ফের অশান্ত শাসন। সিপিএমের এক কর্মীকে মারধরের জেরে তৃণমূল নেত্রীর বাড়িতে হামলা হল বুধবার। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাঁর ছেলে। ঘটনার জেরে সংলগ্ন দেগঙ্গায় তৃণমূলের কার্যালয় পুড়ল। হল বোমাবাজিও। সব মিলিয়ে আবার রাজনৈতিক হানাহানির সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শাসনের মানুষ।
বুধবার রাতেই শাসনের নানা এলাকা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকায় র্যাফ নেমেছে। জেলা পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “বেশ কয়েক কয়েক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। পুলিশি টহল চলছে।” এ দিকে, পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দিতে বৃহস্পতিবার সকালে শাসনের কিছু এলাকায় রাস্তা কেটে দেয় গ্রামবাসীদের একাংশ।
একটি কালভার্ট ভেঙে দেওয়া হয়। দিনভর সেই রাস্তা সারাইয়ের কাজ করেছে প্রশাসন।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমাদের কার্যালয়ে আগুন লাগানো, কর্মীর বাড়িতে গুলি-বোমা ছোড়ার সাহস সিপিএম পায় কী করে? আমরা এর যোগ্য জবাব দিতে পারি। ওরা যদি ভাবে আমরা চুপ করে বসে থাকব, তবে ভুল করবে।” যদিও সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম দেব বলেন, “শাসনে সিপিএম কোথায়?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো সিপিএমকে ব্যান করে দিয়েছেন।” তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের নানা অভিযোগ নিয়ে তাঁরা নবান্নে (গৌতমবাবু যাকে এ দিন কটাক্ষ করে ‘জলসাঘর’ বলেছেন) যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সন্ধের দিকে। সিপিএমের অভিযোগ, গোলাম হোসেন ওরফে বাপি নামে তাদের এক কর্মীর উপরে তেঘড়িয়া মোড়ের কাছে হামলা চালায় তৃণমূলের কয়েক জন দুষ্কৃতী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে পরে ভর্তি করা হয় বারাসত হাসপাতালে।
রাত ১২টা নাগাদ ২৫-৩০ জন সশস্ত্র দুষ্কৃতী আবার গোলাবাড়িতে রেহেনা বিবি নামে তৃণমূলের দাদপুর পঞ্চায়েতের এক প্রাক্তন সদস্যের বাড়িতে হামলা চালায়। মুহূর্মুহূ বোমা পড়ে। বাড়ি লক্ষ্য করে ২৫-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। গ্রিল ভেঙে দু’টি মোটরবাইক নিয়ে পালায়। বাড়ির সামনেই শাসন রোডের উপরে তৃণমূলের একটি শহিদ বেদি ভাঙচুর করা হয়। সে সময়ে গুলিবিদ্ধ হন রেহানার ছেলে মহম্মদ ইলিয়াস। তাঁর বুকে ও কাঁধে গুলি লেগেছে। ইলিয়াসকে বারাসত হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে আরজি কর হাসপাতালে।
তৃণমূলের দাবি, এর আগেও নানা সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন রেহানা। এ বার পঞ্চায়েতে ভোটে হারার পরে তাঁর বাড়ি-দোকানে হামলা, লুঠপাট হয়েছিল। বাধ্য হয়ে সপরিবার দাদপুর ছেড়ে শাসনের গোলাবাড়িতে এসে থাকতে শুরু করেন তিনি।
রেহেনার স্বামী আব্দুল হাকিম বলেন, “সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই ফের আমাদের বাড়িতে হামলা করেছে।” সিপিএমের গোলাম আবার রেহানার উপরে হামলার ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ। শাসনের সিপিএম নেতা মহম্মদ কুতুবউদ্দিনের দাবি, “ভেড়ির টাকার বখরা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই শুরু হয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তা সামলাতে না পেরে আমাদের দলের কর্মীর উপরে হামলা করেছে তৃণমূল। ওই বাড়িতে তার জবাবদিহি চাইতে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ।” গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ মানতে চাননি জ্যোতিপ্রিয়বাবু।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দেগঙ্গা থানার হাদিপুর-ঝিকরা ২ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ আবজা নগরে তৃণমূলের দলীয় অফিসে ভাঙচুর ও বোমাবাজি করা হয়। আগুনে পুড়ে যায় জিনিসপত্র। এই ঘটনার জন্য সিপিএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রত্যাশিত ভাবেই যা অস্বীকার
করেছে সিপিএম। |