আকাশভাঙা বর্ষণে কলকাতা বানভাসি। বন্যার ভ্রূকুটি বুদ্ধ সার্কিটেও।
সেবাস্তিয়ান ভেটেল বন্দনার বন্যা! ‘হাংরি হেইদি’তে সওয়ার পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির জার্মান রবিবাসরীয় রেসের পোল পোজিশন জিতে নেওয়ারই যা অপেক্ষা ছিল। খুলে গেল প্রশংসার সব লকগেট। আর অবাক করে দিয়ে সব থেকে উচ্চকিত হলেন যাঁরা, কাল তাঁরাই রেড বুলের রাজার সঙ্গে নামছেন গতির অসি-যুদ্ধে!
মার্সিডিজের লুইস হ্যামিল্টন আগেই ঘোষণা করেছিলেন, মরসুমের বাকি সব ক’টা রেস ভেটেলই জিতবেন বলে বাজি ধরতে রাজি তিনি। দু’কানে কড়ে আঙুলের মাপের হিরের দুল। চোখ দু’টোও প্রায় সমান উজ্জ্বল। সরকারি সাংবাদিক বৈঠকে এসে যোগ্যতাপর্বে তৃতীয় হওয়া প্রাক্তন ব্রিটিশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলে দিলেন, “সেবাস্তিয়ান কী করছে জানি না কিন্তু ওর গাড়ির গতি অবিশ্বাস্য।” হ্যামিল্টনের টিমমেট, যোগ্যতা অর্জনে দ্বিতীয় নিকো রোসবার্গ, ফেরারির ফের্নান্দো আলোন্সোপ্রত্যেকে বললেন আসল লড়াইটা দ্বিতীয় স্থানের। তাই ট্রফিতে এখনই ‘ভেটেলের হ্যাটট্রিক’ লিখে কালকের কাজ এগিয়ে রাখা ভাল।
একমাত্র সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ছেন না ভেটেলের টিমমেট, অস্ট্রেলীয় মার্ক ওয়েবার। যোগ্যতা পর্বে চতুর্থ ওয়েবার শান্ত গলায় বললেন, “দেখাই যাক না কী হয়। দু’টো রেস চলছে। একটা ট্র্যাকে। অন্যটা ট্র্যাকের বাইরে।”
ভেটেল অবশ্য বুদ্ধ সার্কিটকে এমনি এমনিই নিজের মনপসন্দ সার্কিটের শংসাপত্র দিলেন না। রেকর্ড বলছে, প্র্যাক্টিসই হোক, যোগ্যতাপর্ব বা রেস, বুদ্ধ সার্কিটে তিনি কখনও হারেননি।
তবে ‘অজেয়’ ভেটেলের বর্মেও যে ফাটল, সেটা ক’জন জানত?
এক খোঁচায় যা বের করে আনলেন রোজবার্গ। সাংবাদিক বৈঠকে ভেটেল সবে বলা শুরু করেছেন, “নিজেকে একাগ্র করে তুলতে হেডফোনে নানা সুর শুনলে আমার সেরাটা বেরিয়ে আসে,”-- খপ করে চেপে ধরলেন রোজবার্গ। “এই না গতবার বলেছিলে জাস্টিন বিবারের গান শোনো?” ভেটেলের পাল্টা এল, “সেটা তোমার আই পড ছিল। আমি গান নয়, বাজনা শুনি। তাই জাস্টিনের প্রশ্ন নেই।” টিনএজ হার্টথ্রব, কানাডার পপ তারকা আর ভেটেলকে নাকি হুবহু এক দেখতে বলে নেটচারিদের একটা জোরদার দাবি রয়েছে। আর জার্মান তারকার তুলনাটা এক্কেবারে না-পসন্দ। খোঁচা সে জন্যই।
এ দিকে বুদ্ধ সার্কিটে একটা নতুন শব্দজোট খুব চলছে‘ডিএনএ অব ফর্মুলা ওয়ান’। কেউ বলছেন গতি, কেউ বলছেন প্রযুক্তি, আবার কেউ বলছেন আসল ডিএনএ হল গাড়ির কানে তালা লাগানো শব্দ। পরের মরসুমে নতুন নিয়মকানুনের নতুন গাড়িতে যে শব্দের মাত্রা কমতে পারে। ভেটেল অবশ্য সটান বলে দিলেন, “আমি হয়তো সেকেলে। কিন্তু আমার মতে, ওই আওয়াজটাই আসল। ওটা না থাকলে আকর্ষণই হারিয়ে যাবে।”
এ সব আলোচনার মধ্যেই বুদ্ধ সার্কিটে হাজির এমন এক কিংবদন্তি, যাঁর জীবন নিয়ে তৈরি ‘রাশ’ ছবিটা গোটা পৃথিবীতে মেগাহিট! সেই অস্ট্রীয় ফর্মুলা ওয়ান চালক নিকি লডা অবশ্য মনে করছেন, ভেটেলের একাধিপত্ব খেলাটার মজা কাড়ছে। প্যাডকে হাঁটতে হাঁটতে বলছিলেন, “জেমস হান্টের সঙ্গে আমার গতির লড়াইয়ের গল্প বলেই সিনেমাটা লোককে এত টেনেছে। লড়াই না থাকলে রেসের মজাটা হারিয়ে যায়।”
নিকি এক তরুণের কাঁধে হাত রেখে ছবি তুললেন ফোর্স ইন্ডিয়ার টিম বিল্ডিংয়ের সামনে। যাঁকে “ফর্মুলা ওয়ানে ভারতের সবচেয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা” বলে আলাপ করিয়ে দিলেন বিজয় মাল্য। ফোর্স ইন্ডিয়া চালক ট্রেনিং স্কুলের ছাত্র জেহান দারুওয়ালা প্রথম ভারতীয় হিসাবে ব্রিটিশ কেএফ৩ কার্টিং চ্যাম্পিয়ন হয়ে সাড়া ফেলেছেন। তাঁর মধ্যে ভারতের সফল ফর্মুলা ওয়ান চালককে দেখছেন মাল্য। তাঁর দলের বর্তমান চালকেরা অবশ্য যোগ্যতা পর্বে বারো আর তেরো হয়ে ‘ঘরের’ রেসেও চাপে থাকলেন।
কুয়াশার কারণে এ দিন সকালের প্রাক্টিস শুরু হতে মিনিট কুড়ি দেরি হল। জে পি গোষ্ঠী অবশ্য তাতে খুব একটা চিন্তিত নয়। বরং এই ম্যাড়ম্যাড়ে বাজারেও রবিবারের প্রায় ষাট হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে কিছুটা খুশিখুশি ভাবই আছে। আজ প্র্যাক্টিস আর কোয়ালিফিকেশন দেখতে দিনের টিকিট কেটে ঢুকতে দেখা গেল বেশ অনেককেই। কালও রেসের জন্য ভিড় বাড়তে পারে বসে একটা আশা কাজ করছে। অন্য দিকে, অনিল কপূর, অজয় দেবগন আর জন অ্যাব্রাহামের আসার সম্ভাবনা জোরদার হওয়ায় আগের বারের তুলনায় এ বার বলিউডের উপস্থিতি জোরদার হবে বলেই মনে করছেন কর্তারা। সকাল থেকে চলেছে ঢোল আর ভাংড়াও।
সব মিলিয়ে গত দু’দিনের বিবর্ণ মেজাজে শনিবার যেন কিছুটা রঙের ছটা। যেটা ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছে। |