শিষ্যের মেয়েকে নিগ্রহ, ধৃত বধর্মানের আসারাম
তিনি জেলে। ইনিও শ্রীঘরে!
তিনি যোধপুরের। ইনি বর্ধমানের।
তিনি আসারাম। ইনি করুণাময়। ‘কীর্তিমান’ দু’জনেই। প্রথম জনের ঘাড়ে ঝুলছে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। দ্বিতীয় জন অভিযুক্ত যৌন নিগ্রহে।

ধৃত করুণাময়
নিজস্ব চিত্র।
যোধপুরে নিজেরই আশ্রমের স্কুলের এক নাবালিকা ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আসারাম বাপুর বিরুদ্ধে। ঢি ঢি পড়েছে দেশজুড়ে। বর্ধমানের মাধবডিহি থানার কেওটা গ্রামের ‘বাবা’ করুণাময় মুখোপাধ্যায় অবশ্য ধারে-ভারে আসারামের সঙ্গে তুলনীয় নন। কিন্তু, অভিযোগে ভারে ছাপিয়ে গিয়েছেন আসারামকে। নিজেরই শিষ্যের নাবালিকা কন্যাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে তিনি আপাতত ফাটকে। গত সোমবার চন্দননগরের লালবাগান থেকে গুরুদর্শনে যান এক শিষ্য। সঙ্গে স্ত্রী আর বছর তেরোর মেয়ে। দিন তিনেক গুরু করুণাময়ের আশ্রমে কাটিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শিষ্য। মেয়ে থেকে যায় আশ্রমে। তাকে আগে দীক্ষাও দিয়েছিলেন করুণাময়। ধর্মপ্রাণ বাবার সাধ ছিল, গুরুর ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ধর্মকর্মের পাঠ নেবে মেয়ে।
তেমনটাই চলছিল। দিন সাতেক থাকার পরে তিনি মেয়েটিকে বলেন, তিনিই তাকে সঙ্গে করে চন্দননগর পৌঁছে দেবেন। পথে বর্ধমানেরই কাইতি গ্রামে তাঁর আরও একটি আশ্রমে ঘুরে যাবেন চন্দননগরে। সোমবার কাইতিতে পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধে নামে। বছর চল্লিশের গুরু তাঁর মেয়েটিকে বলেন, “আজ থেকে যা। কাল বাড়ি নিয়ে যাব তোকে।” মেয়েটি পুলিশকে জানিয়েছে, রাতে খুব কাশি হচ্ছিল তার। গুরুদেব নিজের হাতেই তাকে সিরাপ খেতে দেন। যা খেয়ে সে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তার অভিযোগ, ওই অবস্থায় তাকে বিবস্ত্র করে তার উপরে শারীরিক নির্যাতন চালান গুরুদেব। সম্বিত ফিরে পেতেই চিৎকার করে ওঠে মেয়েটি। তার অভিযোগ, “চেঁচাতেই গলায় ছুরি ঠেকিয়ে গুরুদেব বলেন, চিৎকার করলে মেরে ফেলব! কাউকে জানালেও একই দশা হবে।”
কষ্ট গিলে তখনকার মতো সে চুপ থাকে বলে পুলিশকে জানায় মেয়েটি। তাকে নিয়েই মঙ্গলবার করুণাময় আসেন চন্দননগরে শিষ্যের বাড়িতে। সেখানে তখন ভক্তের ঢল। দেদার আশীর্বাদ বিলিয়ে ক্ষান্ত দেন করুণাময়। বেলা গড়িয়েছে। গুরুদেব ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর। পেশায় কাঠমিস্ত্রি মেয়েটির বাবা অবশ্য সাধ্যমতো সেবার আয়োজন করেই রেখেছিলেন।
মেয়েটি তত ক্ষণে গুরুদেবের ‘লীলাখেলার’ কথা জানিয়েছে অন্দরমহলে। খবর ছড়িয়ে পড়ে পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যেও। তবে গুরু সেবায় ত্রুটি রাখেনি পরিবারটি। গলায় আঁচল জড়িয়ে অন্নব্যঞ্জন পরিবেশন করেন বাড়ির মেয়েরা। খাওয়া-দাওয়ার পরে যোগনিদ্রায় যান গুরুদেব। বাড়ির লোকজন আলোচনায় বসেন। খবর দেওয়া হয় থানায়। বিকেলের দিকে নিদ্রাভঙ্গের পরে পুলিশ দেখে বাবাজির চক্ষু ছানাবড়া। পুলিশকে তিনি বলার চেষ্টা করেন, মেয়েটি বুঝতে ভুল করেছে। মহাপুরুষের লীলা কবেই বা বুঝেছে জাগতিক মানুষ! পুলিশ ভোলেনি। করুণাময়কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। বুধবার তাঁকে ১৪ দিন জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন চন্দননগর আদালতের বিচারক। এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ বলেন, “নিগৃহীতার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ধর্মগুরুকে। আরও কেউ যুক্ত কিনা, দেখা হচ্ছে।” চন্দননগর হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। ঘটনায় স্তম্ভিত মেয়েটির পরিবার। বাবা বলেন, “প্রায় তেরো বছর আগে ওঁর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলাম। একরত্তি মেয়েটাকে তো উনি জন্মাতে দেখেছেন! তার পরেও এই কাণ্ড! বাড়িতে দেখছি লোকটার ছবি আর টাঙিয়ে রাখা যাবে না।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.