তার গভীর জঙ্গলের আড়ালে কত যে রহস্য লুকিয়ে আছে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম অরণ্য আমাজনের এই রহস্য উদ্ধারেই নেমেছিলেন এক দল গবেষক। ব্রাজিল এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ)-এর যৌথ উদ্যোগে গত চার বছর ধরে চলছিল তাঁদের এই গবেষণা। এখনও পর্যন্ত প্রায় চারশো নতুন প্রজাতির খোঁজ মিলেছে।
সেই তালিকায় রয়েছে তিতি নামে এক হনুমানের কথা। গবেষক টমাস ডেফলার জানালেন, এরা এক সঙ্গে দলবেঁধে বসে থাকে। যদি তারা একে অপরের আচরণে খুশি হয় তা হলে মুখ দিয়ে অদ্ভুত একটা শব্দ করে সেই খুশি প্রকাশ করে। গবেষণায় উঠে এসেছে খুবই লাজুক এক ধরনের গিরগিরিটির কথা। এদের দেখতে অনেকটা আগুনের শিখার মতো। হাতের বুড়ো আঙুলের মাপের ‘থিম্বল ফ্রগ’-ও রয়েছে এই তালিকায়। তবে সব থেকে আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হল এক ধরনের পিরানহা মাছ। আমাজনের মিষ্টি জলের এই পিরানহারা মাংস থেকে একটু দূরেই থাকে। বরং নিরামিষ খাবারেই এদের যত তৃপ্তি। খিদে পেলে এরা জলের শ্যাওলা খেয়েই পেট ভরায়। |
কিন্তু প্রায় তিনটে ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের আমাজনের এই অরণ্যে এত নতুন নতুন প্রজাতির খোঁজ পেয়ে গবেষকেরা যতটা না উৎফুল্ল বরং তার থেকে অনেক বেশি আশঙ্কিত তাঁরা। কারণ পর্যটনের প্রসারে খুব শিগগির এই অঞ্চলের একাংশ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নির্বিচারে চলছে গাছ কাটার কাজ। ফলে এদের ভাল ভাবে সংরক্ষণ করার আগেই হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এরা, এমনই আশঙ্কা গবেষকদের। টমাস যেমন জানালেন, তিতি হনুমানের বিচরণক্ষেত্র ওই জঙ্গলের মাত্র ৬০ মাইল এলাকা। তাই কোনও কারণে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে এদের বাসস্থান সঙ্কট দেখা দেবে।
টমাসদের মতে, এ রকম হাজার হাজার প্রজাতি লুকিয়ে আছে আমাজনের বুকে। যদি এখনই এদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা শুরু না করা যায়, তা হলে তাদের সন্ধান পাওয়ার আগেই হয়তো লুপ্ত হয়ে যাবে পৃথিবীর বুক থেকে। |
ছবি ডব্লিউডব্লিউএফ-এর সৌজন্যে। |