ডরাই না সিবিআই জেরায়, পাল্টা চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর
ক্রমণই প্রতিরক্ষার সেরা পন্থা। মেয়াদের শেষ বিদেশ সফরটি থেকে ফেরার পথে নিজের বিমানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো যেন সেই পন্থাকেই বেছে নিলেন বৃহত্তর ‘টিম ইন্ডিয়া’র জনগণ-অধিনায়ক মনমোহন সিংহ। সাফ জানিয়ে দিলেন— জিজ্ঞাসাবাদ করলে করুক সিবিআই। আমি তো আইনের ঊর্ধ্বে নই। লুকোনোরও কিছু নেই আমার।
এটাই যে তাঁর শেষ ইনিংস, এ দিনও তার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ। কিন্তু কয়লা কেলেঙ্কারির কালি তাঁর গায়ে ছুড়ে ভোটের ময়দানে নামার যে কৌশল বিরোধী বিজেপি নিয়েছে— তা থেকে নিজের ভাবমূর্তিকে রক্ষা করার দায় আজ বড় হয়ে উঠেছিল মনমোহনের কাছে। সে ভাবমূর্তি সততার, নিষ্ঠার। সে ভাবমূর্তিকে নিষ্কলঙ্ক রাখতে আজ বেনজির আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি চায় কেলেঙ্কারির দায় চাপিয়ে তাঁকেও জেরা করুক সিবিআই। দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও অভিযুক্তের তালিকায় নাম তোলা হোক তাঁর। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিজেপির সেই গুগলিকে হেলায় সীমানার ও-পারে উড়িয়ে দিয়ে মনমোহন জানিয়ে দিয়েছেন— “আমি আইনের ঊর্ধ্বে নই। সিবিআইয়ের যে কোনও ধরনের জেরার জন্যই তৈরি।”
অতীতে টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গেও এমনই আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর আজকের মন্তব্যের যেন ভিন্নতর মাত্রা রয়েছে। ভাবমূর্তি রক্ষার তাগিদ তো রয়েছেই, তা ছাপিয়েও যেন বড় হয়ে উঠেছে দলের স্বার্থ। অনেকে বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই আগ্রাসী মেজাজ বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। কংগ্রেসের সামগ্রিক কৌশলেরই অঙ্গ। কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে ইতিমধ্যেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে কংগ্রেস। সনিয়া-রাহুল মনে করছেন, খনি বণ্টন নিয়ে কুমারমঙ্গলম বিড়লার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের এফআইআর দায়েরের বিরুদ্ধে শিল্পমহল একসুরে ছি ছি করছে। সুতরাং কোণঠাসা হয়ে না-থেকে আক্রমণাত্মক হওয়াটাই কাজের হবে।
মনমোহনের এই রাশিয়া-চিন সফরের আগে দলের পরামর্শেই তাঁর সচিবালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, কুমারমঙ্গলম বিড়লাকে কয়লা খনি বণ্টন করায় কোনও অনিয়ম হয়নি। আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও অবস্থানের সেই ঋজুতা ধরে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু কয়লা কেলেঙ্কারিই বা কেন, টুজি স্পেকট্রাম-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির প্রসঙ্গে প্রশ্নও দিব্যি উড়িয়ে খেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, “যে সব কেলেঙ্কারির কথা বলা হচ্ছে, তা তো হয়েছিল প্রথম ইউপিএ জমানাতেই। তার পরেও কিন্তু জিতেছিল কংগ্রেস। ২০১৪ সালের ভোটের ফলও কী হয় দেখুন। আরও এক বার বিস্মিত হয়ে যাবে দেশ।”
তৃতীয় বার আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চান না মনমোহন। কংগ্রেস ফের ক্ষমতায় এলে সম্ভবত রাহুল গাঁধীই ধরবেন সরকারের হাল। সেই রাহুলের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াও আজ চোখ এড়ায়নি। কালই রাজস্থানের এক জনসভায় রাহুল সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলে বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন। বলেন, বিজেপি বিদ্বেষের রাজনীতি ছড়াচ্ছে দেশে। তা থেকেই ছড়াচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের আগুন। রাহুল বলেছিলেন, “ঠাকুমা, বাবার পরে এই বিদ্বেষের রাজনীতি এক দিন হয়তো আমাকেও মেরে ফেলতে চাইবে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু আমি কেন, দেশের সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই বিদ্বেষের রাজনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।”
অবসরের ইঙ্গিত আজ বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে মনমোহনের গলায়। খানিকটা বিষণ্ণ সুরেই তিনি বলেন, “আমি শুধু আমার কাজটুকুই করে গিয়েছি। বিচার তো করবেন মানুষ। আর আমার দশ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্ব দেশকে কতটুকু এগিয়ে দিল, সে বিচার করবেন ইতিহাসবিদরা।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.