গত কয়েক মাসের অক্লান্ত বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছিল জেলার বেশ কিছু জায়গা। ডুবে ছিল নলকূপ, কুয়ো, পুকুরগুলোও। এখন জল সরে গেলেও জলবাহিত রোগের আশঙ্কা রয়েই গিয়েছে।
বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত জেলার ৩১টি ব্লকে পেটের অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার। রোগের বেশিরভাগই জলবাহিত। এর মধ্যে ৩ শিশু ও এক মহিলা-সহ ১৪ জনের মৃত্যুও হয়েছে। জলবাহিত রোগের শিকার হয়ে জেলায় প্রথম মৃত্যু হয় জুন মাসে। শেষ ঘটনা দুর্গাপুজোর পঞ্চমীতে।
জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ ২ দীপায়ন হালদার জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে ২ জনের বাড়ি জেলার বাইরে। এক জন বীরভূম ও এক জন ঝাড়খণ্ড থেকে পুরুলিয়াতে ধান কাটার কাজে এসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। দু’জনকেই প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মারা যান তাঁরা। বাকি মৃতদের মধ্যে মন্তেশ্বর ব্লকের ২ জন ও মেমারি ব্লকের ২ জন রয়েছেন। এছাড়া বর্ধমান ২, ভাতার, কাটোয়া ১, কেতুগ্রাম ১, পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লক থেকেও এক জন করে মারা গিয়েছেন। রায়না, পানাগড় ও খণ্ডঘোষ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মৃত্যু হয়েছে আরও তিন জনের। প্রতিটি মৃত্যুর মেডিক্যাল অডিটও করানো হয়েছে। ডেপুটি সিএমওএইচ জানিয়েছেন, মেডিক্যাল অডিট করাতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ব্লক হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই রোগীদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া রোগীর শরীরে সৃষ্ট জলের অভাব দূর করতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অডিটে জানানো হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্তের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এক দফা বৈঠক করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সুপার আশ্বাস দিয়েছেন, ওই ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে এবং ভবিষ্যতে হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে যাতে রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয় সে দিকে নজর দেওয়া হবে।
তবে জলবাহিত রোগে মৃতের সংখ্যা কম হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়ায় চিন্তিত জেলা স্বাস্থ্য দফতর। দীপায়নবাবু বলেন, “জেলার প্রতিটি ব্লকেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। বিশেষত কালনা, কাটোয়া ও বর্ধমান সদর মহকুমায়। খণ্ডঘোষ, রায়না ও কাঁকসা ব্লকেও একাধিকবার রোগের প্রার্দুভাব দেখা গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, ৩২-৩৩ টি ঘটনার মধ্যে ২৬-২৭টিই দূষিত জল পান করার ফলে হয়েছে।” তিনি আরও জানান, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, পুকুর তো বটেই, জেলার কিছু সজলধারা প্রকল্প ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সরবরাহ করা পানীয় জলেও ইকোলাই সংক্রমণ মিলেছে। ওই জল পান না করতে এলাকাবাসীকে সচেতন করা হয়েছে। সরকারকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। |