মাকড়সা বাহিনীর হানার মুখে পড়ে ঝাঁপ ফেলে দিতে হল স্কুলের। বুধবার এমনই এক বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকল গ্লস্টারশায়ারের ‘দ্য ডিন অ্যাকাডেমি’। হানাদারের নাম ফলস উইডো। লম্বা লম্বা পা, গায়ের রং চকচকে কালো, পেটের দিকে রয়েছে ঘিয়ে রঙের দাগ। লম্বা-চওড়ায় মেরেকেট একটা পঞ্চাশ পয়সার মতো হবে। তবে আকারে যত ছোটই হোক না কেন, এই আটপেয়কে কিন্তু হেলায় উড়িয়ে দিতে পারছেন না ব্রিটেনবাসী। বরং বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিলেতে যে ১২টি বিষাক্ত মাকড়সা পাওয়া যায় তার মধ্যে সব চেয়ে ভয়ানক এই প্রজাতিটাই।
মঙ্গলবার বিকেলে স্কুলের কম্পিউটার টেকনোলজি ব্লকে প্রথম দেখা মেলে এই বিষাক্ত আটপেয়র। তখন ঠিক হয়েছিল এই অংশটুকু শুধু বন্ধ রেখে খবর দেওয়া হবে পেস্ট কন্ট্রোলে। একটু পরেই খবর আসে, স্কুলের বাগানের ছাদে এবং ময়লা ফেলার জায়গায় পাওয়া গিয়েছে আরও এক ঝাঁক ফলস উইডো। আর কোনও ঝুঁকি নেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। চিঠি দিয়ে অভিভাবকদের জানিয়েছেন, ছেলে-মেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই বুধবার গোটা দিন বন্ধ রাখা হবে স্কুল।
গ্লস্টারশায়ার ছাড়াও লন্ডন, বার্মিংহাম, ওয়েলসের মতো জায়গাতেও ইদানীং রীতিমতো চোখে পড়ছে এই ফলস উইডোদের। প্রাণী সম্পদ সংরক্ষণ কেন্দ্রের এক কর্তা জন টুইডেল জানিয়েছেন, বছরের এই সময়টাতেই আকারে বড় হয় এরা। সাধারণ ভাবে দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডে এদের বাস হলেও আবহাওয়া বদলের ফলেই চেনা আস্তানা ছেড়ে উত্তরের দিকে বেরিয়ে পড়ে এরা।
প্রাণী বিশারদদের অনুমান, যার আতঙ্কে ব্রিটেনবাসী এতটাই ভীত তার আদি বাসস্থান কিন্তু এই দেশ নয়। ১৮৭০ নাগাদ ক্যানারি দ্বীপ থেকে ফলের ঝুড়িতে ইংল্যান্ড পাড়ি দেয় ফলস উইডোরা। এর জাতভাই ব্ল্যাক উইডোদের মারণ বিষ থাকলেও তার তুলনায় কিন্তু অনেকটাই নিরীহ ফলস উইডোরা। বিষ থাকলেও এদের কামড়ে আজ অবধি ব্রিটিনে মারা যাননি কেউ। জন টুইডলের দাবি, নিজেরা বিপদে না পড়লে সহজে আক্রমণ করে না এই মাকড়সারা। তাও আবার পুরুষরা নয়, বিষ কামড় দিতে পারে কেবল মেয়েরাই। ছেলেদের থেকে আকারেও কিছুটা বড় হয় এরা।
ফলস উইডোর কামড়ে প্রাণহানি না ঘটলেও গায়ে ফোস্কা পড়া, বুকে ব্যথা বা আঙুলে পুঁজ জমে যাওয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে ব্রিটেনে। গত বছর বৃদ্ধ জন কাটলিনের গোড়ালিতে কামড়ে দেয় একটা ফলস উইডো। নকল পা লাগানোর মতো হাল হয়েছিল তাঁর। ডিন অ্যাকাডেমির কোনও পড়ুয়াকে মাকড়সা কামড়ায়নি ঠিকই। তবু সাবধানের মার নেই। বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলেই তারা যেন ডাক্তার দেখিয়ে নেয়, আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন স্কুলের কর্তৃপক্ষ।
আঘাত না পেলে এরা কামড়াবে না, বিশেষজ্ঞরা আশ্বাস দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু লম্বা কালো আট পায়ের ভয় এখনই পুরোপুরি কাটছে না ব্রিটেনবাসীর। |