পলিসিস্টিক ওভারি নিয়ে ত্রাস নয়, জোর সতর্কতায়
ছর পনেরোর মেয়েটি দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছিল। গোটা মুখে ব্রণ। ঠোঁটের উপরে গোঁফের রেখার মতো লোম। মাথা থেকে চুল উঠছিল গোছা গোছা। ঋতুস্রাবেও গণ্ডগোল।
বাড়ির লোক ভেবেছিলেন, বয়ঃসন্ধির ব্যাপার। গোড়ায় তাই বিশেষ গুরুত্ব দেননি। কিন্তু টানা এই পরিস্থিতি চলতে থাকায় শেষমেশ মেয়েকে নিয়ে তাঁরা ডাক্তারের কাছে গেলেন। আলট্রাসোনোগ্রাফি করে জানা গেল, ওই কিশোরীর পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম রয়েছে। সেটা কী?
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এটা কোনও রোগ নয়। বরং শরীরের একটা অবস্থা বলা যেতে পারে। অনেকের ডিম্বাশয়ে এত বেশি ডিম থাকে, যা বেরোতে পারে না। সেই ডিমের ঘরগুলোকে সিস্টের মতো দেখায়, যদিও আসলে সেগুলি সিস্ট নয়। একে বলে পলিসিস্টিক ওভারি। যা ধরা পড়ে আলট্রাসোনোগ্রাফি ও কিছু রক্ত-পরীক্ষায়। আর ডিম্বাশয়ের এই অবস্থার দরুণ যে সব শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়, তা হল পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পলিসিস্টিক ওভারির চেহারাটা অনেকটা মুক্তোমালার মতো। এতে মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য ঘটে। সে কারণেই অন্যান্য নানা উপসর্গের সঙ্গে শরীরের নানা অংশে অবাঞ্ছিত রোম গজিয়ে ওঠে।
আলোচনাচক্রে এক বক্তা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
এবং সমস্যাটা এখন বেশ প্রকট। সাধারণত ১৩ থেকে ৩৫ বছরের মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। তবে পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে সন্তান হবে না, এমন ভাবার কারণ নেই। ওঁদের মধ্যে যে ৩০% মহিলার সন্তানধারণে কিছু অসুবিধে থাকে, সঠিক চিকিৎসায় তা দূর করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বার করা হয়। কারও কারও ল্যাপারোস্কোপি করে ডিম্বাণু বার করতে হয়। খুব সামান্য ক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপের চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে।
কিন্তু সবার আগে যেটা দরকার, সেটা হল ঠিকঠাক সময়ে সমস্যাটা ধরা পড়া। বৃহস্পতিবার কলকাতায় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম সংক্রান্ত এক সেমিনারে এই বিষয়টিই প্রাধান্য পেল। আলোচিত হল সমস্যা নির্ণয় ও তা জয় করার নানা পন্থা। কলকাতার এক বন্ধ্যত্ব চিকিৎসাকেন্দ্র আয়োজিত ওই আলোচনাচক্রে চিকিৎসকরা জানালেন, পলিসিস্টিক ওভারিতে মোটা হওয়ার ভয় থাকে। কারণ, যে জিন থেকে ডায়াবিটিস হয়, পলিসিস্টিক ওভারির পিছনে তারই ভূমিকা। পরিবারে কারও ডায়াবিটিস থাকলে তাই পলিসিস্টিক ওভারির বাড়তি আশঙ্কা। তাই ওই সব বাড়ির মেয়েদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচনাচক্রের আয়োজক তথা স্ত্রীরোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর বলেন, “পলিসিস্টিক ওভারি এড়াতে গেলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন খুব জরুরি। আমি তো এখনকার মা-বাবাদেরই বেশি দায়ী করব। তাঁরা সন্তানদের এমন ভাবে বড় করছেন, যাতে তাদের শারীরিক কোনও পরিশ্রম হচ্ছে না। কথায় কথায় সামনে এসে হাজির হচ্ছে ফাস্ট ফুড। ফলে মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, তার পিরিয়ডের হাজারো সমস্যা। ওজন বাড়ছে হু হু করে।”
ডিম্বাশয়ে মুক্তোমালা
উপসর্গ প্রতিরোধ
• অনিয়মিত ঋতুস্রাব
• মুখ জুড়ে ব্রণ
• চুল পড়ে যাওয়া
• অবাঞ্ছিত রোম
• নিয়মিত শরীরচর্চা
• ফল, সব্জি বেশি
• ভাত-আলু-মিষ্টি কম
• ফাস্ট ফুড একদম নয়
এ দিকে পলিসিস্টিক ওভারিতে মেয়েদের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে ওঠে বলে মুখে ব্রণ বাড়ে। তাই গোড়ায় অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে চমর্রোগের ডাক্তারের কাছে চলে যান। বুঝতে পারেন না যে, সঙ্কটের শিকড় অন্য জায়গায়। এ সবের দরুণ আসল চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মুখে ব্রণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে পড়ে, তা হলে কালবিলম্ব না-করে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়াই ভাল। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের শিক্ষক রীণা অগ্রবাল বলেন, “পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসা শুধু সন্তানধারণের জন্য, এমনটা মনে করা ভুল। জন্মদানের পরেও পলিসিস্টিক ওভারি হতে পারে। আর বছরের পর বছর তা বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখলে বেশি বয়সে জরায়ুর ক্যানসার হতে পারে।”
তবে প্রথমেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গাইনিরা একবাক্যে তা-ই বলছেন। এঁদের পরামর্শ, লাইফস্টাইল খানিকটা বদলে ফেললে মুশকিলের অর্ধেক আসান হয়ে যাবে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “পলিসিস্টিক ওভারি আর ওভারিয়ান সিস্ট কিন্তু এক নয়।
তাই অহেতুক ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ঠিক সময়ে চিকিৎসা না-করালে পরে শুধু সন্তানধারণ নয়, অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে।”
অর্থাৎ আতঙ্ক যেমন অহেতুক, তেমন হেলাফেলাও বিপজ্জনক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.