|
|
|
|
আনন্দplus এক্সক্লুসিভ |
বুনো প্রেম |
টুকটুকে চড়ে বাংলা সিনেমার নতুন জুটি। চায়না টাউনের অলিগলি ঘুরে পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী-র ব্যস্ত
দৌড়োদৌড়ি।
ব্যাংককে ‘বুনো হাঁস’য়ের শ্যুটিং লোকেশনে একমাত্র আনন্দplus। লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
ত্রিমুখী পরীক্ষা চলছে ব্যাংককে।
‘বুনো হাঁস’য়ের শ্যুটিংয়ে।
প্রথমত, অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর ‘অপরাজিতা তুমি’র পর এটাই প্রথম ছবি। আগের ছবির বক্স অফিসে ভাল না চলা অবশ্যই চাপে রাখবে পরিচালককে।
দ্বিতীয়ত, ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের পর দেবের মূল ধারার বাইরে দ্বিতীয় ছবি। মূল ধারার বাইরে যে ‘নিউ এজ’ বাংলা ছবি দেখার জন্য এখন হলের বাইরে লাইন পড়ে যায়, সেই ট্রেনে দেব এখনও চাপতে পারেননি।
তৃতীয়ত, দেব-তনুশ্রী জুটি। দেব-শুভশ্রী জুটির পর দর্শক দেবের পাশাপাশি কতটা গ্রহণ করবেন নতুন ‘শ্রী’কে, সেটাই এখন দেখার।
পরীক্ষা শুরু। |
|
অনেক দিন ধরে ওয়ার্কশপ করছি |
ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শ্যুট।
লোকেশন ব্যাংককের চায়না টাউন। চায়না টাউনকে বুঝতে হলে একটু অঙ্ক করতে হবে। কলকাতার চায়না টাউনের রাস্তাগুলো মনে মনে অর্ধেক করে নিন। আর লোক চার গুণ বাড়িয়ে দিন। যে ছবিটা পেলেন, সেটাই ‘বুনো হাঁস’য়ের ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শ্যুটের লোকেশন। এখানেই শ্যুট হয়েছিল ‘হ্যাংওভার পার্ট-২’।
ওই সরু গলির মধ্যে চেজিং সিকোয়েন্সও রয়েছে। ভাবুন একবার। দেব হেঁটে যাচ্ছেন, তো পাশের কোনও দোকান থেকে হাত টেনে ধরল কোনও অদ্ভুত ফ্রাই খাওয়ার জন্য। তনুশ্রীকে দেখে সামনেই দাঁড়িয়ে গেল গোটা দশেক ছেলে।
কিন্তু এমন ভাবে দেব-তনুশ্রীর জন্য হলের বাইরে দর্শক দাঁড়িয়ে থাকবে তো?
“অবশ্যই থাকবে। আমরা অনেক দিন ধরে ওয়ার্কশপ করছি। ওয়ার্কশপেই দেখেছি কী ভাল ম্যাচ করছে ওদের জুটি। দেব ওর ব্যস্ত শিডিউল থেকে সময় বের করে ওয়ার্কশপ করেছে। এখানে তিন দিন আগেই চলে এসেছে। তনুশ্রী প্যাশনেটলি ওয়ার্কশপ করছে। সবাই ‘বুনো হাঁস’ নিয়ে
ভীষণ ফোকাসড। এই পরিশ্রমের ছাপটা দর্শকের কাছে পজিটিভ ভাইব্স আনবেই,” বলছিলেন পরিচালক টোনি। |
নতুন জুটি। |
গাড়ির কাচে হেয়ার টাচ-আপ |
ঘড়িতে তখন সন্ধে ছ’টা। চায়না টাউনের মধ্যে শ্যুটিং সিকোয়েন্স শেষ হয়েছে। এর পরের শট যেখানে অমল টুকটুকে চেপে হোটেলের খোঁজ করবে।
জায়গাটা অনেকটা উত্তর কলকাতার পুরনো শরিকি বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেবে। ভাঙাচোরা সিঁড়ি, ঘুরে বেড়াচ্ছে আরশোলা-ইঁদুর। এমনকী শরিকি বিবাদেরও অভাব নেই। সে বিবাদ এমন জায়গায় পৌঁছল, শ্যুটিংই কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হল। তনুশ্রী কিন্তু দেব আর তাঁর জুটি নিয়ে বেশ আশাবাদী। ‘উড়ো চিঠি’, ‘বেডরুম’, ‘কয়েকটি মেয়ের গল্প’তে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হলেও বক্স অফিস সাফল্য কিন্তু এখনও তাঁর ঝুলিতে নেই। পার্কিং লট-য়ে একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে মেক আপ করতে করতে তনুশ্রী বলেন, “সেটা আনফরচুনেট। আমার কোনও ফিল্মই তো আর সে অর্থে কমার্শিয়াল ছবি নয়। তাই ব্যবসা দিয়ে মাপাটা মনে হয় ঠিক হবে না। ‘বুনো হাঁস’য়ে কিন্তু দু’টোরই সম্ভাবনা আছে। অন্য ধারার ছবি। আবার বক্স অফিস কাঁপানোর মেটিরিয়ালও রয়েছে।
শ্যুটের ডাক পড়ায় উঠে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা টয়োটা এসইউভি-র কাচে চুলটা দেখে নিয়ে টুকটুকের দিকে এগিয়ে যান দেবের নতুন নায়িকা। |
চ্যালেঞ্জটাই তো অ্যাক্টিং |
চাইলেই যে পছন্দমতো সব পাওয়া যাবে, তেমনটা তো হতে পারে না! টুকটুকটাই তার বড় প্রমাণ। ক্রমশ আলো কমে আসায় অনিরুদ্ধ খোঁজ করছিলেন এমন একটা টুকটুক যার ভিতরেও আলো লাগানো থাকবে। অনেক খুঁজে যদিও বা পাওয়া গেল, সে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার উল্টো দিকে। ব্যাংককের পিক আওয়ার ট্রাফিক নিয়ে যদি এতটুকু ধারণা থাকে, তবে জানবেন যে সন্ধে ৭টার সময় রাস্তার অন্য দিকে গাড়ি ঘোরানো কতটা দুষ্কর!
অগত্যা ক্রু নেমে পড়ল রাস্তায়। নিজেরাই হাত দেখিয়ে অন্য গাড়ি থামিয়ে টুকটুকটাকে শ্যুটের দিকে নিয়ে এল। দৃশ্যটার পর ভ্যানের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে চা আর মারি বিস্কিট খাচ্ছিলেন দেব। জিজ্ঞেস করলাম কতটা চাপে আছেন তিনি? অন্য ধারার ছবিতে তিনি তো আর ‘স্টার দেব অধিকারী’ নন, সে অ্যাডভান্টেজটাই তো আর নেই।
“সেটাই তো অ্যাক্টিং!” স্পষ্ট দেব। বললেন, “আমি যেমন তেমন রোল করলে আর অ্যাক্টিং কোথায় করলাম! আমি যেমন নই, তেমন ক্যারেক্টার করতে পারলে তবেই না অ্যাক্টিং করলাম। সাত বছর তো হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। এ বার তো একটু রেসপন্সিবিলিটি নিতেই হবে। দায়িত্ব বাড়বে। সেগুলো সামলাতেও হবে।” সেই রেসপন্সিবিলিটির জন্যই তো সরু কাঠের একটা করিডর শুনশান দেখে সেখানে নিজে নিজে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন পরের শট। কিন্তু যে চরিত্রের জন্য দেবকে মেনশন করা, সেই অমল আর দেব কিন্তু দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। অমলের ‘শুধু পাসপোর্ট’ ছাড়া আর কিছু ছিল না। দেবের পাসপোর্টে
আর বোধহয় ভিসা ছাপের জায়গা নেই। “এ বছর ভারতে কত দিন ছিলেন? হেসে ফেলেন দেব। বললেন, “এটা খুব ভাল প্রশ্ন। না, এখনও এনআরআই হইনি। সত্যি, এ বছরটায় দেশের বাইরেই বেশি কাটানো হয়ে গেল বোধহয়। ইতালিতে ‘রংবাজ’, সাউথ আফ্রিকায় ‘চাঁদের পাহাড়’, তার পর এখানে ‘বুনো হাঁস’।
|
ব্যাংককের রাস্তায় পরিচালক অনিরুদ্ধ। |
ছিল রুমাল, হয়ে গেল অ্যাকশন |
আর পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী নিজে? ধূসর রংয়ের শার্ট পরে ডাবল এক্সএল চেহারা নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছেন চায়না টাউনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দৌড়োদৌড়িতে জামার বোতামও হাঁফিয়ে উঠে হাত তুলে দিয়েছে। পেটের একটা বোতাম
খুলেই গিয়েছে। কিন্তু ‘বুনো হাঁস’ কি টোনির ফর্ম খুলে দিতে পারবে? ‘অপরাজিতা তুমি’র ব্যর্থতা কি মুছে যাবে পরের ছবিতে?
“কাম ব্যাক কেন বলছেন বুঝতে পারছি না। আরে ‘অপরাজিতা তুমি’ তো ভালই ব্যবসা করেছে। আমার যে ধারার সিনেমা, তাতে যেমন চলার কথা তার চেয়ে অনেক ভাল চলেছে। আমার কাছে ফিগার আছে। চাইলে দেখিয়ে দেব,” শ্যুটিং শুরুর আগের দিন সন্ধেবেলা হোটেল লবিতে রীতিমতো স্টেপ আউটের ভঙ্গি অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর।
কিন্তু দেবকে কাস্ট করা নিয়ে লোকে তো অন্য কথা বলছে। কথা শুনে গোলটেবিলটার উল্টো দিকে বসা পরিচালকের ভ্রু-জোড়া টান
খেল। অনেকে যে মনে করছেন ‘দেব-টনিক’য়ে উতরোতে চাইছেন টোনি, সেটা নিজেও জানেন? ভ্রু কোঁচকানো না কমিয়েই উত্তর দিলেন, “দেখুন দেবকে আমি অনেক দিন থেকে চিনি। দু’জনেই সাউথ সিটিতে থাকি। সব সময় দেখাসাক্ষাৎ হয়। মাঝে মাঝে আড্ডা হয়, গান শুনি। দেব আমার পরিবারের একজন। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না আমি একটা ‘প্রজেক্ট’ বানাচ্ছি। অনেক পরিচালক আছেন যাঁরা ‘প্রজেক্ট’ বানান, আমি কিন্তু ফিল্ম বানাচ্ছি। আমি যখন প্রথম ‘বুনো হাঁস’ য়ের গল্প শুনি, অমল বলতেই আমার দেবের চোখ মনে পড়েছিল।
ওই ইনোসেন্স দেব ছাড়া কারও চোখে আমি দেখিনি। আপনি সমরেশদাকে (মজুমদার) জিজ্ঞেস করতে পারেন। প্রথম দিন আমরা যখন বসি, সমরেশদাও দেবের নাম মেনশন করেছিলেন।”
এ দিকে শট রেডি। রাস্তার ও দিক থেকে অমলকে খুঁজে বেড়াচ্ছে দুই গুণ্ডা। রাস্তা পারাপারের দৃশ্য অ্যাকশন বলার নতুন রাস্তা। পরিচালক রুমাল নাড়াবেন।
সিনেমা এত সহজ না কিন্তু দেবকে কাস্ট করায় বাণিজ্যের রাস্তা আরও সহজ হয়ে গেল না? “অনেক সিনেমা তো সুপারস্টার নিয়েও ফ্লপ হয়েছে। ‘ধোবিঘাট’ দেখুন। এতটা সহজ ইকুয়েশন বোধহয় ফিল্ম বাণিজ্য নয়। সিনেমা বানাতে মেহনত লাগে। একটা গল্প বলি আপনাকে। একজন পরিচালক, নাম বলব না, এক অভিনেতাকে বলছিলেন: ‘ভাল করে টাইপিংটা শেখো। টাইপিংয়ের ক্লোজ-আপ আছে।’ সেই অভিনেতা বলেছিলেন: ‘আমি তো অভিনেতা। অভিনয় করে দেব। শুধু টাইপিং হলে তো টাইপিস্টই হায়ার করতেন।’ আমি অভিনয়ের জন্যই দেবকে কাস্ট করেছি। হি উইল সারপ্রাইজ আ লট অব পিপল।”
শেষ শট নেওয়ার আগে পরিচালককে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “বুনো হাঁস’ সফল হবে কেন?” দু’সেকেন্ড না ভেবেই উত্তর দিলেন, “সবার মন দিয়ে কাজ করার ইচ্ছে দিয়ে।”
ওহ্, বলতে ভুলে গিয়েছি, প্রথম দিনের শ্যুটে পরিচালক থেকে চিত্রপরিচালক হরীন্দ্র সিংহ কী অভিনেতারা কেউই কিন্তু কোনও লাঞ্চ ব্রেক নেননি। পরীক্ষার ফলের জন্য যদিও রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত ‘বুনো হাঁস’য়ের রিলিজ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। |
ছবি: ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়। |
|
|
|
|
|