সম্পাদক সমীপেষু ...

কেদার থেকে শিব, কোন সূত্রে?
‘কেদার আবার’ (১২-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনে কেদার বাচকশব্দের অর্থ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে যৎকিঞ্চিৎ নিবেদন।
প্রতিবেদক ‘কেদার’ শব্দের অর্থ ব্যাখ্যায় এক মার্কিন গবেষিকার মত উদ্ধৃত করেছেন। Irrigated field অর্থে কেদার শব্দের নির্দেশ যে কোনও সংস্কৃত অভিধানে পাওয়া যায়। প্রশ্ন অন্যত্র। কেদার শিববাচক পদ হয়ে ওঠে কোন সূত্রে?
কঃ অর্থ জল (তুলনীয় শব্দ অ্যাকোয়া), ‘দার’ তো পত্নীর বোধক পদ। আবার কঃ-র আরেক অর্থ মস্তক বা শিরোদেশ। জল যাঁর পত্নী এবং তিনি স্বামীর শিরস্থ। অর্থাৎ জলরূপিণী গঙ্গা যাঁর পত্নী। সেই শিবের জটা বিহারিণীগঙ্গা তাঁর পত্নী। অর্থাৎ বহুব্রীহি সমাস গঠনে কেদার গঙ্গাধর শিবের বাচক। কঃদার নিপাতনে কেদার। যেমন খঃচর থেকে খেচর।
মেঘদূতের পূর্বমেঘ অংশে চতুঃপঞ্চাশৎশ্লোকে গোরীর সপত্নীরূপে শিবজটাবিহারিণী গঙ্গার লীলারূপ বিবৃত হয়েছে। ভরতচন্দ্রের ঈশ্বরী পাটনীকে স্বয়ং ঈশ্বরী তাঁর আত্মপরিচয় জ্ঞাপন করতে তাঁর সপত্নীর কথা বলেছেন, যিনি স্বামীর ‘শিরোমণি’।
অনেক টীকাকারের মতে কালিদাস পূর্বমেঘের একোনষষ্টিতম শ্লোকে কেদারের উল্লেখ করেছেন। মেঘ যেন চন্দ্রমৌলীর পদচিহ্নলাঞ্ছিত শিলাকে পরিক্রমা করে অগ্রসর হয়। “চরণন্যসমর্ধেন্দু মৌলেঃ... ভক্তিনম্র পরীয়াঃ”।
কাশীতে কেদারের মন্দির আছে। সেখানেও স্বয়ম্ভু লিঙ্গ পর্বতশৃঙ্গাকার। আর সেই মন্দির শংকরাচার্য প্রবর্তিত সম্প্রদায়ের পীঠবিশেষ। কাশীর কেদার ও হিমালয়স্থ কেদার উপাসনার ফল একই। নিবেদিতা তাঁর footfalls of Indian histry গ্রন্থে কাশীর কেদারপীঠকে গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
মেয়েদের সমস্যা কিন্তু সব সমাজেই
পশ্চিমবঙ্গ মুসলিম মহিলা সংগঠন’ ও ‘অ্যাকশন এড’-এর উদ্যোগে আয়োজিত প্রথম মুসলিম মহিলা কনভেনশনের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা মালবী গুপ্তর ‘পারি না তো কী হয়েছে? এ বার পেরে যাব ঠিক’ (২৬-৯) প্রসঙ্গেই এই চিঠির অবতারণা। পশ্চিমবঙ্গের শহর-গ্রাম থেকে একত্রিত হওয়া গরিব মুসলমান মহিলাদের বঞ্চনা এবং মুসলমান সমাজের নানা অবিচারের খণ্ডচিত্র ফুটে উঠেছে লেখাটির প্রতি ছত্রে। কিন্তু একটা প্রশ্ন ওঠে। মুসলমান মেয়েদের যে সমস্যা, যে বৈষম্য, বিশেষ করে বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করার ব্যাপারে হেনস্থা বর্ণিত হয়েছে তা কি ইসলাম ধর্মাবলম্বী বা মুসলমান সমাজের নিজস্ব সমস্যা?
পারিবারিক গণ্ডি পেরিয়ে নিজেকে পুরুষের জগতে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা জাতি-ধর্ম-পারিবারিক-অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে অধিকাংশ মেয়ের সমস্যা। পিছিয়ে পড়া মুসলমান পরিবারের যে মেয়েটি পারিবারিক সম্মানের বলি হয়ে শারীরিক-মানসিক হেনস্থার শিকার হয়, তার থেকে অন্য কোনও ধর্মে বিশ্বাসী উচ্চবিত্ত পরিবারের এক গা গয়না পরা হোমমেকারের বাইরে কাজের অধিকারের ক্ষেত্রে তফাত খুব সামান্যই। আসলে পুরুষতন্ত্রের ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, রক্ষণশীলতা এবং অত্যাচারের আখ্যান কোনও একটি ধর্ম বা সামাজিক স্তরে আবদ্ধ থাকতে পারে না।
মুসলমান মহিলারা এগিয়ে আসছেন। নিজেদের অধিকারের সীমাবদ্ধতা তুচ্ছ করে সীমিত সামর্থ্যকে মনোবলের জোরে বৃহত্তর নারী আন্দোলনের রূপ দিচ্ছেন।
মোকাম
কবীর সুমন (‘সুমনামি’, ২২-৯) ‘মোকাম’ শব্দটি নিয়ে লিখেছেন। এ বিষয়ে কিছু কথা। সংসদ বাংলা অভিধানে লেখা হয়েছে, ‘মোকাম’ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘মুকাম’ শব্দ থেকে। অর্থ— বাড়ি, বাসস্থান, আস্তানা। হিন্দি অভিধানে লেখা হয়েছে— ঠহরনে কা স্থান। অর্থাৎ দাঁড়াবার জায়গা।
ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে মীর্জা খান ‘তুহফাতুল্ হিন্দ্’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থের নবম অধ্যায়ে লেখা আছে যে, পারস্য অঞ্চলের সংগীতে বারোটি মোকাম প্রচলিত। দণ্ডমাত্রিক স্বরলিপি প্রণেতা বিষ্ণুপুরের সংগীতাচার্য ক্ষেত্রমোহন গোস্বামী লিখেছেন, “সংস্কৃত শাস্ত্রে যেমন এক একটি রাগের ছয়টি করিয়া ভার্যা বা রাগিণী কল্পিত হইয়াছে যবনেরাও সেইরূপ এক একটি মোকামে দুইটি করিয়া ভার্যা বা রাগিণী কল্পনা করে। সেই সকল রাগিণীকে পারস্য ভাষায় ‘শুবা’ বলে।” পরবর্তী কালের গবেষক স্বামী প্রজ্ঞানানন্দের ব্যাখ্যা, ‘আমীর খস্রী পারসিক সংগীতের অনুকরণে থাটের পরিবর্তে ভারতীয় সংগীতে মোকামের প্রবর্তন করতে চেষ্টা করেন এবং রাগগুলিকে তিনি ১২টি মোকামে ভাগ করেন।”
কবীর সুমন লিখেছেন, “ছেলেবেলা থেকে যাঁদের কাছে গান এবং হিন্দুস্তানি রাগসংগীত শেখার চেষ্টা করেছি তাঁদের সকলকেই ‘মোকাম’ বলতে শুনেছি।... সুর যেখানে ঘরে ফেরে গুরুরা সেটাকেই ‘মোকাম’ বলতেন।” আমি একমত। বিশিষ্ট ধ্রুপদিয়া ও খেয়ালিয়া স্বর্গীয় আচার্য নিদানবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একাদিক্রমে সতেরো বছর রাগবিদ্যা শিক্ষাকালে হামেশাই ‘মোকাম’ শব্দের ব্যবহার শুনেছি। খেয়াল গানে— তা সেটি বিলম্বিত বা দ্রুত যাই হোক না— প্রথম সমে আসার অংশটি বার বার গীত হয়। এই অংশটি মুখড়া বা ধরতায় পরিভাষায় চিহ্নিত। এটিই মোকাম। মোকাম এখানে কাঠামো শব্দের দ্যোতক। কীসের কাঠামো? উত্তর: রাগ বা রাগিণীর। বৃহত্তর অর্থে দাঁড়াবার জায়গা: ঠহরনে কা স্থান।
তাই মুকাম বা মোকামের ভাবগত অর্থ ধরলে আর বিতর্ক থাকে না।
জয়া এবং শুরা
নবারুণ ভট্টাচার্য (‘আমার প্রথম বই’, ১৫-৯) লিখেছেন, “নাত্সি-রা অবর্ণনীয় অত্যাচারের পর জয়া এবং শুরা— এই দুটি মেয়েকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। এঁদের জীবনীও এক সময় ‘জয়া শুরার গল্প’ নামে অনেকেই পড়েছেন।” এ বিষয়ে জানাই, ‘জয়া শুরার গল্প’ বইটির ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য স্টোরি অব জয়া অ্যান্ড শুরা’ আমি পড়েছি। জয়া ও শুরার মায়ের লেখা ওই বইটিতে ওঁদের আত্মত্যাগের বর্ণনা আছে। কিন্তু নাত্সিরা শুরা ও জয়াকে এক সঙ্গে ফাঁসি দিয়েছিল— এ কথা ঠিক নয়। শুরা হলেন জয়ার ভাই। নাত্সি সেনা শিবিরে আস্তাবলে অগ্নি সংযোগ করতে গিয়ে জয়া নাত্সিদের হাতে ধরা পড়েন। এর পর তাঁর ভাই শুরা সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে
যোগ দেন এবং ট্যাঙ্ক বাহিনীর কমান্ডার হন। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জয়ার ফাঁসি হয়।
উল্লেখযোগ্য, যে জার্মান সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট জয়ার ফাঁসি দিয়েছিল, সেই নাত্সি বাহিনীর রেজিমেন্ট পরবর্তী কালে শুরার নেতৃত্বাধীন ট্যাঙ্ক বাহিনীর হাতে ধ্বংস হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্বে ১৯৪৫ সালের মে মাসে কমান্ডার শুরা একটি অভিযানের সময় নাত্সি বাহিনীর গোলায় নিহত হন। জয়া এবং শুরা উভয়েই তৎকালীন সোভিয়েত সরকারের সর্বোচ্চ শহিদের মরণোত্তর খেতাব পান।
আমরাও তো খাজনা দিই
পাটুলি যেখানে শেষ হল সেখানে গড়াগাছা শুরু। ই এম বাইপাসের পাশ দিয়ে ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত কবি সুভাষ এবং শহিদ ক্ষুদিরাম মেট্রো স্টেশনের মাঝখানে। এটি কলকাতা-৮৪, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বিস্তীর্ণ এলাকা। শালী জমি। আগে এখানে বসতি কম ছিল। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য এটিকে বসতি এলাকায় রূপ দেওয়া হয়েছে। এখানে বস্তি আছে, আবার নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য ফ্ল্যাট। বসতিও শুরু হয়েছে। কিন্তু না আছে রাস্তা, না আছে জল নিকাশির ব্যবস্থা, না আছে আলো। রাতে অন্ধকারে পথ চলা দায়। বছরের পাঁচ মাস বর্ষার জল জমে থাকে। সেই জমা জলে আশপাশের আবর্জনা, মানুষ, জন্তুজানোয়ারের বিষ্ঠা এবং মরা কুকুর-বিড়ালের পচাগলা দেহ একাকার হয়ে ধীরে ধীরে পচন ধরে এক পূতিগন্ধময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যা থেকে আন্ত্রিক এবং অন্যান্য রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে চর্মরোগ। অধিক বৃষ্টি হলে এক কোমর জলও জমে যায়। অথচ যে সমস্ত ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলো পুরসভার অনুমত্যনুসারে। এখানকার মানুষ কর, খাজনা সবই দেয়!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.