প্রবন্ধ ২...
জীবনের পাঠ তুলে দিলেন?
নেক কিছু নিয়ে অনেক শোরগোলের আড়ালে অনেক কিছুই আবার নিঃশব্দে ঘটে যায়। আমরা খেয়াল করিনি, স্কুলপাঠ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘বিতর্কিত’ জীবনশৈলী পাঠ্যক্রম। স্কুলগুলিকে কিছু না জানিয়েই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গত দু’বছর যে বিষয়-ভিত্তিক সাপ্তাহিক রুটিন পাঠিয়েছে তাতে জীবনশৈলীর জন্য একটি ক্লাসও বরাদ্দ করা হয়নি। যদিও পর্ষদ প্রশাসন জানিয়েছে, স্কুলে জীবনশৈলীর পাঠ থাকবে। তবে তা জীবনশৈলী নামে কোনও একটি নির্দিষ্ট বইয়ের মাধ্যমে নয়। বিভিন্ন নিয়মিত বিষয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হবে জীবনশৈলীর প্রাসঙ্গিক অধ্যায়গুলি। এই ব্যবস্থা কতটা বাস্তবসম্মত? শিক্ষকদের অনেকেরই এ বিষয়ে গভীর সংশয় আছে।
ছ’বছর আগে বহু বিতর্ক পার হয়ে স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত জীবনশৈলী চালু করা হয়েছিল। প্রধাণত বয়ঃসন্ধির সময়ে কিশোর-কিশোরীদের শরীর এবং মনে যে সব পরিবর্তন আসে তা মাথায় রেখেই জীবনশৈলীর বিষয়গুলি ঠিক করা হয়েছিল। পড়ুয়াদের কী ভাবে বিষয়টি পড়ানো হবে, রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের বহু শিক্ষককে তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচও হয়েছিল। সে সবই এখন ইতিহাস। নিষ্ফল ইতিহাস বললে ভুল হয় না বোধহয়।
বছর ছ’য়েক আগে যখন স্কুলে জীবনশৈলী পড়ানো শুরু করা হয় সেই সময় থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। শিক্ষক এবং বিদ্বজ্জনদের একাংশ স্কুলে জীবনশৈলী পড়ানোয় আপত্তি করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, জীবনশৈলীর নাম করে ‘যৌনশিক্ষা’ দেওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের। পাল্টা যুক্তি হল, বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের নানা স্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা খোলসা করে কিশোরকিশোরীদের না বললে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক বিষয়গুলি গোপন করার প্রবণতা থেকে যায়। তা থেকে যৌন অপরাধের দিকে কেউ কেউ পা বাড়ায়। একাধিক মনোবিদ এই মত দিয়েছিলেন।
বিতর্ক চললেও, বিভিন্ন স্কুলে জীবনশৈলী পড়ানো শুরু হয়েছিল। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোনও রকম ঘোষণা ছাড়াই স্কুলের সাপ্তাহিক রুটিনে জীবনশৈলীর জন্য ক্লাস বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। কেন বন্ধ করে দেওয়া হল জানতে চাইলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তারা বলেন, আলাদা করে না পড়ালেও বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এত দিন না হলেও তা অবশ্যই আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করা হবে। শিক্ষকরা অনেকেই অবশ্য এ কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁদের মতে, অন্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করে জীবনশৈলীর পাঠ সম্ভব নয়। সমালোচকদের অভিযোগ, সরকার জীবনশৈলী বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিতে চাইছে না।
সরকারি নীতিকাররা এই অভিযোগ মানেন না। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা এন সি ই আর টি’কে অনুসরণ করে বিজ্ঞানের একটিই বই করছেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই জীবনশৈলীর বিষয়গুলি তুলে ধরা হবে।
কিন্তু জীবনশৈলীর অনেকটাই কি বিজ্ঞানের বাইরের বিষয় নয়? আত্ম-উপলব্ধি, আত্মবিশ্বাস এবং মূল্যবোধ গঠনের শিক্ষা কি বিজ্ঞান বইয়ের পাঠ্যসূচিতে থাকতে পারে? পরিবার ও সমাজে তাদের স্থান কোথায়, কী করণীয়, বিজ্ঞান বইয়ের মাধ্যমে কি কিশোরকিশোরীদের তা বোঝানো সম্ভব?
কোনও কোনও মহল থেকে জীবনশৈলীকে ‘সেক্স এডুকেশন’ বলে প্রচার করা হয়েছিল। ভুল প্রচার। অথচ দেখেশুনে মনে হয়, এই ভুলটাই সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করেছে। হয়তো বা গূঢ়তর কারণও আছে এর পিছনে। শোনা গেছে, নতুন সরকারের বন্ধু একটি দলকে খুশি করতেই জীবনশৈলীর উপর নিঃশব্দে কোপ পড়েছে।
কারণ যা-ই হোক, পরিণাম দুর্ভাগ্যজনক। অনেক স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, যে পড়ুয়া একটানা চার-পাঁচ বছর জীবনশৈলী পঠনের মাধ্যমে বড় হচ্ছিল তাদের অনেকের আচার-আচরণে লক্ষ করা গিয়েছে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন। এই সম্ভাবনাটিকে বিসর্জন দেওয়া ঠিক হল কি? বিশেষত কিশোরদের মানসিক বিকাশের বিকৃতি নিয়ে চার দিকে এত কথা, এত পরামর্শ, এত বিতর্ক, এমন একটা সময়ে যথার্থ জীবনশৈলী শিক্ষা কিন্তু খুব জরুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.