কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ করা সার্কিট ট্যুরিজম তহবিলের টাকায় শ্যামপুরের গড়চুমুকে নদী বাঁধ মেরামতি এবং গাড়ি রাখার স্ট্যান্ড তৈরিতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। অভিযোগের তির হাওড়া জেলা পরিষদের পূর্বতন বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ড-এর বিরুদ্ধে। যার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের বর্তমান বোর্ড। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কল্যাণ ঘোষ বলেন, “জেলা বাস্তুকারকে সঙ্গে নিয়ে আমি নিজে যে এলাকায় কাজ হয়েছে তার সরেজমিনে যাচ্ছি। এর পরে তদন্তের প্রয়োজনে আইনানুগ ভাবে যা করণীয় তা স্থির হবে।”
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, যে সব কাজ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে, তা করা হয়েছিল আগের বোর্ড-এর শেষ দিকে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে। গড়চুমুক হরিণপ্রকল্পের ভিতরে জেলা পরিষদের একটি বাংলো রয়েছে যা ‘পুরনো বাংলো’ নামে পরিচিত। এটি দামোদরের তীরে অবস্থিত। |
এই দৃশ্যের টানেই গড়চুমুকে আসেন পর্যটকেরা।—নিজস্ব চিত্র। |
এই বাংলোর সামনের এলাকাতেই পাড় বাঁধানো হয়। দু’টি পর্যায়ে কাজটি হয়। এই কাজের জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অনুমিত ব্যয় ছিল ৬৬ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, কাজটির জন্য সর্র্বোচ্চ এই পরিমাণ টাকা জেলা পরিষদ খরচ করতে পারত।
অনুমিত ব্যয়ের থেকে ২১ শতাংশ কম দর দিয়ে একটি ঠিকা সংস্থা কাজটি করে। ফলে জেলা পরিষদের খরচ হয় ৪৭ লক্ষ টাকা। অনুমিত ব্যয় থেকে কাজ শেষ করার পরেও জেলা পরিষদের বেঁচে যায় প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা। এই টাকায় জেলা পরিষদ বাড়তি কিছুটা নদীর পাড় মেরামত করে। কাজটি দেওয়া হয় একই ঠিকা সংস্থাকে। অভিযোগ, এই ১৯ লক্ষ টাকার কাজটি হয়েছে নিতান্ত দায়সারা ভাবে। এর জন্য জেলা পরিষদের পূর্ত স্থায়ী সমিতিতে কোনও প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়নি যা কিনা বাধ্যতামূলক। শুধু তাই-ই নয় এই কাজটি করা হয়েছে বিনা টেন্ডারে।
গড়চুমুকেই হরিণ প্রকল্পের কাছে পর্যটকদের জন্য একটি পার্কিং প্লেসও করা হয় একই সময়ে। এর জন্য জেলা পরিষদ খরচ ধরে ২৩ লক্ষ টাকা। ২৫ শতাংশ কম দর দিয়ে অন্য একটি ঠিকা সংস্থা কাজটি করে। ফলে কাজটির জন্য প্রকৃত খরচ হয় প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। বেঁচে যায় প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। এই টাকায় ওই ঠিকা সংস্থাকে দিয়েই বাড়তি কিছু কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ, এই কাজটিও করা হয় বিনা টেন্ডারে এবং জেলা পরিষদের পূর্ত স্থায়ী সমিতিতে কোনও অনুমোদিত প্রস্তাব ছাড়াই।
কল্যাণবাবু বলেন, “আগের বোর্ডের আমলেই দু’টি কাজের ক্ষেত্রে পৃথক ভাবে অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু তখন তাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরেও একই অভিযোগ আসে। তারপরেই বেনিয়মের বিষয়গুলি আমার নজরে পড়ে। এলাকা পরিদর্শনের পরে বুঝতে পারব কাজটি ঠিক কতটা হয়েছে। আগের বোর্ডের পূর্ত কর্মাধক্ষ্যের মদতেই এই সব বেনিয়ম হয়েছে বলে আমার সন্দেহ।” অভিযোগ উড়িয়ে বিগত বোর্ডের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দু’টি কাজেই বেনিয়ম হয়নি। আমি একার সিদ্ধান্তে কিছু করিনি। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ম মেনেই কাজ হয়েছে।” |