|
|
|
|
নীতীশ-রাজ্যে আজ মোদীর হুঙ্কার সভা |
স্বপন সরকার • পটনা |
বিজেপি-কে দিল্লির তখতে বসানোর স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াচ্ছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। উত্তরপ্রদেশ রাজস্থানের পর এ বার তাঁর লক্ষ্য গোবলয়ের আর এক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য, বিহার। বিজেপি-র ‘হুঙ্কার র্যালি’-তে যোগ দিতে সাড়ে তিন বছর পর, আগামী কাল পটনায় পা রাখবেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। কাল দিল্লি দখল নয়, নীতীশের মোকাবিলায় মোদী কী বলেন, তা শোনার অপেক্ষায় এখন গাঁধী ময়দান। এবং গোটা দেশও।
জেডিইউ-এর শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, মোদীর ‘হুঙ্কার’ নীতীশের পক্ষে শাপে বরই হবে। বিহারে বিজেপি-কে ঠেকাতেই সংখ্যালঘু ভোট জোটবদ্ধ হয়ে নীতীশের পাশে দাঁড়াবে। তবে মোদীর এই সভা নিয়ে কিছুটা চিন্তায় পড়েছে কংগ্রেস। আগামী কাল দিল্লিতে রাহুল গাঁধীর সভা রয়েছে, মোদীর ওই সভার ঠিক আগেই। ফলে রাহুলের বক্তব্যের জবাব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবেন মোদী। সে ক্ষেত্রে দিনের শেষে মোদীর বক্তব্যই প্রচারমাধ্যমগুলিতে বেশি গুরুত্ব পেয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তা ছাড়া, উত্তরপ্রদেশে যেমন সমাজবাদী পার্টি এবং বিজেপি-র মধ্যে ভোটের মেরুকরণে কংগ্রেসের কোনও লাভ নেই, তেমনই বিহারে বিজেপি এবং জেডিইউ-এর টক্করে ভোট মেরুকরণ হলে, তাতেও ফায়দা পাবে না কংগ্রেস। কারণ, নীতীশ শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন কি না, সেটা এখনও অনিশ্চিত। |
|
পটনায় নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলে নমো টি স্টল। উদ্বোধন করছেন সুশীল মোদী, শাহনওয়াজ হুসেনরা।
তাদের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী যে এক সময় গুজরাতের এক অখ্যাত স্টেশনে চা বিক্রি করতেন,
সেই কষ্ট-কাহিনিই প্রচারে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। ছবি: পি টি আই। |
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস আজ আগাম সমালোচনায় নেমেছে বিজেপি-র এই সমাবেশের। সলমন খুরশিদের বক্তব্য, ভারতে গণতন্ত্র এখন অনেক পরিণত। কোনও সভার নাম ‘হুঙ্কার’ রাখাটা গণতান্ত্রিক শিষ্টতার পরিচয় নয়। রাজনীতিতে এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করাই উচিত নয়।
বিজেপি-র কাছে এই হুঙ্কার র্যালি গুরুত্ব আর পাঁচটা সমাবেশের থেকে আলাদা। শেষ বার ২০১০-র জুনে বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে এসে এই গাঁধী ময়দানেই শেষ বার ভাষণ দিয়েছিলেন মোদী। তখন তিনি কেবল গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে নর্মদা-যমুনা-গঙ্গায় জল গড়িয়েছে অনেক। বদল হয়েছে রাজনীতির সমীকরণে। এনডিএ-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন নীতীশ। বিহারে বিজেপি এখন বিরোধী আসনে। আর এই মোদী-নীতীশ দ্বন্দ্বের জেরে নীতীশের সঙ্গে বিজেপি-র সাপে-নেউলে সম্পর্ক। রাজনীতির এই চরম তিক্ত পরিবেশে মোদী আসছেন পটনায়। তবে বিজেপি নেতারাই মানছেন, মোদীর কাছে এমন কোনও মন্ত্র নেই যার বলে আমূল বদলে যাবে বিহারের রাজনীতি। বিজেপি-জেডিইউ জোট ছিন্ন হওয়ার পর দুই দলের ভোট ভাগাভাগি হবে। এর উপরে রাজ্যের ১৪.৭ শতাংশ মুসলিম ভোটের একটা অংশ আছে নীতীশের পক্ষে। বাকিরা থাকছে লালুপ্রসাদের দল আরজেডি-র সঙ্গে। লালু জেলে। তাঁর স্ত্রী রাবড়ী
দেবীর বক্তব্য, মোদীর সভা রুখে দেওয়া উচিত ছিল নীতীশের। কিন্তু আগের মতো মোদীর বিহার-প্রবেশ রোখার রাজনৈতিক ক্ষমতাটা এখন হাতে নেই নীতীশের।
বিজেপি মোদীকে জাতীয় স্তরে তুলে আনছে দেখেই হুমকি দিতে শুরু করেছিলেন নীতীশ। পরে মোদীর সেই উত্থানপর্বে তাঁর শেষ পটনা সফরকে কেন্দ্র করে কম জল ঘোলা হয়নি ২০১০-এ। লালকৃষ্ণ আডবাণী, নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করে দেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। এর পর গত সাড়ে তিন বছর বিহারে মোদীর উপর কার্যত নিষেধাজ্ঞাই জারি করে রেখেছিলেন নীতীশ। গত বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁকে এ রাজ্যে সভা করার অনুমতি দেননি তিনি। এনডিএ জোটের খাতিরে বিজেপি নেতৃত্ব তখন নীতীশের সেই শর্তও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য। নীতীশের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে তুলে ধরতে রাজ্যের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলের তাবড় নেতা। হুঙ্কার র্যালির প্রস্তুতি সারা। বিহারের মানুষের আবেগ উস্কে দিতে মোদীর প্রথম জীবনে চা বিক্রি করার কষ্ট-কাহিনিও প্রচার করছেন নেতারা। তবে এ রাজ্যে নীতীশই যে তাঁদের প্রধান নিশানা তা বোঝাতে গিয়ে বিহারের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান বলছেন, “আমাদের লক্ষ্য, নীতীশের বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দেওয়া। এর পরে আছে নতুন চিন্তা, নতুন আশা এবং সমৃদ্ধ বিহার, সমৃদ্ধ ভারত গড়া।” এই পরিস্থিতিতে কালকের সভায় মোদী কী বলেন তার দিকে
তাকিয়ে আছেন রাজ্যের মানুষ। কী ভাবে তিনি নীতীশের মোকাবিলা করেন, তা দেখার জন্যও অপার কৌতূহল গোটা দেশেও।
|
পুরনো খবর: মোদীর বিহার সফরে এ বার গাড়ি বিতর্ক |
|
|
|
|
|