অর্থমনর্থম
স্টেশন পাকিস্তানে নেমে শাহরুখ খানের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিটার প্রথম দিনের কালেকশন ছিল ৯০ লক্ষ পাকিস্তানি টাকা। কিন্তু সেই রেকর্ডকেও এ বার ঈদে ভেঙে দিল পাকিস্তানি ছবি ‘ওয়াঢ়’য়ের ১ কোটি ১৪ লক্ষ পাকিস্তানি টাকার ওপেনিং। ছবিটা ইংরেজিতে হলেও উর্দু সাবটাইটেল আছে।
এই সাফল্যে খুবই আপ্লুত এ ছবির নায়ক শান শাহিদ, যিনি পাকিস্তানের শাহরুখ খান হিসেবেই খ্যাত। লাহৌর থেকে বলছেন, “আমাদের উচিত পাকিস্তানি ছবিকে সাপোর্ট করা। ‘ওয়াঢ়’ যত বক্স অফিস সাফল্য পাবে তত অন্যান্য প্রযোজকেরা পরবর্তী প্রজন্মের পাকিস্তানি ছবিতে লগ্নি করবে। ফলে করাচি, লাহৌর আর ইসলামাবাদের তরুণ পরিচালকদের সুবিধা হবে।” ‘ওয়াঢ়’য়ের সাফল্যের পর এখন কি তিনি উৎসাহ নিয়ে ‘অথর্র্’য়ের উর্দু রিমেকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
ব্যক্তিগত কারণে মেয়াদ ফুরোবার আগেই অবসর গ্রহণ করা এক সামরিক অফিসারের জীবন নিয়েই ‘ওয়াঢ়’ ছবির গল্প। ছবিতে দেখা যাবে সন্ত্রাস দমনে উদ্যোগী এক স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের নেতৃত্ব দিতে নেমে পড়েন শান। লক্ষ্য একটাই। একটা কেমিকেল বম্বকে নিষ্ক্রিয় করে ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে দেশকে বাঁচানো। ছবির ভিলেন এক মহিলা এজেন্ট। এই এজেন্ট দিনে সমাজসেবা করেন আর রাতে রাজনীতিকদের নিয়ে চালান মধুচক্র। যদিও কোথাও সরাসরি ভারতের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবু দর্শকদের অনেকেই এ ছবিতে ভারত-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির আভাস পেয়েছেন।
‘ওয়াঢ়’ ছবিতে শান শাহিদ।
আপাতদৃষ্টিতে ছবির বিষয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লড়াই। এবং ছবিতে এই সন্ত্রাসে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। নানা রিপোর্টে এমনটাও বলা হয়েছে যে ছবির খানিকটা অর্থ লগ্নি করেছে পাকিস্তানের মিলিটারি সংগঠন। তবে ছবির পরিচালক বিলাল লাসারি এই গুঞ্জন সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। শান খুব জোর দিয়ে বলছেন, “‘ওয়াঢ়’ একেবারেই ভারত-বিরোধী ছবি নয়। বরং বলা চলে সন্ত্রাস-বিরোধী গল্প। কী ভাবে সন্ত্রাসবাদীরা দিনে দিনে সক্রিয় হয়ে উঠছে এবং পাকিস্তানের সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটাই নিখুঁত ভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে ছবিতে।”
ইতিমধ্যে দর্শকদের দিক থেকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। অস্কারজয়ী পাকিস্তানি তথ্যচিত্র নির্মাতা শামিন ওবেদ চিনয় টুইট করেছেন এই বলে যে, “‘ওয়াঢ়’ ছবিতে প্রচুর গতানুগতিকতা রয়েছে। সেগুলো অবশ্য আমরা যে ধরনের ভারতীয় ছবি দেখতে যাই সেখানেও থাকে। ভাল লাগুক বা না লাগুক শুধুমাত্র স্থানীয় শিল্পীদের প্রতিভার সম্মান করার জন্য অন্তত ছবিটা দেখতে যান।”
মহেশ ভট্টও ‘ওয়াঢ়’ নিয়ে পাকিস্তানে অনেক তর্কবিতর্ক হচ্ছে বলে শুনেছেন। বললেন, “শুনেছি এ ছবিতে মূল সমস্যার কারণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। যদিও একেবারেই ভারতের নাম নেওয়া হয়নি। আমরাও বলিউডে এই রকম ছবি বানালে সেখানে পাক-বিরোধী সংলাপ থাকে। ‘গদ্দার’, ‘বর্ডার’য়ের মতো ছবি তো দর্শক টেনেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রবিরোধী চিত্রনাট্য দিয়েই। এমনকী ‘ডি-ডে’ ছবিতেও খোলাখুলি ভাবে আইএসআইয়ের কথা বলা হয়েছে। তবে আমি যা শুনলাম ‘ওয়াঢ়’য়ে একবারও ভারতের নাম উচ্চারণ করা হয়নি।”
‘অর্থ’-এ কুলভূষণ-স্মিতা।
এই ছবিকে ঘিরে এত বিতর্কের পর শান কি আবার শাবানা আজমি-স্মিতা পাটিল অভিনীত ছবি ‘অর্থ’য়ের রিমেক বানাতে পারবেন?
উত্তরে মহেশ ভট্ট বললেন, “আমি ‘ওয়াঢ়’ দেখিনি। কিন্তু এটুকু বুঝি আমাদের এ বার প্রাপ্তমনস্ক হওয়ার সময় এসেছে। ভারত-পাক যুদ্ধের পরেও যখন দু’ দেশের সম্পর্ক খারাপ হয়নি তখন ‘ওয়াঢ়’য়ের জন্য কেন খারাপ হবে? তিরিশ বছর আগে ছবিটা বানানো হয়েছে। তাই রিমেক করার জন্য আমার কাছে শানের সম্মতি নেওয়ার কোনও দরকারই ছিল না। তবুও এসেছিলেন। এবং ওঁকে আমি ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ও দিয়ে দিই। এও বলেছি রিমেক ছবিটা যে ভারত-পাক সম্প্রীতির উদ্যোগ এটা টাইটেলে উল্লেখ করতে।”
যতই বিতর্কের আবহাওয়া তৈরি হোক না কেন পাকিস্তানের খবর অনুযায়ী ‘অর্থ’ রিমেকের শু্যটিং শুরু হবে লাহৌরে। ডিসেম্বর থেকে। ছবিতে অভিনয় করবেন শান (রাজকিরণের চরিত্রে), হুমাইমা মালিক (স্মিতা পাটিলের চরিত্রে), আলি খান (কূলভূষণ খারবান্দার চরিত্রে), উজমা হাসান (শাবানা আজমির চরিত্রে)। গুজবে এও শোনা যাচ্ছে যে, ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক সালিম-সুলেমানকে এ ছবিতে সুরারোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সুলেমান বলেছেন, “আমি এই প্রজেক্ট সম্পর্কে এখনও কিছু জানি না।”
হুমাইমা মালিক।
ইতিমধ্যে ‘অর্থ’য়ের রিমেকে একটা নাটকীয় বাঁক নিয়েছে। বারডান্সার থেকে বলিউড চিত্রনাট্যকার হয়ে ওঠা শাগুফতা রফিকের এ ছবিতে চিত্রনাট্য লেখার কথা থাকলেও তিনি আর এই প্রজেক্টে জড়িত নন। ‘অর্থ’য়ের রিমেক নিয়ে আলোচনা করতে তিনি এ বছরে পাকিস্তানে যান মোট দু’বার। “প্রথমে ‘অর্থ’য়ের রিমেকের রাইট অন্য আর এক জন প্রযোজক পাকিস্তান থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি পাকিস্তানে গিয়ে শুনি যে ওই প্রযোজককে শানই পাঠিয়েছিলেন ভট্ট সাহেবের কাছে। যদিও তিনি নিজের জন্যই সেই স্বত্ব নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। আমি তোড়জোড় করে রাইটস আবার শানকে দেওয়াই,” বলছেন শাগুফতা। পরে কাজ করতে গিয়ে বোঝেন যে শান গল্পটার মৌলিক জায়গাগুলোতে অনেক বদল করবেন। “আমি গল্পটাকে মুসলিম সমাজের পটভূমিতে লিখতে তৈরি ছিলাম। শানের সাজেশন ছিল শাবানা আজমির চরিত্র হবে আধুনিকা। রাজকিরণের চরিত্রটাকে তিনি ছবির প্রথম থেকেই রাখতে চেয়েছেন। এত বদলই যদি করা হবে তো ছবিটাকে ‘অর্থ’য়ের রিমেকই বা কেন বলা হবে?” প্রশ্ন শাগুফতার।
তখনই তিনি ঠিক করেন যে চিত্রনাট্যটা লিখবেন না। “যদি আমি আমার যথাসাধ্য সেরাটুকু দিয়েও চিত্রনাট্য লিখি তা হলেও ওরিজিনাল ছবিটার প্রতি সুবিচার করা হবে না। আমি একজন চিত্রনাট্যকার। ‘ঘোস্ট-রাইটার’ থাকলে আমি সেই প্রজেক্টে লিখব কেন? শান আর আমার সৃজনশীল চিন্তাভাবনার মধ্যে তফাত আছে। তবু মানছি যে ওঁর আমার প্রতি বিরক্ত হওয়ার অধিকারও আছে,” শাগুফতা বলেন।

মহেশ ভট্ট
“ভারত-পাক যুদ্ধের পরেও যখন দু’দেশের সম্পর্ক
খারাপ হয়নি তখন ‘ওয়াঢ়’য়ের জন্য কেন খারাপ হবে?”

ইতিমধ্যে শাগুফতা একটা নতুন চিত্রনাট্য লিখে ফেলেছিলেন। “পূজা ছবিটার প্রযোজনা করবেন। নতুন শিল্পীদের নিয়ে আমি এই ছবিটা পরিচালনা করব। পরকীয়া প্রেম নিয়ে গল্প। দেখাতে চাই কারও স্ত্রী অন্য পুরুষের প্রেমে পড়লে তিনি কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করেন,” বললেন শাগুফতা। এর মাঝে তিনি কি ‘ওয়াঢ়’ সম্পর্কে কিছু শুনেছেন? শাগুফতা বললেন, “আমাদের বলিউডেও কি পাকিস্তান-বিরোধী ছবি নিয়মিত তৈরি হচ্ছে না? ‘ওয়াঢ়’য়ের মতো ছবি গ্রহণ করে ভারতবাসীর বড় মনের পরিচয় দেওয়া উচিত।”
আপাতত পাকিস্তানি চিত্রনাট্যকার পরভেজ কলিম উর্দু ‘অর্থ’য়ের চিত্রনাট্য লিখছেন। শাগুফতার কথা অনুযায়ী শান ‘অর্থ’য়ের রিমেকে যে সব বদল ঘটাতে চাইছেন তা নিয়ে কি মহেশের আপত্তি আছে? “আমার বানানো পুরনো ছবি নিয়ে কোনও রক্ষণশীলতা নেই। শান যে ভাবে ‘অথর্র্’য়ের রিমেক করতে চান করতে পারেন। আমি ওঁকে সেই রাইট দিয়েছি। সে ছবি ভাল হলেও কৃতিত্বের ভাগীদার আমি হব না। খারাপ হলেও দোষী হতে চাই না। ‘ওয়াঢ়’য়ের পর ‘অর্থ’ই হবে ওঁর জীবনের পরবর্তী বড় প্রজেক্ট।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.