স্মরণ দুই মেদিনীপুরে |
সঙ্গীতশিল্পীকে স্মরণ মেদিনীপুর স্টেডিয়ামে
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
চল্লিশ বছর আগে সেই সাহায্যের কথা ভুলতে পারছে না মেদিনীপুর।
শহরের একমাত্র স্টেডিয়াম তৈরিতে প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে-র সাহায্যের কথা। বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্টেডিয়ামেই স্মরণ সভা হল।
সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে মেদিনীপুর শহরে কোনও স্টেডিয়াম ছিল না। জেলা হাসপাতালের অদূরে একটি বড় মাঠ ছিল। মাঠটি ডায়মন্ড গ্রাউন্ড নামে পরিচিত ছিল। জেলা প্রশাসনের সাহায্যে এখানে স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু, স্টেডিয়াম তৈরির অর্থ আসবে কী ভাবে? মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা বহু পুরনো। ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ক্রীড়া সংস্থাই বা এই বিপুল খরচের সংস্থান করবে কী ভাবে? ঠিক হয়, স্টেডিয়াম তৈরির খরচ তুলতে একটি অনুষ্ঠান করা হবে। যেখানে শিল্পীরা গান গাইবেন। |
প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে স্মরণে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে লিটল ম্যাগাজিন অ্যাকাডেমির সভা। |
এই অনুষ্ঠান থেকে যে টাকা উঠে আসবে, তা স্টেডিয়াম তৈরিতে খরচ হবে। তখন অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলাশাসক ছিলেন দীপক ঘোষ। তিনিই ছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি। আর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ছিলেন কৃষ্ণদাস পাল। এখন তিনি আইএফএ’র কোষাধ্যক্ষ।
পাশাপাশি, মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্যও। কৃষ্ণদাসবাবু বলছিলেন, “আজ মান্না দে আর আমাদের মধ্যে নেই। তাই সেই দিনটার কথা যেন আরও বেশি করে মনে পড়ছে। সেটা ১৯৭৩ সাল। স্টেডিয়াম তৈরির খরচ তুলতে এক অনুষ্ঠান হয়েছিল। আমরা মান্না দে-কেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। উনি এক টাকাও নেননি। পারিশ্রমিকের পুরো টাকাটা ক্রীড়া সংস্থাকে দান করেন। মঞ্চেই জানান, পারিশ্রমিকের টাকাটা দান করতে চান।”
ওই অনুষ্ঠানের পর স্টেডিয়াম তৈরিতে আর তেমন সমস্যা হয়নি। ১৯৭৪ সালের ২৬ এপ্রিল শিলান্যাস হয়। আর বছর পেরোতে না-পেরোতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট অরবিন্দ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়। এখনও স্টেডিয়াম ক্যাম্পাসের মধ্যে ফলকে প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।
|
কোলাঘাটের নতুন বাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য ভক্তদের। |
প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম ক্যাম্পাসে এক স্মরণ সভা হয়। ছিলেন মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক জগবন্ধু অধিকারী, কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বসু প্রমুখ। আলোচনায় বারবারই ফিরে আসছিল চল্লিশ বছর আগের কথা। অ্যাডহক কমিটির সদস্য বিদ্যুৎবাবু তখন মেদিনীপুর কলেজের ছাত্র। মান্না দে’র গান শুনতে তিনিও সেই দিন ডায়মন্ড গ্রাউণ্ডে হাজির ছিলেন। অন্য কয়েক হাজার শ্রোতার মতোই। স্মৃতিতে ডুব দিয়ে বিদ্যুৎবাবু বলছিলেন, “প্রচুর মানুষ গান শুনতে এসেছিলেন। আমি তখন কলেজে পড়ি। মান্না দে চলে গেলেন। তবে, গানগুলো সব সময় বেঁচে থাকবে। ” এক শোক প্রস্তাবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক জগবন্ধুবাবু জানান, “এই দরদী শিল্পী বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা অবিভক্ত মেদিনীপুরের ক্রীড়াপ্রেমী জনগণ আজও স্মরণ করে।” |
—নিজস্ব চিত্র। |
|