্যাপার, না জাডেজা ব্যাট পাঠিয়েছেন সচিনকে। উপহার নয়, ওই ব্যাটের উপর অটোগ্রাফের জন্য! জাডেজা যেটা নিজের কাছে স্মারক হিসেবে রেখে দিতে চান, ছেলে-মেয়েকে বলতে চান, “ভাবতে পারো, আমিও সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে খেলেছি!” উৎসবের আবহে কোথা থেকে আবার ডকুমেন্টারি ফিল্মের টিমও ঢুকে পড়েছে। সচিনের বিদায়বেলার যাবতীয় মুহূর্ত ধরে রাখতে হবে। মাঠ থেকে তাঁর মাঠের বাইরের গতিবিধি, হাই তোলা থেকে নাক চুলকোনোসব নাকি চাই। মুম্বই অধিনায়ক জাহির খানকেও দেখা গেল চতুর্দিকের পাগলামির চোটে ঘাবড়ে গিয়ে বলে গেলেন, “ম্যাচ আর কোথায়? এটা তো উৎসব চলছে।”

দেখা করলেন অজয় জাডেজা।
এ সবের মধ্যে আর অবসরকে স্মরণীয় করে রাখার প্রস্তুতি সম্ভব?
নামটা সচিন তেন্ডুলকর হলে, সম্ভব।
পুলিশের গুঁতোগুঁতি, খুদে বলবয়দের সুযোগ পেলেই কাছে ঘেঁষতে চাওয়া সব কিছু সামলে তিনি তো এক বার নয়, নেটে ঢুকলেন দু’বার। টানা দু’ঘণ্টা স্কোয়্যারের দিকে শট খেলার প্র্যাকটিস চালালেন, কখনও বা অফের বাইরে-বাইরে বল ফেলার নির্দেশ গেল, কখনও বেরোল তাঁর বিখ্যাত স্ট্রেট ড্রাইভ। জীবনের শেষ রঞ্জির প্রাক্-লগ্নে কেন, আগামী ১৮ নভেম্বরের আগে কোনও রকম কথাবার্তায় যেতে চান না সচিন। কিন্তু তিনি কিছু বলুন চাই না বলুন, লাহলির পেসার-সহায়ক সবুজ পিচে তাঁর সাফল্য পাওয়া মানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বিদায়ী টেস্ট সিরিজে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে আশাবাদ আরও বাড়বে। আর হরিয়ানার বিরুদ্ধে একটা পুরনো হিসেবও বাকি। ’৯১-’৯২-এ শেষ বার হরিয়ানার বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচে নেমেছিলেন তিনি। এবং নেমে সেই ফাইনালে হেরেছিলেন।
মাঠ ছাড়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তায় দেখা গেল, সচিন আজও সে সব ভোলেননি। মোটামুটি পুরোটাই কিন্তু মনে আছে!
সচিন তেন্ডুলকর
• প্রথম রঞ্জি ম্যাচ: ১০-১৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৮
• প্রতিপক্ষ: গুজরাত
• মাঠ: ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, মুম্বই
• রান প্রথম ইনিংস: ১০০ ন. আ., দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেননি।
• শেষ রঞ্জি ম্যাচ: ২৭-৩০ অক্টোবর, ২০১৩
• প্রতিপক্ষ: হরিয়ানা
• মাঠ: বংশীলাল স্টেডিয়াম, লাহলি

ছবি: পিটিআই।
পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.