ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত গ্রামে দুটি শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরে দুষ্কৃতী হানার ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফাঁসিদেওয়া থানার বাঁশগাঁও কিসমত পঞ্চায়েতে ফাঁসিদেওয়াথান গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। বিএসএফ জওয়ানদের একাংশের নজরদারির অভাবের অভিযোগ তুলে বাসিন্দারা এলাকার লালদাস সীমান্ত চৌকির বিএসএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখান। বাসিন্দাদের বক্তব্য, কাঁটাতারের বেড়া না থাকার সুযোগে দুষ্কৃতীরা ওপার থেকে এসে মন্দিরে লুঠপাট চালিয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাসিন্দাদের তাঁরা শান্ত করেন। এর পরে বিডিও অফিসে পুলিশ-প্রশাসন এবং বিএসএফের মধ্যে সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু উত্তেজনা না কমায় বিকালে এলাকায় বিএসএফের তরফে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং করার সরকারি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। বিডিও বীরূপাক্ষ মিত্র বলেন, “বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁদের নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। ফ্ল্যাগ মিটিং করার জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। ওঁরা আসেননি। জেলাশাসক-সহ উচ্চ পর্যায়ে সব জানিয়েছি।” এই প্রসঙ্গে বিএসএফ নর্থবেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার মুখপাত্র নন্দীশ কুমার বলেন, “সীমান্ত চৌকিকেও সতর্ক করে নজরদারি আরও বাড়ানোর জন্য বলেছি।” |
এই ব্লকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটার। বিডিও অফিসের পিছনের দিকে কয়েকশ মিটারের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত। ওই গ্রামটি বাঁশগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। এলাকায় মহানন্দা নদী ভারত বাংলাদেশকে দুইভাগে ভাগ করেছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নেই। ওই এলাকায় সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় ২৫০ বছর পুরানো একটি জোড়া মন্দির রয়েছে। একটিতে মাটির কালী মন্দির এবং অপরটিতে পিতলের গঙ্গাদেবীর মন্দির রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই নিয়ম করে বাসিন্দারা মন্দির দুটিতে পুজো করে আসছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, দুটি মন্দিরেই বড় লোহার গ্রিলের গেট রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গ্রিলের গেট কেটে মন্দিরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। তার পরে কালী মূর্তির শরীরে থাকা সোনার দুল, মালা-সহ বিভিন্ন সোনার গয়না খুলে নেয়। পাশাপাশি, দুটি মন্দির থেকেই তামা ও পিতলের বাসনপত্র নিয়ে নেয়। ঘটনার সময় কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানেরা দুষ্কৃতীদের তাড়া করলে দলটি চুরির জিনিসপত্র নিয়ে ওপারে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে হাতুড়ি, গ্রিল কাটার যন্ত্র বিএসএফ জওয়ানেরা উদ্ধার করেছে। চুরি হয়ে যাওয়া জিনিসপত্রের মূল্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা।
সাত সকালে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বিষয়টি দেখা মাত্রই চুরির খবর এলাকায় চাউর হয়ে যায়। এর পরে বিএসএফ জওয়ানদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। চুরির মালপত্র দ্রুত উদ্ধারের দাবিতে সরব হন বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই খোলা সীমান্ত এলাকার সুযোগ নিয়ে ‘ওপারে’র দুষ্কৃতীরা মাঝেমধ্যেই এপারে হানা দেয়। গরু চুরি, ছিনতাই-সহ নানা ধরণের ঘটনা ঘটে। এমনকি, এপারে এসে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের মদতে বাসিন্দাদের হুমকি দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। এতে এলাকার বাসিন্দারা নিরাপত্তা হীনতার ভুগছেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১৯৯৪ সালে এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে একটি গ্রামে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এর পরে বাসিন্দাদের বাঁধায় তা আর দেওয়া হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি এবং বাস্তব পরিস্থিতিতে মাথায় রেখে দেড় বছর আগেও পুলিশ-প্রশাসন এবং বিএসএফের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। |