লুপ্তপ্রায় এশীয় চিতার দেখা পাওয়া গেল ইরানের অরণ্যে
জিপ ঘুরিয়ে ঘরে ফেরার পালা। দূরে ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল দীর্ঘদেহী প্রাণীটি। গাঢ় হলুদের ওপর কালো বুটি ছাপ। শুধু দেহটাই এক মিটারের উপর লম্বা। লেজটা আরও ৬০ থেকে ৮০ সেমি। বিশ্বের দ্রুততম প্রাণীটির নাম এশিয়াটিক চিতা (এশীয় প্রজাতির চিতা)। পিছনে তার চার-চারটে ছানা।
ঘটনাস্থল ইরানের তুরান জাতীয় অরণ্য। চোখের পাতা পড়ছিল না জিপে সওয়ার চার বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞের। ইরান ছাড়া বিশ্বের প্রায় সর্বত্র নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে এশিয়াটিক চিতা। তাই একে ইরানিয়ান চিতা বলেও ডাকা হয়। যদিও এখন ইরানেও সংখ্যাটা কমতে কমতে হাতে গোনা। ‘ইরানিয়ান চিতা সোসাইটি’র হিসেব অনুযায়ী বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির সংখ্যা এখন ৪০-এর কিছু বেশি। ‘পার্সিয়ান ওয়াইল্ডলাইফ হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর প্রোজেক্ট ম্যানেজার দেলারাম আশায়েরি বলেন, “ওরা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা বার করে ছবি তুলতে শুরু করে দেয়।” চার-চারটে জ্বলজ্বলে চোখ তখন স্থির চক্ষে তাকিয়ে রয়েছে সরাসরি ক্যামেরার দিকে।
গোটা ঘটনাটিকে নিজেদের সাফল্য হিসেবেই দেখছে ইরানের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। ইরান ছাড়া অন্য দেশগুলোতে এশিয়াটিক চিতাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে কবেই। এক সময় আরব দেশগুলো থেকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ভারত সর্বত্রই ছিল এশিয়াটিক চিতার অবাধ বিস্তার। বিড়ালের এই মাসিই একমাত্র মানুষের পোষ মানে। আগেকার দিনে রাজা-মহারাজারা শিকার ধরতে নিয়ে যেত এদের। শোনা যায়, মুঘল সম্রাট আকবরের কাছে হাজারেরও বেশি পুষ্যি চিতা ছিল। ভারতে চিতার অস্তিত্বের শেষ সন্ধান মেলে ১৯৪৭ সালে।
২০০৯ সাল নাগাদ ঠিক হয়েছিল, ভারতে কোনও ভাবে ফিরিয়ে আনা হোক পুরনো সেই বাসিন্দাদের। কিন্তু তাদের বাস তো তখন শুধুই ইরানে। সেখানেও এক রকম বিলুপ্তপ্রায়। তাই সে প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। পরে এক গবেষণায় জানা যায়, ৫০০০ বছর আগে আফ্রিকান চিতার থেকে জন্ম হয়েছিল জাতভাই এশিয়াটিক চিতার। তাই স্থির হয়, আফ্রিকান চিতাই নিয়ে আসা হবে ভারতে। পরে তা-ও খারিজ হয়ে যায়। কারণ অন্য একটি গবেষণাপত্র খারিজ করে দেয় আগের তথ্যটি।
’৯০-এর দশক থেকেই এশিয়াটিক চিতার একমাত্র আস্তানা হয়ে উঠেছিল ইরান। কিন্তু সেখানেও চোরাশিকারিদের আনাগোনা লেগেই আছে। গত দু’দশক ধরে সেখানে চিতাদের অস্তিত্ব-রক্ষায় উঠেপড়ে লেগেছিলেন সংরক্ষণবিদরা। তাই এ বারের সাফল্যে রীতিমতো উল্লসিত তাঁরা। আশায়েরি বললেন, “গত কয়েক বছর ধরে আমরা কড়া নজর রাখছিলাম তুরানের ওপর। কিন্তু গোটা একটা চিতা-পরিবার একসঙ্গে, কখনও চোখে পড়েনি। বিশেষ করে, মায়ের সঙ্গে ছানারা।” উচ্ছ্বসিত গলায় তিনি বলে চললেন, “প্রমাণ হয়ে গেল, এশিয়াটিক চিতা বেঁচে আছে, বাচ্চা হয়েছে, একটা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে জঙ্গলের গভীরে।”
একই কথা শোনা গেল ইরানিয়ান চিতা সোসাইটি (আইসিএস)-এর কর্ণধার মোর্তেজা এসলামির মুখে। তাঁর কথায়, “আগে এশিয়াটিক চিতা নিয়ে কথা হলে, সবাই বলত ইরানে গেলে দেখা মিলবেই। এখন তাঁরাই বলে, আর কতগুলো বেঁচে আছে?” এখনও চোরাশিকারিদের হাতে বছরে একটা-দু’টো করে চিতা নিধনের খবর শোনা যায়, জানালেন মোর্তাজা।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ইরানের পরিবেশ মন্ত্রক দেশের ১৪টি সংরক্ষিত অরণ্যে নজরদারি শুরু করেছে চোরাশিকারিদের হাত থেকে প্রাণীটিকে রক্ষা করার চেষ্টায়। আইসিএস-এর মতো কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ময়দানে নেমেছে। যদিও নগরায়ণের লালচোখ রয়েছেই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটির অরণ্যের দিনরাতে। প্রচার সত্ত্বেও অভয়ারণ্যের কাছাকাছি সড়কপথ তৈরির কাজ চলছেই। কিংবা জঙ্গল লাগোয়া খনি অঞ্চলে খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই রয়েছে। তাই এশিয়াটিক চিতার সন্ধান চোরাশিকারিদের জন্য সুখবর, নাকি এরাও কালে কালে বলি হবে নগরায়ণের হাতে, তা বলে দেবে সময়ই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.