দীপাবলির অনেক আগেই আলো জ্বলল ইস্টবেঙ্গলে

ইস্টবেঙ্গল: ২ (রবিন আত্মঘাতী, মোগা)
বেঙ্গালুরু এফ সি: ০
ই লিগের ডেম্পো ম্যাচ এবং এ এফ সি কাপের যুবভারতীর সেমিফাইনাল। বেঙ্গালুরু টিমের ভিডিও অ্যানালিস্ট অলউইন লোরেন্স ইস্টবেঙ্গলের দু’টো ম্যাচের সিডি দেখে নিদান দিয়েছিলেন—
এক) জিততে হলে লালরিন্দিকার দূর থেকে নেওয়া শট আর কর্নারগুলো আটকাতে হবে।
দুই) মোগা-চিডি ফর্মে না থাকলেও ওরা যেন বক্সের আশেপাশে গোলমুখ খোলা না পায়।
কল্যাণীতে শনিবার লাল-হলুদ জার্সির অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার ম্যাচের চুরানব্বই মিনিট অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে রাখলে চৌম্বকে যে সত্যটা প্রকট হচ্ছে তা হল, বেঙ্গালুরুর ভিডিও অ্যানালিস্টের নিরীক্ষণে কোনও ভুল ছিল না।
কিন্তু ভুলটা লিগ শীর্ষে থাকা দলটা করে ফেলল বাড়ি থেকে কলকাতায় আসার কিট গোছানোর সময়ই। শন রুনি বা সুনীল ছেত্রীরা যে বৃষ্টি মাঠের জন্য লম্বা স্টাডের চেঞ্জারই ঢোকাননি ব্যাগে। তাঁদের ধারণাই ছিল না, অক্টোবরের শেষেও আকাশভাঙা বৃষ্টিতে ভাসবে বাংলা। মাঠও এমন কাদা ভর্তি হয়ে যাবে। ভারী মাঠে শরীরের ভারসাম্য রাখতে এত অসুবিধা হবে। আর এই ভুলের জন্যই আই লিগের শুরুতে অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো দৌড়তে থাকা অ্যাশলি ওয়েস্টউডের টিমটা মুখ থুবড়ে পড়ল এখানে এসে। ঘরের মাঠে কৃত্রিম টার্ফে পাঁচ ম্যাচ খেলে এসেছিল বেঙ্গালুরু। প্রথম বার ঘাসের মাঠও তাদের সমস্যায় ফেলল। নিট ফল, নিজেদের স্বাভাবিক পাসিং ফুটবলাটাই খেলতে পারল না ফেডারেশনের ফ্রাঞ্চাইজি টিমটা। যুদ্ধে নামার আগে কিছু অস্ত্র যদি মাঠের বাইরেই হারাতে হয়, তা হলে যা হয়।
মার্কোস ফালোপা বনাম অ্যাশলি ওয়েস্টউড। ব্রাজিল বনাম ইংল্যান্ড। ম্যাচের আগে মনে হয়েছিল, ট্যাকটিক্সের ঝনঝনানিতে হাইভোল্টেজ ম্যাচটা আগুনে হবে। রাতে এল ক্লাসিকোর ঝলকানি দেখতে বসার আগে, সামান্য হলেও স্কিল, পাসিং, সেট পিস মুভমেন্টের রং মশালে আনন্দের ঢেউ উঠবে লাল-হলুদ গ্যালারিতে। বলতে দ্বিধা নেই, সেটা পূরণ হয়নি। প্রেস বক্সে বসে থাকা জাতীয় কোচ উইম কোভারম্যান্সকে অন্তত একবারের জন্যও উচ্ছ্বসিত হতে দেখা যায়নি।

অভিমান ভুলে মোগা ফের ভক্তদের মাঝে। কল্যাণীতে শনিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ম্যাচটা অবশ্য দুই বিদেশি কোচই জিততে চেয়েছিলেন। দু’ভাবে। বেঙ্গালুরু কোচের অস্ত্র ছিল, ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দুই সাপোর্টিং স্ট্রাইকারের এরিয়াল বল তোলা। সুনীল বা বিকোখোই যা তুলতেই পারলেন না। ফলে পাঁচ ম্যাচে চার গোল করা পজিটিভ স্ট্রাইকার রুনিও কানা হয়ে গেলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও অন্তত তিনটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল লিগ শীর্ষে থাকা দলটা। লাল-হলুদ কিপার অভিজিৎ মণ্ডলই বাঁচালেন দু’টো। আর লালরিন্দিকার সোয়াভির্ং কর্নার হেড করে নিজের গোলে ঢোকানোর দু’মিনিট পরই প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পেয়েছিলেন রবিন। বাধা হয়ে দাঁড়াল পোস্ট।
ফালোপার স্ট্র্যাটেজিতে কোনও নতুনত্ব ছিল না। জোড়া হারের কাঁটায় বিধ্বস্ত ব্রাজিলীয় কোচের ভাবনায় ছিল, নিজের গোল বাঁচিয়ে জেতার জন্য ঝাঁপাও। ট্রেভর মগ্যার্ন জামানায় যে টিমটা খেলত ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে তারা ফিরে গিয়েছে সাবেক ৪-৪-২ তে। দলে পেনের মতো এমন কোনও পিভট-ই নেই যিনি দুই স্ট্রাইকারের পিছনে ফ্রি খেলবেন। পেন্ডুলামের মতো দুলতে দুলতে বিপক্ষের ডিফেন্সে ফাঁক-ফোকর তৈরি করবেন। পাস বাড়াবেন। যিনি এই কাজটি করতে পারতেন সেই সুয়োকা তো চোটে চোটে বিধ্বস্ত। কবে ফিরবেন কেউ জানে না।
পাঁচ নিয়মিত ফুটবলার টিমে নেই কার্ড বা চোটের জন্য। ফলে ফালোপা সতর্ক হবেন স্বাভাবিক। তিনি তিনটে চাল দিলেন। এক) বেঙ্গালুরুর পিভট বা প্রধান পাসার লাইবেরিয়ান জনের পিছনে লাগিয়ে দিলেন মেহতাবকে। দুই) স্টপার হয়েও তিন গোল করা জনসনের সঙ্গে টক্কর দিতে পাঠালেন দলের সবথেকে লম্বা মোগাকে। তিন) রুনির জন্য রাখলেন জোনাল মার্কিং। ফালোপার চিন্তা অবশ্য কমিয়ে দিলেন অনিয়মিত দুই স্টপার গুরবিন্দার ও রাজু। নিখুঁত ফুটবল খেলে। ওপারা-অর্ণব জুটির চেয়ে ওদের অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে হল এ দিন। কিন্তু চিডি-মোগা জুটি যে ডোবালেন! ইনজুরি টাইমে মোগা কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে গোল পেলেন বটে, কিন্তু পুরো ম্যাচে লাল-হলুদের দুই বিদেশি স্ট্রাইকারকে দেখে পুরো ফিট মনে হয়নি। ফালোপা অবশ্য ম্যাচের পর বললেন, “দু’জনেই আস্তে আস্তে ফর্মে ফিরছে। টিমও বেশ ভাল খেলেছে আজ। আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে আমরা ফোকাস করতে শুরু করেছি।”
দেশের এক নম্বর ব্যালান্সড টিম নিয়ে ফালোপা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে ফোকাস করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লিগের তিন নম্বর ম্যাচে তাঁর টিমকে দেখার পর মনে হল, দীপাবলির ছয় দিন আগে ইস্টবেঙ্গলে আলো জ্বললেও তা চাইনিজ টুনির-হাজার হাজার ওয়াটের নিয়ন আলো নয়।

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, অভিষেক (নওবা), গুরবিন্দার, রাজু, রবার্ট, লালরিন্দিকা (বলজিৎ), মেহতাব, খাবরা (জোয়াকিম), লোবো, মোগা, চিডি।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.