|
|
|
|
বাগানে ফুল ফোটাতে করিম যখন ‘কবীর খান’
তানিয়া রায় • কলকাতা
মোহনবাগান-২ (সাবিথ, কাতসুমি)
সালগাওকর-১ (ড্যারেল) |
চক দে...’-র কবীর খান-ই কি শেষমেশ এ বারের আই লিগে বাগানে প্রথম জয়ের ফুল ফোটালেন?
ওডাফাহীন বাগানে একজন মালির সন্ধানে মরিয়া ছিলেন করিম। বুধবার যুবভারতীতে নামার আগে পর্যন্ত আই লিগে এক নম্বরে থাকা সালগাওকরের বিরুদ্ধে সবুজ-মেরুনের জয়ের পিছনে কি কবীর খানের অদৃশ্য প্রভাব? ‘চক দে’-র স্টাইলেই তো বাগানের মরক্কান কোচ তাঁর ফুটবলারদের বলেছেন, “তোমরা প্রথমে নিজের জন্য খেলো, তার পর ক্লাবের জন্য, তার পর কোচের জন্য...!” এমনকী জিতে উঠে সাংবাদিক সম্মেলনেও এ দিন একই উক্তি করেন করিম।
তবু ম্যাচের পর যুবভারতীর টানেল দিয়ে সবার শেষে যখন তিনি বেরিয়ে এলেন, দেখে মনে হচ্ছিল যেন ঝড় বয়ে গিয়েছে তাঁর উপর দিয়ে। কপালে ঘামের চেয়েও বলিরেখাগুলো আরও স্পষ্ট। মোহনবাগান আই লিগের পাঁচ নম্বর ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের মুখ দেখার পরেও বিষণ্ণতা ঘিরে রেখেছিল মরক্কান কোচকে।
বাগানে এখন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’-র অবস্থা। কোনও ম্যাচ কোনওক্রমে উতরে গেলেও, পরের ম্যাচেই কী হবে কেউ জানে না! এমনিতেই টিমটা চোট-আঘাতে জর্জরিত। তার মধ্যেই শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবে আর্থিক সমস্যায় ফিজিক্যাল ট্রেনার জোনাথন-কে ছেঁটে ফেলতে হয়েছে। জিতলেও সালগাওকর ম্যাচের ইনজুরি টাইমে মাঝমাঠে বল ধরে খেলার একমাত্র লোক ডেনসন লালকার্ড (জোড়া হলুদ কার্ডে) দেখে করিমের দুশ্চিন্তা দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। অনামী রাজীব ঘড়ুই-ই পরের মুম্বই এফসি ম্যাচে করিমের এখন ভরসা। বাগান কোচ আই লিগে প্রথম জেতার দিনও তাই সব বলছিলেন, “তবু আমি চিন্তিত। একটা ম্যাচ জিতলেই তো আর হবে না। পরের ম্যাচের কথা এখন থেকেই ভাবতে হচ্ছে। টানা তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে। শিডিউলটাও খুব পরিশ্রমসাধ্য। ফুটবলারদের ফিট রাখাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।” |
করিমের কোলে কাতসুমি। বুধবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
সালগাওকরকে হারালেও মোহনবাগান যে অসাধারণ খেলেছে মোটেই নয়। নড়বড়ে রক্ষণ, মাঝমাঠ এখনও সংঘবদ্ধ নয়। ওডাফা-হীন আক্রমণভাগে এরিক মুরান্ডার নড়াচড়া, টার্নিংয়ের সঙ্গে কচ্ছপের তুলনা চলতে পারে। হয়তো এ সবের জন্য ফুটবলারদের মতোই প্রথম জয়ের আনন্দেও উচ্ছ্বসিত হতে পারলেন না বাগান কোচ। সাংবাদিক সম্মেলনে করিমের মন্তব্য, “দু’জন অভিজ্ঞ-পরিণত ফুটবলার দরকার আমার। দেবাশিসকে (দত্ত) বলেছি।”
এ দিন আসলে করিমের দলের চেয়েও খারাপ খেলেছে ডেরেক পেরিরার সালগাওকর। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বাগান। তবু হাফটাইমের আগে পর্যন্ত এরিক, কাতসুমিদের হাতে গোণা দু’-একটা মুভ ছাড়া বাকি সময়টা ম্যাড়ম্যাড়ে। এমনকী প্রথমার্ধে তাঁদের প্রিয় দলের ফুটবলারদের বেহাল দশা দেখে হতাশ সবুজ-মেরুন সমর্থকদের উত্তেজিত হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল। কর্তাদের উপর নিজেদের ক্ষোভও উগড়ে দেন।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ বরং ঘটনাবহুল। রবিন্দরকে তুলে শৌভিক ঘোষকে নামানোর পর কিছুটা হলেও চনমনে দেখিয়েছে করিম-ব্রিগেডকে। ওই সময় ডেনসনের লম্বা পাস থেকে সালগাওকর গোলে সাবিথের নিখুঁত প্লেসিং এগিয়ে দেয় বাগানকে। এরপর হ্যামস্ট্রিং চোটে এরিক মাঠ ছাড়লে শঙ্কর ওঁরাওকে নামিয়ে ৪-৪-১-১ ছকে চলে যান করিম। এই স্ট্র্যাটেজিতে সাফল্যও পান। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ডান পায়ে কাতসুমির গোলার মতো শট নড়িয়ে দেয় সালগাওকরের রক্ষণ। অবশেষে আই লিগে খাতা খুললেন বাগানের জাপানি বোমা।
দু’গোলে পিছিয়ে পড়ার পর সালগাওকরের যেন ঘুম ভাঙে। কাউন্টার অ্যাটাকে ইচে, কিংশুকদের বেশ কয়েকবার বিপাকে ফেলে দেন ফার্নান্ডেজ, চিকাওয়ালি-রা। কিন্তু শিল্টনের দু’টো দুর্দান্ত সেভ শেষ পর্যন্ত স্বস্তি আনে সবুজ-মেরুন শিবিরে। ইচে ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে মিলাগ্রেসকে ফাউল করলে পেনাল্টি থেকে করা ড্যারেল ডাফি-র গোলটা সালগাওকরের কাছে নেহাতই সান্ত্বনা! |
মোহনবাগান: শিল্টন, রবিন্দর (শৌভিক), আইবর (প্রীতম), ইচে, কিংশুক, ডেনসন, জাকির, রাম, কাতসুমি, সাবিথ, এরিক (শঙ্কর)। |
|
|
|
|
|