‘মিনি ডার্বি’তে ঘুমপাড়ানি ফুটবল

মহমেডান-০
ইউনাইটেড স্পোর্টস-০
র‌্যান্টি মাটিন্স। পেন ওরজি। টোলগে ওজবে। বেলো রাজাক। জোসিমার ডি’সিলভা। লুসিয়ানো সাব্রোসা। এরিক ব্রাউন।
ময়দানের তাবড় তাবড় বিদেশি ফুটবলারদের তালিকায় নামগুলো অনায়াসে ঢুকে পড়বে! আর সেই মুখগুলোকে আই লিগের ‘ছোট ডার্বি’-তে যদি একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলতে দেখা যায়, তা হলে হাইভোল্টেজ লড়াইয়ের আশা করা যেতেই পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের যুবভারতী দেখল একেবারে বিপরীত চিত্রনাট্য। যেখানে র‌্যান্টি বনাম লুসিয়ানো কিংবা টোলগে বনাম বেলোর মারকাটারি যুদ্ধ নেই। আছে অসহ্য ঘুমপাড়ানি ফুটবলের আদর্শ বিজ্ঞাপন।
নব্বই মিনিটে র‌্যান্টি-টোলগেদের উপস্থিতি চোখেই পড়ল না। সত্তর মিনিট গড়াতেই ‘অ্যাটাকিং থার্ড’ ছেড়ে ‘মিডল থার্ডে’ নেমে চক্কর দিতে থাকলেন মহমেডানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। আর বল-সাপ্লাইয়ের অভাবে বিরক্ত র‌্যান্টি অযথা দৌড়দৌড়ির ধকলও নিলেন না। ম্যাচ শেষে ইউনাইটেড কোচ এলকো সাতৌরি ক্লাবকর্তাদের একহাত নিলেন, “এ রকম পরিস্থিতিতে ফুটবল হয় না। ট্রেনিংয়ের জায়গা নেই। ফুটবলাররা যখন-তখন অফিস ম্যাচ খেলতে বাইরে চলে যাচ্ছে। একজন কিট বয় ফিজিও হয়ে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে! ন্যূনতম অনুশাসন যেখানে নেই, সেখানে এর চেয়ে ভাল ফুটবল হয় না।”

সান্ত্বনা বিনিময়। ম্যাচের পর র‌্যান্টি ও লুসিয়ানো।
সাতৌরির কথা নয় মানা গেল। চরম আর্থিক সঙ্কটে এখনও ‘ভিটামিন এম’ জোগাড় করতে পারেননি কর্তারা। ফুটবলাররা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। কিন্তু মহমেডান কোচ আবদুল আজিজ? যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভাণ্ডারে ভরা। তবুও মরসুমে প্রথমবার চার বিদেশি নিয়ে নেমেও আলো জ্বালাতে পারলেন না। উলটে রেফারির উপর ক্ষুব্ধ মহমেডান কোচের অভিযোগ, “আমাদের ডাকাতি করেছে রেফারি। না হলে তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরতাম।” রেফারির ‘ডাকাতি’টা কী, বোঝা না গেলেও, আজিজের সাদা-কালো ব্রিগেড যে ফুটবল খেলল, তাতে যে কোনও পরিকল্পনা ছিল না, সেটা স্পষ্ট। ফুটবলারদের মধ্যে চরম বোঝাপড়ার অভাব। বল ধরা-ছাড়ার প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও নেই। আজিজের ট্রেনিংয়ে আদৌ কোনও লাভ হচ্ছে কি না টোলগে-পেনদের, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ফরোয়ার্ডে। একসঙ্গে অন্তত দশ-এগারো ম্যাচ খেলে ফেললেও, জোসিমার-টোলগের মধ্যে এখনও কোনও রসায়ন তৈরি হয়নি। উলটে দু’জন দু’জনের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ মাঠে! গোলের সুযোগ থাকলেও কেউ কাউকে বল বাড়াবেন না। অতিরিক্ত ‘বল হোল্ড’ করার বদভ্যাসে বারবার বিপক্ষের রক্ষণে আটকে গেলেন দু’জনেই।
এই ম্যাচ থেকে মহমেডানের প্রাপ্তি বলতে চোট সারিয়ে লুসিয়ানোর দলে ফেরা। স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতায় গোলের মুখ বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে, গোল খাওয়ার রাস্তা একেবারে সুরক্ষিত ব্রাজিলিয়ান স্টপারের হাতে। এত দিন বাদে নেমেও বেশ ভাল ‘বল ডিস্ট্রিবিউশন’ করলেন। বিপক্ষের ‘সেকেন্ড বল’ খেললেন।

পেনকে সেরার পুরস্কার দিচ্ছেন নবি। বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে।
লুসিয়ানোর পাশে নজর কাড়লেন ফুলচাঁদ হেমব্রম-ও। কিন্তু যে দলে রাকেশ মাসিদের মতো ফুটবলারও থাকেন, তাঁরা সতীর্থের পরিশ্রমের যোগ্য মর‌্যাদা দেবেন কী করে?
মহমেডান মাঝমাঠে পেন খেললেও তাঁকে সেই ফর্মে পাওয়া গেল না। ইউনাইটেডের ফুটবলাররা সেই সুযোগে দু’-একবার আক্রমণে উঠলেও প্রকৃত গেমমেকারের অভাবে গোলের মুখ খুলতে পারেনি। সাতৌরি স্বীকার করছেন, “গত বছর আমার দলে কার্লোস, জেমসের মতো খেলা তৈরির লোক ছিল। এ বছর শুধু লালকমল আছে, কিন্তু ওর চোট।” শেষ আঠারো মিনিট দশজনের ইউনাইটেডকে পেয়েছিল মহমেডান। জোসিমারকে রাফ ট্যাকল করার অপরাধে লালকার্ড দেখেন বেলো। কিন্তু সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি পেনরা। ইউনাইটেড গোলকিপার সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের তৎপরতায়।
ম্যাচের সেরা হলেন পেন। লুসিয়ানোর বদলে পেন কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, মহমেডান-ইউনাইটেড লড়াই থেকে কি কেড়ে নেওয়া উচিত ‘ছোট ডার্বি’র তকমা? সেই আবেগ, উন্মাদনা কিছুই তো নেই। আছে কেবল উদাসীনতা!

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.