|
|
|
|
টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি আমন চাষে
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
গত বছর জেলায় ১৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৪৬ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হয়েছিল। চাল সংগ্রহ হয়েছিল ১১ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। কিন্তু, এ বার? উত্তর খুঁজতে গিয়ে চিন্তায় পড়ছে কৃষি দফতর। কারণ, বন্যা পরবর্তী প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বার কৃষি ক্ষেত্রে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে, আমন ধানের ফলন এক ধাক্কায় অনেকটা কমবে। সব মিলিয়ে ৪৯ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এর জেরে প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৯৫৫ মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হবে। এই পরিমাণ ধান থেকে চাল সংগ্রহ হওয়ার কথা ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৯৭০ মেট্রিক টন।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এই রিপোর্ট প্রাথমিক। বুধবার পর্যন্তও কিছু এলাকায় জল জমে রয়েছে। জল নামলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসেব করা সম্ভব হবে। টানা বৃষ্টি এবং বাঁধের ছাড়া জলে অন্তত ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।সব থেকে বেশি ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে দাসপুর ১-এ। এলাকার প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির জেরে। তারপরই রয়েছে কেশপুর এবং দাসপুর ২। দুই এলাকার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর করে জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। দাঁতন ১-এ প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বন্যার জলে। |
|
দাঁতনে জলমগ্ন ধানের জমি। —নিজস্ব চিত্র। |
মাস দুয়েক আগে, গত অগস্টেই এক দফা বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় পশ্চিম মেদিনীপুরে। টানা বৃষ্টিতে জেলার ৬৮৪টি মৌজার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই সংখ্যক মৌজার প্রায় ৩০ হাজার ৫২৭ হেক্টর জমির চাষ নষ্ট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন অন্তত ১ লক্ষ ৭ হাজার কৃষক। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে মিনিকিট বিলি করতে উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকার। ঠিক হয়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যে মিনিকিট দেওয়া হবে, তার মধ্যে থাকবে যে কোনও একটি শষ্যের বীজ এবং সার। শষ্যের মধ্যে থাকবে ধান, সর্ষে, ছোলা, মসুর, বাদাম, মুগ। ধানের ক্ষেত্রে ৬ কেজির বস্তা হবে। সর্ষের ১ কেজি। ছোলার ৪ কেজি। মসুরের ৪ কেজি। বাদামের ১৫ কেজি। মুগের ৪ কেজি। সঙ্গে ১০ কেজি সারের বস্তা। এই মিনিকিটে রবি মরসুমে চাষ হবে। পূর্ব মেদিনীপুর সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ জেলার ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মিনিকিট দেনও। ঠিক ছিল, এরপর ব্লকস্তরে মিনিকিট বিলি শুরু হবে। সেই মতো তালিকাও তৈরি হয়। তবে, তার আগেই ফের বন্যার কবলে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা।
অগস্টে সব মিলিয়ে ৬৮৪টি মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আর এ বার সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ১৮৫টি মৌজা। এই সংখ্যক মৌজার মধ্যে ওই ৬৮৪টি মৌজাও রয়েছে। অর্থাৎ, এই সব এলাকায় কম সময়ের মধ্যে দু’-দু’বার ক্ষতিগ্রস্ত হল। বন্যার জেরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ক্ষেত্রেই। বন্যা পরবর্তী প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এ বারের বন্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা। উদ্যান পালনে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকার কৃষকদের পাশে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সব রকম সাহায্য করা হবে।” কৃষকদের বক্তব্য, চাষের খরচ উত্তরোত্তর বাড়ছে। সার, কীটনাশকের দাম থেকে শ্রমিকদের মজুরি-সব কিছুই। এই পরিস্থিতিতে সরকার না-পাশে থাকলে সমস্যা আরও বাড়বে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় চাষের পরিস্থিতি যে খারাপ, তা মানছে প্রশাসনও। ২০১১ সালে জেলায় ৫ লক্ষ ৫২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছিল। হেক্টর পিছু ফলন হয়েছিল ৪০.০৪ কুইন্ট্যাল। ২০১২ সালে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। হেক্টর পিছু ফলন হয় ৪১.১৭ কুইন্ট্যাল। তবে, এ বার কী পরিস্থিতি হবে, তা ভাবতে গিয়েই চিন্তায় পড়ছে কৃষি দফতর। এ বার সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেশপুরের এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কইগেড়্যায় বাড়ি শরৎচন্দ্র মহিষের। ৫ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ৪০ কুইন্ট্যাল ধান উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল। তাঁর আক্ষেপ, “বন্যায় সবই শেষ হয়ে গেল। দু’মাস আগে কিছু ক্ষতি হয়েছিল। তারপর ফের রোওয়া হল। এ বার জল জমে সব নষ্ট হয়ে গেল। জল নামার পর জমি থেকে কিছু পাব বলে তো মনে হয় না!”
|
পুরনো খবর: জল নামলেও পচছে ধান-সব্জি |
|
|
|
|
|