বিদ্যুতের সমস্যায় ভুগছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের গোসাবা ব্লক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ সময়েই লোডশেডিং বা লো ভোল্টেজে ভুগছেন তাঁরা। তবে সব থেকে বেশি ভুগছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। অ্যান্টি ভেনাম বা বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধ বিদ্যুৎ না থাকায় সংরক্ষণ করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সাপে কাটার রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে মৃত্যু হচ্ছে বেশিরভাগ রোগীরই।
আগে গোসাবা ব্লক এলাকায় গ্যাসিফায়ার সমবায়ের মাধ্যমে ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হত। ব্লকে দিনে বারো ঘণ্টা তা সরবরাহও করা হত। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল গোসাবায় গ্রিডের বিদ্যুৎ আসে। বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত গ্রিডের বিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করে ধীরে ধীরে গোসাবার বিভিন্ন দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। আশা তৈরি হয় এলাকাবাসীর মনে।
কিন্তু কার্যত দেখা যায়, ভাল পরিষেবা তো দূরের কথা, সারা দিনের অধিকাংশ সময়েই লোডশেডিং থাকছে ব্লকে। বাসিন্দা বিকাশ দেবনাথ বলেন, “গ্রিডের বিদ্যুৎ আসার পরে আমরা ভেবেছিলাম, এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ভাল হবে। কিন্তু তাতো হয়ইনি। এখন দেখছি বিদ্যুৎ থেকেও নেই।” এ নিয়ে ক্যানিং মহকুমার বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়র সিদ্ধেশ্বর মণ্ডল বলেন, “গোসাবা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে বানতলা থেকে যেহেতু ব্লকের বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে, তাই বেশিরভাগ সময়েই লো ভোল্টেজ হয়ে থাকছে। বাসন্তী বা সোনাখালিতে যদি ১ লক্ষ ৩২ কেভির একটি সাবস্টেশন হয়, তবে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।” কিন্তু বিদ্যুৎ সমস্যার আশু সমাধানের পথ দেখাতে পারছেন না কেউই।
আর এ দিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিষেবায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে। গোসাবা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জেনারেটর চালিয়ে বিষ কাটানোর মতো জীবনদায়ী ওষুধ, প্রতিষেধক, টীকা ফ্রিজ করে রাখতে হচ্ছে। অন্য দিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় ওই ব্লকের ছোট মোল্লাখালি, রাধানগর, তারানগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জীবনদায়ী টীকা, প্রতিষেধক রাখাই হচ্ছে না। সরকারি বিভিন্ন টীকাদান কর্মসূচীতে আইস ব্যাগে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে প্রতিষেধক। গোসাবা ব্লক স্বাস্থ্য সূত্রে খবর, সরকারি ভাবে মাসে ২৪ লিটার ডিজেল পাওয়া যায়। এই তেলে বেশিরভাগ সময়ে জেনারেটর চালানো কার্যত অসম্ভব। আর এমনিতেই সুন্দরবন এলাকায় প্রায়ই সাপে কাটার মতো ঘটনা ঘটে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত একমাসে ব্লকে ২৬টি সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, সাপে কাটা রোগীদের ছোট মোল্লাখালি, তারানগর, রাধানগর ইত্যাদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নিয়ে যাওয়া হলে ‘অ্যান্টি ভেনাম’ না থাকায় তাদের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। অত দূর থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ে পথেই মারা যাচ্ছেন বেশিরভাগ রোগী।
সমস্যায় পড়ছেন ওষুধের দোকানিরাও। গোসাবার ওষুধ বিক্রেতা দেবরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “বিদ্যুতের কারণে হাসপাতালগুলিতে অসুবিধা তো হচ্ছেই। আমরাও দোকানে অনেক জীবনদায়ী ওষুধ, প্রতিষেধক, ইঞ্জেকশন ফ্রিজ করে রাখতে পারছি না।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার বলেন, “বিদ্যুতের কারণে ওষুধ রাখার সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। তার মধ্যেই আমরা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেছি।”
গোসাবার বিডিও সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপাতত জেনারেটর বা সৌর বিদ্যুতের মধ্যে দিয়ে হাসপাতালগুলিতে আলো জ্বালানো বা ওষুধ ফ্রিজ করা যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।” জেলা পরিষদের বিদ্যুতের কর্মাধ্যক্ষ অরবিন্দ প্রামাণিক বলেন, “আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করছি, যাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়।”
তবে আশু সমাধানের পথ দেখাতে পারছেন না কেউই।
ডিসিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, “গোসাবায় একটা সাবস্টেশন করার কথা চলছে। শীঘ্র সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে এই মুহূর্তে ওই দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কিছু সমস্যা রয়েছে। সেখানে অন্য কোনও উপায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে।” |