‘আবার হবে তো দেখা...শেষ দেখা নয় তো’ সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র জনপ্রিয় গানের এই কথাগুলি তাঁর নিজের জীবনে আর বাস্তব রূপ পায়নি বলে আজও দীর্ঘশ্বাস পড়ে রণজিৎ চন্দের।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর রেটপাড়ার বাসিন্দা সত্তর বছরের রণজিৎবাবু এক সময় পেশাদার আলোকচিত্রী ছিলেন। বললেন, ‘‘সে বছর ৩০-৪০ আগের কথা। তখন বনগাঁয় প্রতিবছর জলসা হত। নামীদামি শিল্পীরা আলো করে থাকতেন সেখানে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, নির্মলা মিশ্র, কাজী সব্যসাচী কে ছিলেন না সেই তালিকায়!” |
সকলেই কোনও না কোনও সময় রণজিৎবাবুর ফ্রেমবন্দি হয়েছেন। সদ্য প্রয়াত গায়কের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রণজিৎবাবু বলেন, “সেটা ১৯৭৪ সাল। মাসটা ছিল ফেব্রুয়ারি। বনগাঁ খেলাঘর ময়দানে গাইতে এসেছিলেন মান্না দে। মনে আছে, পরেছিলেন সাদা ফুলশার্ট ও বাদামী প্যান্ট। মাথায় ছিল টুপি। গান শুরুর আগে গ্রীনরুমে ওঁর সঙ্গে পরিচয় করতে গিয়ে আমি হাতটা বাড়িয়ে দিলে উনি করমর্দন করেছিলেন। একটু পরে স্টেজে উঠে গান শুরু করলেন। তবলায় ছিলেন রাধাকান্ত নন্দী।” |
একটু থেমে ফের বলতে শুরু করেন, “ওঁর গানের অন্ধ ভক্ত আমি। সেদিন মানুষটাকে সামনে থেকে দেখে ছবি তুলব কী, প্রথমে কেমন বিহ্বল হয়ে পড়ি। উনি সেটা বুঝতে পরেছিলেন। আমাকে সুযোগ দিলেন বেশ কিছু ছবি তোলার। ছবি তোলার পরে সেদিন রাতভর ওঁর গান শুনেছিলাম।”
ওই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা প্রণব প্রামাণিকও শিল্পীর মৃত্যুর খবরে শোকাহত। বললেন, “সেদিন নির্মলা মিশ্র ও মান্না দে দুই শিল্পীরই অনুষ্ঠান ছিল। নিমর্লাদেবীর গানের পরে মান্নাবাবু স্টেজে উঠলেন। মনে আছে, যখন তাঁর গলা থামল, তখন পাখিরা ডাকতে শুরু করেছে।” সেদিনের সেই অনুষ্ঠানের স্মৃতি আজও টাটকা আর এক উদ্যোক্তা দিলীপ রায়চৌধুরীর মনে। বনগাঁয় অনুষ্ঠান করতে এলে শিল্পীরা তাঁর বাড়িতেই উঠতেন। তবে সে বার মান্না দে উঠেছিলেন পিডব্লুডি-র বাংলোয়। তাঁকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে যেতে পারার দুঃখ আজও ভুলতে পারেননি দিলীপবাবু। |