সম্পাদকীয় ২...
অনধিকার
তিহাস যখন ইউ পি এ সরকারের দশ বৎসরব্যাপী শাসনকালের বিচার করিবে, তখন পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ, প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণে পঙ্গুত্ব, সর্বোপরি প্রধান এবং অন্যান্য শরিকদের মধ্যে, এবং দল ও সরকারের মধ্যে অলঙ্ঘ্য ব্যবধান— সবই সরকারের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে। হতশ্রী অর্থনীতিও সরকারের হইয়া কথা বলিবে না। অর্থনৈতিক সংকটের প্রকৃত দায়ভাগ যাহার যতটাই হউক, সরকারকে তাহার জন্য নিন্দা কুড়াইতেই হয়, ঠিক যেমন অর্থনৈতিক সাফল্যে সরকারের ভূমিকা গৌণ হইলেও তাহার খ্যাতি কুড়াইতে শাসকরা সতত তৎপর থাকেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হাতে যদি কিছু পড়িয়া থাকে, তাহার নাম ‘অধিকার’— উন্নয়নের অর্থনীতির ভাষ্যটিকে অধিকারের ভাষায় বাঁধিয়া ফেলা। যে কোনও রাজনৈতিক অর্থনীতির মূল বিবেচ্য সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের কল্যাণ। কোন পথে সেই সর্বাধিক কল্যাণে পৌঁছনো সম্ভব? জগদীশ ভগবতীরা বলিবেন, বৃদ্ধির হার বজায় রাখিলে বাকি কাজ আপনা হইতেই হইবে। অমর্ত্য সেনরা মানিবেন না, বলিবেন, বৃদ্ধিই যথেষ্ট নহে, যথার্থ পুনর্বণ্টন প্রয়োজন। ইউ পি এ সরকার যে অমর্ত্য সেনের পন্থী, তাহা স্পষ্ট। কাহার মত কতখানি যথাযথ, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু পুনর্বণ্টনের ন্যায্যতম পন্থাটি কী?
উন্নয়নের অর্থনীতি এই প্রশ্নটির উত্তর সন্ধানে কম পথ হাঁটে নাই। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে যে দেশগুলি কল্যাণ অর্থনীতির আদর্শ হিসাবে স্বীকৃতি পাইয়াছে, যেখানে ‘ওয়েলফেয়ার বেসড অ্যাপ্রোচ’ বা সরকারের জনকল্যাণী সদিচ্ছাপ্রণোদিত বণ্টনের মাধ্যমেই উন্নয়ন হইয়াছে। এই ব্যবস্থায় মানুষের প্রাপ্তি নির্ভর করে সরকারের ইচ্ছার উপর। কোনও সরকার যদি বোধ করে, কোনও একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কোনও একটি নির্দিষ্ট সাহায্যের আর প্রয়োজন নাই, তবে তাহা রদ করা বড় জোর সংসদের অনুমতির উপর নির্ভর করে। মনমোহন সিংহ, এবং অতি অবশ্যই সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে ইউ পি এ সরকার এই সদিচ্ছার পথ হইতে অধিকারের পথে সরিয়া আসিয়াছে। শিক্ষা, খাদ্য বা কর্মসংস্থানের ন্যায় যে বিষয়গুলি মানুষের প্রাথমিক চাহিদা হিসাবে স্বীকৃত, সংবিধান সংশোধন করিয়া সেগুলিকে অধিকারের স্বীকৃতি
দেওয়া হইয়াছে। দ্বিতীয় ব্যবস্থাটি রাজনৈতিক সমাজের ইচ্ছার মুখাপেক্ষী নহে।
এই অধিকার কি সংগত? সংবিধানে কয়েকটি মৌলিক অধিকার স্বীকৃত, সেগুলির সবই চরিত্রে ‘নেতিবাচক অধিকার’। অর্থাৎ, কেহ চাহিলেও যাহাতে মানুষের স্বাধীন জীবন যাপনের অধিকারকে খর্ব না করিতে পারে, সংবিধান তাহা নিশ্চিত করিয়াছিল। অধিকার হিসাবে সেটুকুই কি যথেষ্ট নহে? দ্বিমতের কিছু অবকাশ অবশ্য আছে। সুপ্রিম কোর্ট গত শতকের আশির দশকে এক জনস্বার্থ মামলার রায়ে জানাইয়াছিল যে বাসস্থানের অধিকারের মতো দ্বিতীয় প্রজন্মের অধিকার লইয়া ভাবিবার সময় আসিয়াছে। তাহার পর হইতে খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নে আদালত নাগরিকের অধিকারের সীমাটিকে ক্রমশ প্রসারিত করিয়া চলিয়াছে। স্বভাবতই তর্কও প্রবলতর হইতেছে। ভারতের গণতান্ত্রিক পরিসরে অধিকার বিষয়ক তর্কটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তর্ক। দেখা প্রয়োজন, সংবিধানের ‘ডিরেক্টিভ প্রিন্সিপ্ল্স’ বা নির্দেশাত্মক নীতিমালায় উল্লিখিত বিষয়গুলিকে অধিকারের মর্যাদা দেওয়ার আদৌ দরকার আছে কি না। তর্কটি গুরুত্বপূর্ণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.