রক্তের ‘কিট’-এর অভাবে বিপাকে পড়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। রক্ত আনতে রোগীর পরিজনদের লালবাগ বা কান্দি মহকুমা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। রক্তদান শিবিরগুলিও পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিত্যদিন জেলার হাসপাতালগুলিতে রক্ত সরবরাহও থমকে গিয়েছে। সব মিলিয়ে সমস্যা বেশ জটিল।
গত কয়েকদিনে ব্লাড ব্যাঙ্কে ‘কিট’-এর অপ্রতুলতার দরুন বেশ কয়েকজন রক্তদাতাকে ফিরে যেতে হয় বলে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদ থানা এলাকার ডাহাপাড়ার বাসিন্দা জয়ন্তী হালদার ভর্তি রয়েছেন প্রসূতি বিভাগ মাতৃসদনে। অস্ত্রোপচারের পরে দু-বোতল ‘ও’ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান চিকিৎসক। পড়শি সোমনাথ সাহা রক্ত দিতে রাজি হলেও জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক ‘কিট’-এর অভাবে তা সংগ্রহ করতে পারেনি। শেষে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে আসেন রোগীর পরিজনেরা।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে ‘কিট’-এর ঘাটতি রয়েছে। তবে লালবাগ, কান্দি ও জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে অল্প পরিমাণে ‘কিট’ এনে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য ভবনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিছু ‘কিট’ বরাদ্দ হয়েছে বলেও শুনেছি। বৃহস্পতিবার তা আনতে কলকাতায় লোক পাঠানো হবে।”
তার আগে জোড়াতালি দিয়ে কোনওরকমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার জেলার অন্য হাসপাতাল থেকে ৭৫টি ‘কিট’ নিয়ে আসা হয়। তার মধ্যে বুধবার ৫০টি ‘কিট’ শেষ হয়ে গিয়েছে। পড়ে রয়েছে ২৫টি। তবে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের তুলনায় কান্দি, ডোমকল, জঙ্গিপুর ও লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের অবস্থা কিছুটা হলেও ভাল। কান্দি মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা এসিওমওএইচ ভাস্কর বৈষ্ণব বলেন, “‘কিট’ কম রয়েছে। তবে হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। রক্তদান শিবিরে জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ‘কিট’ দিতে পারছি না।”
জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “প্রয়োজনীয় সংখ্যক ‘কিট’ রয়েছে। ফলে রক্ত দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।”
লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবকুমার দে অবশ্য বলেন, “ব্যাগের স্বল্পতার জন্য রক্তদান শিবির পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। একই দিনে একাধিক শিবির থাকলে উদ্যোক্তোদের তা পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করছি। পরে ‘কিট’ নিয়ে এসে পরিস্থিত সামাল দেওয়া হচ্ছে।”
যদিও রক্তের অভাবে জেলার হাসপাতালগুলিতে কোনও অস্ত্রোপচার থমকে নেই। রোগীর বাড়ির আত্মীয়রা বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে লালবাগ, কান্দি বা জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে দাতা নিয়ে গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করছেন। এতে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তবে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, দুর্ঘটনাজনিত কোনও কারণে আচমকা রক্তের প্রয়োজন হলে বিপদে পড়তে হবে! ব্লাড ব্যাঙ্কের যুগ্ম অধিকর্তা (ব্লাড সেফটি) অরবিন্দ বালা বলেন, “ বছর দেড়েক ধরে ন্যাকো ব্যাগ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা চরমে উঠেছে। তবে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কের জন্য ৮ হাজার ব্যাগ সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
|