আর নয় নেতার আশ্বাস, বেড়া তুলে বাগি চম্বল
ক সময়ে অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বন্দুক হাতে নেওয়ার কথা শোনা যেত চম্বলের বেহড়ে। ‘ডাকাইত’-এর বদলে তাঁদের ‘বাগি’, মানে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবেই চিনতেন গোটা দেশের মানুষ। এখন প্রতিবাদ জানাতে অন্য পথ ধরেছেন সেই চম্বল ডিভিশনের বাসিন্দারাই। বন্দুক নয়, তাঁদের প্রতিবাদের অস্ত্র এখন বেড়া।
সামনেই মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোট। কিন্তু এই এলাকার বাসিন্দাদের সাফ কথা, কথা রাখেননি কোনও নেতা। ঝুড়ি-ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন ভোটের আগে। তা পালন করেননি। তাঁদের তাই আর প্রচার করতে আসার প্রয়োজন নেই। সেই অধিকারও নেই তাঁদের। নতুন করে নেতাদের কেউ যাতে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াতে না আসতে পারেন, তার জন্য বেড়া তুলে দিয়েছে অনেক গ্রাম। ভিতরওয়ার, গোহাদ, পোহারি ও আতেরের মতো বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের গোটা এলাকা জুড়েই বেড়া তোলা হয়েছে। ভিতরে প্রবেশ নিষেধ নেতাদের।
শাজাপুর জেলায় নেপানিয়া হিসামুদ্দিন গ্রামের বাসিন্দারাও ভোট বয়কট করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের অফিসাররা জানাচ্ছেন, ওই এলাকাগুলিতে রাস্তা তৈরি থেকে শুরু করে ও অন্য নানা পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি একেবারেই পূরণ করা হয়নি। গত দেড় দশকে রাস্তা তৈরির কাজে হাতই পড়েনি। কেবল ভোটের আগেই রাস্তা তৈরির কথা মনে পড়ে নেতাদের। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তার পর বঞ্চনার পুনরাবৃত্তি।
এই রকম বঞ্চনার প্রতিবাদে ভোট বয়কট অবশ্য এ দেশে নতুন কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গেও মাঝে মাঝে এই ধরনের ঘটনা দেখা গিয়েছে। কিন্তু ভোটের আগে চম্বল ডিভিশনে এ ভাবে কার্যত সংগঠিত ভাবে প্রচার রোধের চেষ্টা ভারতীয় গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের পক্ষে যথেষ্ট আশঙ্কাজনক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলি।
চম্বলের এই আন্দোলনের পিছনে কোনও রাজনৈতিক দলের মদত নেই। বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের সব দলের প্রতি বিরূপ মনোভাবের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ বলেই মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, মূল ধারার রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ওই এলাকার নাগরিক সমাজের বয়কট। রাজ্যের শাসক দল বিজেপি ও বিরোধী কংগ্রেস-উভয় পক্ষের কাছেই এটা অশনি সঙ্কেত।
মধ্যপ্রদেশের ওই অঞ্চলে এখনও মাওবাদীদের প্রভাব নেই। কিন্তু, গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি এই বিরাগ থেকেই যে মাওবাদীদের মতো শক্তি অক্সিজেন পায় তা মেনে নিচ্ছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি। তবে কেবল মধ্যপ্রদেশ সরকারকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করতে রাজি নন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কেন্দ্রের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতির সমস্যায় এখন জেরবার দেশের মানুষ। এই ধরনের বিরাগ সামলাতে কেন্দ্র, রাজ্য, কংগ্রেস, বিজেপি সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
তবে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ অবশ্য সব দায় চাপাচ্ছেন রাজ্যের বিজেপি সরকারের উপরেই। তাঁর বক্তব্য, “আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন তো এমন অসন্তোষ দেখিনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শিবরাজ সিংহ চৌহানকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।”
নেতারা যা-ই বলুন, তাতে চম্বলের বাসিন্দাদের কিছু আসে যায় কি? আবার কি তাঁদের ‘বাগি’ হতে বাধ্য করবে গণতান্ত্রিক ভারত? প্রশ্নটা সারা দেশের সামনেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.